বেঁধেছে এমনও ঘর শুন্যের ওপর পোস্তা করে..
বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারে যে অনন্য বৈশিষ্ট্য গুলি আছে তার একটি হচ্ছে মানুষ হয়ে ওঠার ধারণা। সাধারণত জন্মলাভকারী যে কোন মানব সন্তানই মানুষ নামের এই নামবাচক উপাধি সাথে করে নিয়ে আসে। কিন্তু শুধু জস্মালেই মানুষ হওয়া যায় না, মানুষ হয়ে উঠতে হয়। বাংলাই একমাত্র ভাষা যেখানে এই অসাধারণ ধারণাটি আরিকভাবেই উপস্থিত আছে। বাংলা ভাষায় এখনো আশীর্বাদ করার সময় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়, মানুষ হও।
অর্থাৎ মনুষ্যত্ব অর্জনকেই স্বার্থকতার চরম মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পৃথিবীর আর কোন ভাষাতেই এটি নেই।
যা হোক, ভাষা বিষয়ক তুলনামূলক আলোচনা এ লেখাটির উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য শিরোনামের প্রশ্নটি যুৎসুইভাবে হাজির করা। গতকালই ব্লগে সন্ধ্যাবাতির একটি পোস্ট পড়া ও সেখানে কমেন্ট করার সূত্র ধরেই এ প্রশ্নের আনাগোনা।
সন্ধ্যবাতির পোস্ট.. যেখানে অন্যান্য বিভিন্ন আলোচনার এক পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সময় সুযোগে পুরুষের চরিত্রের জানোয়ার স্বত্তা স্বরূপে প্রকাশিত হয়। পোস্টটি পড়ে তাৎণিকভাবে আমি যে কমেন্টটি করেছিলাম সেটি তুলে দিচ্ছি..
পুরুষ যে জানোয়ার এটা জানার জন্য জ্ঞানী হতে হয় না, যে কোন পুরুষ ভালো করে নিজের ভেতর দেখলেই স্পষ্ট হতে পারবে, স্বীকার করবে কি না তা আলাদা কথা। আস্তিক, নাস্তিক, ধর্মান্ধ, সাধু, বাউল সব পুরুষই জানোয়ার।
আমি জীবনের দীর্ঘ একটা সময় বিশ্বাস করেছি যে, সৃষ্টি হিসেবে নারী পুরুষের চেয়ে উন্নততর। কিন্তু এখন সে বিশ্বাস নেই।
তাই যদি হবে, যুগের যুগ পুরুষ নামক জানোয়ার(যেভাবেই হোক না কেন) নারীর ভালোবাসা-শ্রদ্ধা-ভক্তি-আনুগত্য আদায় করতে পারতো না।
উপসংহার: নারী-পুরুষ উভয়েই জানোয়ার। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে জানোয়ারীত্ব প্রদর্শনের লড়াইয়ে পুরুষ এগিয়ে আছে..
এই যা।
মানব স¤প্রদায় ক্রমাগত নিজের সংস্কার করতে করতে আজকের এ পর্যায়ে পৌছেছে। সংস্কৃতি শব্দটিও এসেছে সংস্কার থেকেই।
অর্থাৎ সংস্কৃতি হচ্ছে তাই যা পরিবর্তনের উপায়। মানুষ নিরন্তর নিজেকে পরিবর্তিত করছে কিন্তু ছাগল বছরের পর বছর ধরে একই রকম অস্তিত্ব পার করে যাচ্ছে। এ কারণে ধরে নেয়া হচ্ছে মানুষের সংস্কৃতি আছে, ছাগলের নেই। এবং এ বৈশিষ্টটি জানোয়ার পর্যায় (প্রবৃত্তি) থেকে মানুষ (সংস্কৃতিবান) হয়ে ওঠার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
কিন্তু যতোই সংস্কৃতিবান হোক না কেন মানুষ প্রবৃত্তির কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে আছে।
তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হচ্ছে ুধা ও যৌনতা। ুধা বিষয়টি অনেক সরল। যে কোন শ্রেণী বা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ুধা একই রকম আবেদন নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু যৌনতার বিষয়টি ভিন্ন। নারী ও পুরুষের েেত্র যৌনতার বিষয়বস্তু, আবেদন, ভাবার্থ ইত্যাদির মধ্যে যোজন যোজন ব্যবধান রচিত হয়েছে।
একজন উর্ধতন অন্যজন অধস্তন। একজন ধর্ষণ করে আরেকজন ধর্ষিত হয়। যৌনতা হচ্ছে এমন একটি ব্যাপার যাতে করে প্রবৃত্তির কাছেই ফিরতে হয়। সংস্কৃতিবান মানুষ তার সংস্কৃতি নামক খোলসটি ঝেড়ে ফেলে তার আদি অস্তিত্বে প্রত্যাবর্তন করে। বিষয়টি ভাব অর্থে যেমন বস্তুগত অর্থেও তেমনই।
জামাকাপড় পরতে শেখাটা মানুষের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। কিন্তু যৌনকর্মে অংশগ্রহণ করার সময় এই সংস্কৃতিকে তার ছাড়তে হয়। না ছেড়ে উপায়ও থাকেনা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যান্য সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে যৌনতার কি ধারণাগত কোন পরিবর্তন ঘটেনি। প্রবৃত্তির এই আদিম রূপে প্রত্যাবর্তনের সময় সে কি জানোয়ার রূপে না গিয়ে মানুষ রূপে যেতে পারার যোগ্যতা অর্জন করেনি? কিছুটা তো হওয়ারই কথা।
নারী-পুরুষ যৌনতায় একে অপরের পরিপুরক হয়ে উঠবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে গোলমাল লাগিয়ে দিলো ঐ উর্ধতন এবং অধস্তনতা। আমি পরিবারের মালিক, আমি সম্পত্তির মালিক, আমি সন্তানের মালিক, সব কিছু আমারই ভোগ দখলের নিমিত্তে; এক পরিবার প্রথা উদ্ভুত হওয়ার পর থেকে পুরুষ যখন মালিক বনে গেল তখন থেকে যৌনতার ভেতরেও মালিক এবং অধস্তন- এ দু ধারার সূচনা ঘটলো। ফলে, আদিতে যেটা ছিলো তুলনামূলক সুস্থ সেই যৌনতার ধারণায় সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটলো উল্টো পথে। যতো দিন গেল ততোই পুরুষের সহযোগী ভূমিকার চেয়ে আধিপত্যমূলক অবস্থান তীব্র হলো।
বোঝাপড়ার মাধ্যমে আনন্দলাভ নয় বরং দন্ডমূন্ডের কর্তা হয়ে ভোগ- এ ধারণার প্রসার পুরুষের জানোয়ার সত্ত্বাটাকেই মানুষ সত্ত্বার উর্ধে স্থাপন করলো, বলা ভালো যে প্রতিস্থাপন করলো।
এই আমার প্রশ্ন। এখন উত্তর খোজা হোক, জানোয়ার পর্যায় থেকে মানুষ হয়ে ওঠা পুরুষের পে কতোখানি সম্ভব?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।