যুক্তির মাতাল অশ্বে চড়ে আপনি ক্রিকেটকে ভদ্রলোকের খেলা দাবি করতে পারেন! কিন্তু আপনার ওই দাবি হালে পানি পাবে না। কারণ যুক্তিতে জিতেও সক্রেটিসকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিষের পেয়ালা পান করতে হয়েছিল। অতএব, বুঝতেই পারছেন: যুক্তি চূড়ান্ত সমাধান নয়।
বিশ্বাস না হয়, ক্রিকেটের দাপ্তরিক দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখতে পারেন। দেখবেন, ১৯৬২ সালের পর থেকে ক্রিকেটে কোনো জেন্টলম্যান নেই, সবাই প্রফেশনাল বা পেশাদার।
আর লেন হুটনের নামটি প্রথম ইংলিশ প্রফেশনাল টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসাবে দেখতে পাবেন। শুধু তাই নয়, অ্যামেচার (সৌখিন) ও প্রফেশনাল (পেশাদার) খেলোয়াড়দের মাঝে খোদ ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৮০৬ সালে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইতিহাস ঘাঁটলে আরো দেখতে পাবেন, ইংলিশ কৌলীন্য অনুযায়ী একজন কাঠমিস্ত্রি ক্রিকেটার হতে পারতেন, কিন্তু সামাজিক পদমর্যাদা না থাকলে কখনোই জেন্টলম্যান বিবেচিত হতে পারতেন না। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ময়রার টেগরা পোলা মুরলীধরনকে আপনি কোন মতেই জেন্টলম্যান আখ্যায়িত করতে পারেন না।
২০০০ সালে বেটিং স্ক্যান্ডাল যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন রক্ষণশীলরা চেঁচিয়ে পাড়া মাত করলেন: ইহা তো ভদ্রলোকের খেলা নয়।
অথচ ক্রিকেটে বেটিংয়ের অনুপ্রবেশ নিয়ে দি জেন্টলম্যানস ম্যাগাজিন ১৭৪৩ সালেই লিখেছিল: এটা আইন ভঙের ক্ষতিকর ও লজ্জাজনক ব্যাপার। কারণ এটা জুয়াকে উৎসাহিত করবে (দেখুন, মরিস গলসওয়ার্দির দি এনসাইকোপেডিয়া অব ক্রিকেট)।
অতএব দেখা যাচ্ছে, কথিত ভদ্রলোকের খেলার সূচনা লগ্নেই বেটিং তাকে কাবু করে ফেলেছিল। ১৯৩২-৩৩ মওসুমে ডগলাস জার্ডিনের নির্দেশে হ্যারল্ড লারউড যখন বডিলাইন উপাখ্যান রচনা করেন, তখনও প্রশ্ন উঠেছিল: ক্রিকেট যদি ভদ্রলোকের খেলাই হয়ে থাকে, তাহলে লারউডের মতো ভদ্রলোক এ জাতীয় বোলিংয়ের প্রস্তাব কেন ফিরিয়ে দেননি?
তারপরও যুক্তির তুফান ছুটিয়ে দাবি করা যেতে পারে, যেহেতু এখন সবাই পেশাদার, সেহেতু ক্রিকেটে কেউ আর ভদ্রলোক নন। কিন্তু তখনই মৌলিক প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যাবে : পেশাদাররা কি অভদ্র লোক? কে জানে? ওই বিতর্কে না গিয়ে গা-বাঁচানোই হবে বুদ্ধিমানের কাম।
কারণ আমরা জানি, অ্যামেচাররা খেলার বিনিময়ে পয়সা নেন না, কিন্তু প্রফেশনালরা পয়সা নেন। পয়সা নিয়ে খেললেই তাকে মারাত্মক খারাপ উদাহরণ (ব্যারি রিচার্ডসের অভিমত) ভাবার সুযোগ নেই। কিন্তু বুক মেকারদের নেটওয়ার্কের কথা ভাবতে গেলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়।
আপনি হয়তো বলতে পারেন, পেশাদার ক্রিকেটাররা, বোর্ড, আইসিসি, বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও স্পন্সর অথবা ভক্তদের নিকট থেকে টাকা নিতে পারেন, বুক মেকারদের নিকট থেকে মোটেও নিতে পারেন না। কিন্তু ক্রোনিয়ে-আজহার-সেলিম মালিকরা যদি পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, টাকা তো টাকাই, অতএব নিতে আপত্তি কোথায়? (কপিল দেবের যুক্তি) তখন কি বলবেন? ক্রিকেটাকাশের রঙ ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায়।
ক্যারি প্যাকারের সঙ্গে যারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, তাদেরকে যারা সেদিন ভাড়াটে সৈন্য বলে গালি দিয়েছিলেন, তারাই পরে ওপথ মাড়িয়ে ছিলেন। প্রফেশনালের ক্যারিশমা (?) বড় সাংঘাতিক! অতএব প্রফেশনালিজম জিন্দাবাদ। দম মারো দম!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।