ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলা বরগুনাসহ উপকূলের কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। প্রতিকূল পরিবেশে কৃষকরা এ বছর আউশ আবাদ করলেও ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে আবারও নষ্ট হয়ে যায় আউশ বীজতলা। উদ্যমী এই কৃষকরা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে হাইব্রিড জাতের আলোড়ন ধানের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। যেখানে শতকরা ৯০ ভাগ কৃষক আউশ আবাদ করতে পারেননি। কিন্তু হাইব্রিড আলোড়ন ধান চাষে সোনালি ধান ঘরে তুলতে পারছে।
হাসিতে ভরে উঠেছে কৃষকের মুখ। গতকাল বরগুনা সদর ইউনিয়নের পার্বতী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা মহাখুশিতে হাইব্রিড জাতের আলোড়ন ধান কাটছেন। তারা জানালেন, অনেক ঝুঁকি নিয়ে ৩৭ কৃষক পরিবার ৩০.৭০ একর জমিতে আলোড়ন ধান চাষ করেছে। কৃষকরা মনে করছেন বাম্পার ফলন হয়েছে। তারা কখনো এ জমিতে এত ফলন কল্পনাও করেননি।
একর প্রতি ৮০ থেকে ৯০ মণ ধান পাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবে কৃষকরা একর প্রতি ৩০ মণ ফলন পান। ভালো ফলন পেয়ে কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি। আলোড়ন ধান চাষে সফল কৃষক মোস্তফা খান বলেন, আগে এ জমিতে এক ফসল চাষ করতাম। তার পরও ভালো ফলন পেতাম না।
কিন্তু আলোড়ন ধান চাষে দ্বিগুণ ফলন পাচ্ছি এবং তিন ফসল চাষ করছি। কৃষক হাবিবুর রহমান সবুজ জানান, প্রথমে আলোড়ন ধান চাষ করতে চাইনি, কিন্তু এখন ক্ষেতে ফলন দেখে খুশিতে বুক ভরে উঠছে। বিগত দিনে এত ভালো ফলন হয়নি। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের উদ্যোগে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে বরগুনাসহ ১২ জেলার ৫০ উপজেলায় এক যোগে এ কর্মসূচি চলছে। এর সময়কাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
তবে বর্তমানে এ প্রকল্পটি সম্প্রসারিত হয়ে ২০১৫ সাল থেকে ৬৪টি জেলায় এ কার্যক্রম চলবে। এর মধ্যে বরগুনা জেলায় মোট ৬৭ ব্লকে ২৬ ইউনিয়নে ৮১টি গ্রামে ৩১৬০ জন কৃষক আউশ মৌসুমে ১৮২৬.২৪ একর জমিতে হাইব্রিড আলোড়ন ধান চাষ করছেন। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি সূত্রে জানা যায়, বরগুনায় ৩ হাজার ১৬০টি কৃষক পরিবারের মধ্যে আলোড়ন ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কৃষক প্রতি ৯ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। পাশাপাশি কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্লকে ব্লকে ফসল কাটার অনুষ্ঠান আয়োজন করছে ব্র্যাক। শুক্রবার সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পার্বতী ব্লকে ফসল কাটার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির উপজেলা ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক লুৎফর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন আর রশিদ, ব্র্যাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক গৌতম বিশ্বাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ২৫টি কৃষক পরিবারের ৫০ জনকে ধান চাষ সম্পর্কে জানাতে ও চাষে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে দাওয়াত দেওয়া হয় এবং এ সময় কৃষক ও কৃষাণী কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। ব্র্যাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক গৌতম বিশ্বাস বলেন, ব্র্যাক এ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারের খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে নিরাপত্তার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রথম দিকে চীন থেকে আলোড়ন ধানের বীজ সরবরাহ করা হতো।
কিন্তু এখন ব্র্যাকের গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা চীনা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বীজ উৎপাদনে সফল হয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, আলোড়ন ধান চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।