আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইঙ্গমার বার্গম্যানের সাক্ষাৎকার

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

আপনি কি নির্দিষ্টভাবে মুভি পরিচালনার ব্যাপারটিকে সংজ্ঞায়িত করতে পারবেন? মুভি পরিচালনা? ভালো কথা, একবার এক পরিচালক বলেছিলেন, ডিরেক্টর হলেন এমন একজন মানুষ যার এতো সমস্যা থাকে যে, তিনি চিন্তা করার সময় পান না। আমার মতে, এটাই সবচেয়ে সঠিক সংজ্ঞা। অবশ্য কেউ এক মুহূর্তের অবসরেও অসংখ্য বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারে, সব ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ভেবে নিতে পারে। কেউ বলতে পারে, মুভি পরিচালনা হলো প্রজ্ঞা, আইডিয়া, স্বপ্ন ও আশার চিত্রগত রূপান্তর।

আর এর মাধ্যমে সবচেয়ে দক্ষ উপায়ে এগুলোকে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করার পদ্ধতি। ডিরেক্টর একটি যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করেন। ফিল্মের এ লম্বা প্রক্রিয়াটি একজনের স্বপ্নকে অনেক মেশিনের সাহায্যে পুনর্নির্মাণ করে। এ ছবি অন্য লোকদের অনুভূতি নিয়ে, অন্য লোকদের জন্য তৈরি। আমি জানি না।

কেউ হয়তো বলবেন, ফিল্ম ডিরেকশনের প্রযুক্তিগত সংজ্ঞাও দেয়া যায়। অনেক মানুষ, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলী ও দারুণ সব মেশিনের সহযোগিতা নিয়ে কেউ একজন পণ্য উৎপাদন করছে। এটা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য তৈরি একটি পণ্য অথবা একটি শিল্পকর্ম, যে যেভাবে ভাবে। বাস্তবে এটা কি, এর কোনটি সঠিক উত্তর, সবই নাকি কোনোটাই নয় সেটা আমি জানি না। কারণ আমি ২৭ বছর ধরে ফিল্ম পরিচালনা করছি।

একটা থেকে আরেকটা মুভিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কি কোনো বিশেষ পদ্ধতি আছে? কিভাবে আইডিয়া আসে আর কিভাবে সেগুলো পরিবর্তিত হয়? না, আমার খুব সচেতনভাবে তৈরি করা একটি পদ্ধতি আছে যা বছরের পর বছর ধরে তৈরি হয়েছে। ফারোতে আমি একশ বছর আগে তৈরি করা একটা পুরনো নৌকা দেখেছি। এটা ছিল ভয়ঙ্কর রকম সুন্দর। এটা যাদের ছিল তারা বলে গিয়েছেন এটা কি অবর্ণনীয়ভাবে সমুদ্রের জন্য উপযুক্ত ছিল। একশ বছর আগে যেভাবে সব নৌকা তৈরি হতো এ নৌকাটিও সে পদ্ধতিতেই তৈরি করা হয়েছিল।

এটা একটা বিশেষ পরামর্শ মেনে তৈরি করা হয়েছিল। সে পরামর্শ অবশ্যই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বেড়ে উঠেছে। যাতে আবহাওয়া জলবায়ু ও সমুদ্রের পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষভাবে ভাবা হয়েছিল। বলা যেতে পারে, ২৭ বছরের পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে আমি নিজে একটা জাহাজ তৈরি করেছি যাকে পরিচালনা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর ভেতর দিয়ে চালনা করা যায়। আমি একটি বাস্তব মেশিন, একটি পদ্ধতি তৈরি করেছি যা ক্ষণে ক্ষণে ব্যবহার করতে পারি।

স্বাভাবিকভাবে এ পদ্ধতিটা সব ক্ষেত্রে মানিয়ে যাওয়া উচিত, আমি ফিল্ম তৈরি করতে যতো ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হই তার সবগুলোর সঙ্গে। মূলগত অর্থে আমার একটা সতর্ক ও অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া পদ্ধতি আছে। একেবারে বাস্তব ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বলবেন? কিভাবে আপনার ফিল্মগুলো তৈরি হয়, আপনি কোথা থেকে আইডিয়াগুলো পান? অবশ্য বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আইডিয়াগুলো আসে। কিন্তু এগুলোকে ফিল্মে পরিণত করেন কিভাবে? এটা পুরোপুরি একটা অযৌক্তিক প্রক্রিয়ায় ঘটে যা আগের থেকে একেবারে আলাদা। ফিল্মের মূল কেন্দ্র হলো বিস্ফোরক উপাদান যা ফিল্মটি তৈরি করে।

চূড়ান্ত ফিল্মটি তৈরি হতে পারে তুলনামূলকভাবে অদ্ভুত ও অপ্রয়োজনীয় উপাদনগুলো থেকে। যেমন পারসোনার আইডিয়াটা একটা ছবি থেকে এসেছিল। একদিন হঠাৎ দেখলাম দুজন নারী পাশাপাশি বসে এক হাতের সঙ্গে অন্য হাতের তুলনা করছে। আমি ভাবলাম, এদের একজন মূক ও অন্যজন শুধু কথা বলছে। এ ছোট চিন্তাটাই আবার কিছুদিন পর ফিরে এলো আবার আমি বিস্মিত হলাম।

ভাবলাম কেন এটা ফিরে এলো, কেন এটা নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটালো? এটা এমনভাবে ফিরলো যাতে এটা নিয়ে আমি কাজ শুরু করতে পারি। ফলে বুঝতে পারছেন, এর পেছনে কিছু একটা ছিল অনেকটা দরজা মতো। আপনি যদি সাবধানে সে দরজাটি খোলেন তবে দেখবেন একটা দীর্ঘ করিডর, যেটা বেড়েই চলেছে। আর সহসা দেখতে পাবেন, দৃশ্যগুলো জন্মাতে শুরু করেছে। লোকেরা কথা বলছে, দুই ধারে পরিস্থিতি তৈরি হতে শুরু করেছে।

আমি মনে করি, সব শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রেই এটা ঘটে। ফিল্ম হয়তো বিশেষভাবে দৃশ্যনির্ভর। আমার মতে, এটা তাল ও আলোর মধ্যে নিজের বিকাশ ঘটায়। আমি যদি আবার পারসোনার প্রসঙ্গে ফিরে আসি, তবে দেখা যাবে হ্যাটের মধ্য দিয়ে আলো মেয়েগুলোর মুখে এসে পড়ছে। সূর্য এ ছবিতে খুব শক্তিশালী ছিল।

খুব অবাক করার বিষয় হলেও আলো হলো আমার প্রথম সমন্বিত অভিজ্ঞতার ভেতরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা কোনো কোনো ছবিতে বিশেষ প্রভাব ফেলে তাকে উজ্জ্বল মাত্রা দেয়। অন্য আইডিয়াগুলো হয়তো কোনো স্বপ্ন, এক খণ্ড সঙ্গীত, কোনো সঙ্গীতের কয়েকটি ঝংকার থেকে আসে। উদাহরণ হিসেবে দি সাইলেন্স এসেছে বার্টোকের কনসার্টো ফর অর্কেস্ট্রা থেকে। উইন্টার লাইট স্ট্রাভিনস্কির সিম্ফনি থেকে এসেছে।

আমি জানি না কিভাবে যেন সঙ্গীত টেনশন ও পরিস্থিতি তৈরি করে। আমার পরের সিনেমা বাখের একক একটি সোনাটার ভিত্তিতে তৈরি। একটি ভায়োলিন সোনাটা। আমি জানি না কেন। যা বলতে চাই তাকে সঙ্গীত মুক্তি দিতে পারে।

যে সংযোগ ঘটাতে চাই তা ঘটিয়ে দিতে পারে, শব্দে কোনো কিছু প্রকাশের আগে অসীম সময়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দিতে পারে। এটা ঘটতে পারে লেখারও আগে। সবচেয়ে শিহরণময় ব্যাপার হলো, আপনি নিজের মধ্যকার কোনো একটা ব্যাপারের কাছাকাছি যাচ্ছেন যা এখনো সম্পন্ন হয়নি। ওপরের সাক্ষাৎকারটি ১৯৭২ সালে আমেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ এখানে ছাপা হলো।

ফিল্ম ইন সুইডেন ম্যাগাজিনে ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত আরেকটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ : রাজনৈতিকভাবে আপনার অবস্থান কোথায়? কোথাও না। যদি ভীত লোকদের একটা দল থাকতো তবে তাতে আমি যোগ দিতাম। কিন্তু যতোদূর জানি, সে ধরনের কোনো দল নেই। আপনার ধর্মীয় অবস্থান কোথায়? আমি কোনো বিশ্বাস লালন করি না। আমি আমার পরী ও দৈত্য-দানবদের স্বাধীনভাবে চলতে-ফিরতে দিই।

অনুবাদ ও ভূমিকা : মাহবুব মোর্শেদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।