আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জনপ্রিয় উপন্যাসিক কাজী আনোয়ার হোসেন এর সাক্ষাত্তকার!

নতজানু হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে , দাঁড়িয়ে মৃত্যু বরণ করা অনেক ভালো ।

আজকের যায়যায়দিনে বেরিয়েছে,আপনাদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। লিন্ক --------- http://www.jaijaidin.com/details.php?nid=21497 http://www.jaijaidin.com/details.php?nid=2149 কয়েকদিন পর লেখাটা নাও পেতে পারেন,তাই দিয়ে দিলাম--- জনপ্রিয় রহস্য সাহিত্যিক কাজী আনোয়ার হোসেন কাজী আনোয়ার হোসেন (জন্ম ১৯ জুলাই ১৯৩৬) ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে ক্যাপ্টেন হবেন। বিশাল নীল মহাসাগরে জাহাজ নিয়ে পাড়ি দেবেন অজানা-অচেনা এক দ্বীপে। জগতের সব নিয়ম-শৃঙ্খলা, শাসন-শাস্তির তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াবেন পৃথিবীময়।

কিন্তু হয়ে গেলেন লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক ও প্রকাশক। মনের গভীরের সেই সুপ্ত ইচ্ছাই প্রকাশ পেল তার লেখায়। প্রকাশ করলেন তার কল্পনার সেই দুর্দান্ত লোমহর্ষক, রোমাঞ্চকর রহস্য কাহিনীগুলো। তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। মাসুদ রানা এবং বাংলা রহস্য সাহিত্যের কারিগর কাজী আনোয়ার হোসেন একটি স্বপ্ন জাগানিয়া নাম।

ছেলে-বুড়ো সবার কাছে পরিচিত কাজীদা নামে। লেখালেখির পাশাপাশি এক সময় আনোয়ার হোসেনের খ্যাতি ছিল গায়ক হিসেবে। রেডিও, টিভি, সিনেমা, এইচএমভি সবখানে গান গেয়েছেন বাংলার রহস্য অ্যাডভেঞ্চার-থ্রিলার জগতের এ লেখক। কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই রবিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায়। বাবা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, সংস্কৃতিসেবী ও দাবাড়– ড. কাজী মোতাহার হোসেন এবং মা সাজেদা খাতুন।

তারা ছিলেন চার ভাই সাত বোন। কাজী মোতাহার হোসেন একজন উদার মানসিকতার মা%E তিনি ছিলেন বুদ্ধির মুক্তি এবং বাংলার রেনেসাস আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ভীষণ ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় তার সেজ বোন খোরশেদা খাতুন একটি খাতা দিয়েছিলেন ডায়রি লেখার জন্য। কিন্তু শর্ত ছিল খাতাটি সেজ বোনকে পড়তে দিতে হবে।

যেমন কথা তেমনি কাজ। ডায়রিটা তিনি বোনকে পড়তে দিতেন সত্যি, কিন্তু ডায়রির পাতায় লেখাগুলো থাকতো সব বানোয়াট, লোমহর্ষক ঘটনা। যেগুলো পড়ে সেজদি ভয় পেয়ে যেতেন। তবে তার লেখালেখির ব্যাপারে বোনের অনুপ্রেরণা ছিল প্রচুর। কিশোর আনোয়ার হোসেনের একদমই ভালো লাগতো না স্কুলে যেতে।

তার জন্য স্কুল ছিল একটা জেলখানা। আর নিজেকে তিনি মনে করতেন তার কয়েদি। প্রায়ই সকালে দুই ভাই মিলে রওনা দিতেন স্কুলের উদ্দেশ্যে, কিন্তু পথেই পল্টন ময়দানে শিমুল গাছের ছায়ায় বসে গল্পের বই পড়তেন। বিকাল হলে দুই ভাই আবার একসঙ্গে বাসায় ফিরে আসতেন। ছোটবেলা থেকেই কাজী আনোয়ার হোসেনকে রহস্য, রোমাঞ্চকর কাহিনীগুলো আকর্ষণ করতো।

যখন যে গল্পের বই সামনে পেতেন, তা পড়তে ছাড়তেন না। তবে হেমেন্দ্রকুমার রায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্তর বইগুলো ছিল তার ভীষণ পছন্দের। একবার একটি পয়েন্ট টু টু রাইফেল কেনার জন্য টাকার দরকার হলো। টাকা যোগাড় করার আশায় শুরু করলেন উপন্যাস লেখা। কিন্তু উপন্যাসের বদলে মন থেকে বের হয়ে এলো রহস্যোপন্যাস ‘কুয়াশা’।

১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে কাজী আনোয়ার হোসেন এসএসসি পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ শেষ করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর রেডিওতে তিনি নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। নিয়মমাফিক কোনো ট্রেনিং না নিলেও বাড়িতে গানের চর্চা সবসময় ছিল।

তার তিন বোন সানজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন এখনো রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছোটবেলা থেকে আনোয়ার হোসেনের রক্তে ছিল গান। ১৯৫৮ সালে তিনি প্রথম রেডিওতে গান করেন। সেখানে পরিচয় কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রণয় এ% ১৯৬২ সালে তাদের বিয়ে হয়।

কিন্তু রেডিও কিংবা টিভিতে গান গাওয়া এবং সিনেমার প্লে-ব্যাক কাজী আনোয়ার হোসেন ছেড়ে দেন ১৯৬৭ সালে। তবে এখনো মনের গভীরে কোনো সুর উকি দিলে সারাদিন তা গুন গুন করতে ছাড়েন না। বাধাধরা নিয়মের কখনোই তোয়াক্কা করেননি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাই মাস্টার্স পাস করার পর তিনি নিজেই কিছুটা নিশ্চিত ছিলেন যে, চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। বাবার কাছে টাকা চাইলেন ব্যবসা শুরু করার জন্য।

প্রথমে তার সব প্ল্যান, উদ্দেশ্যের কথা শুনে বাবা কিছুটা আশ্চর্য হলেন, কিন্তু অমত করলেন না। ১৯৬৩ সালের মে মাসে বাবার দেয়া ১০ হাজার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু হলো। আট হাজার টাকা দিয়ে কিনলেন একটি ট্রেডল মেশিন আর বাকি টাকা দিয়ে টাইপপত্র। শুরু হলো তার কর্মজীবন। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রেসেই পড়ে থাকতে হতো তাকে।

আর তার আগে ও পরে দুই ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা ব্যয় করতেন বই লেখায়। ব্যাপারটি যতোটা সহজ মনে হচ্ছে আসলে ততোটা সহজ কিন্তু নয়। প্রেসটি দাড় করাতে তাকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছিল। এর জন্য তাকে ভয়ানক খাটুনি খাটতে হয়েছে। প্রথমে তিনি অ-পাঠ্য একটি বই লিখতেন।

তারপর হাতে কিছু টাকা জমলে সেটা প্রকাশ করতেন। এ রকম করে ১৯৬৪ সালে জুন মাসে প্রকাশিত হলো কুয়াশা-১ যার মাধ্যমে সেগুনবাগান প্রকাশনীর আত্মপ্রকাশ। তারপর ধীরে ধীরে কয়েক বছরের মধ্যে সেগুনের ‘সে’ আর বাগানের ‘বা’ মিলে হয়ে গেল সেবা প্রকাশনী। কুয়াশা প্রকাশিত হওয়ার পর মাহবুব নামে এক বন্ধু তার হাতে তুলে দিলেন ইয়ান ফ্লেমিংয়ের ‘ডক্টর নো’ বইটি। বইটি হাতে নিয়ে সেদিন তিনি বুঝতে পারলেন রহস্য-রোমাঞ্চ অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীতে বাঙালিরা অনেক পিছিয়ে আছে।

ঠিক করলেন বাংলাতে ওই মানের থ্রিলার বই লিখবেন। বিদেশি বই পড়ার পাশাপাশি শুরু হলো মোটরসাইকেল ভ্রমণ। তিনি চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি মোটরসাইকেলে করে ভ্রমণ করলেন। এরপর ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হলো বাংলায় প্রথম মৌলিক স্পাই থ্রিলার মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম বই ‘ধ্বংস পাহাড়’। বইটি প্রশংসিত ও সমালোচিতÑ দুটোই হয়েছে।

তবে সিরিজের দ্বিতীয় বই ‘ভরতনাট্যম’ প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই যেন একটু নড়েচড়ে বসলেন। কারো যেন আর তর সইছিল না। বই বের হতে একটু দেরি হলেই চিঠির পর চিঠি আসতে লাগলো প্রকাশনীতে। এরপর স্বর্ণমৃগ, দুঃসাহসিক, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ছেলে-বুড়ো সবাই পড়তে শুরু করে এই রহস্য-রোমাঞ্চকর কাহিনীগুলো।

নিয়মিত প্রকাশনা নিশ্চিত করতে তিনি ‘মাসুদ রানা’ সিরিজে বিদেশি কাহিনী অবলম্বনে লিখতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে বই লেখার কাজটি গড়ে ওঠে সেবা প্রকাশনীতে। বিভিন্নজন মাসুদ রানা ও কুয়াশা লিখতে থাকেন। তবে প্রতিটি পা-ুলিপি প্রেসে যাওয়ার আগে কাজী আনোয়ার হোসেন যতেœর সঙ্গে সম্পাদন করে দেন। মাঝে ১৯৬৯-৭০ সালের দিকে সাংবাদিক রাহাত খানের অনুপ্রেরণায় রহস্য পত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনা নেয়া হয়।

পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০ সালের নভেম্বরে। চারটি সংখ্যা বের হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের সময় পত্রিকাটির প্রকাশনা স্থগিত রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে পত্রিকাটি প্রকাশ সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর ১৯৮৪ সালে রহস্য পত্রিকা আবার প্রকাশিত হয়। আজ পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে।

কাজী আনোয়ার হোসেন এক মেয়ে ও দুই ছেলের বাবা। তার মেয়ে শাহরীন সোনিয়া একজন কণ্ঠশিল্পী। বড় ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন এবং ছোট ছেলে মায়মুর হোসেন লেখালেখি ও সেবা প্রকাশনীর সঙ্গে জড়িত। তিনি শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে ১৯৭৪ সালে বাচসাস, সিনেমা পত্রিকা ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। রহস্য-অ্যাডভেঞ্চার-রোমান্স-থ্রিলার সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র ধারা।

আর কাজী আনোয়ার হোসেন বাংলা রহস্য সাহিত্যের একজন প্রবাদ পুরুষ। তিনি এ দেশের শিশু-কিশোরদের হাতে রহস্য ভিত্তিক কল্পকাহিনীগুলো তুলে দিয়েছেন। আজ তা বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। আর এ ধারাটি জনপ্রিয় করার জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব কাজী আনোয়ার হোসেনের। লেখা-নিশাত মাসফিকা যায়যায়দিন থেকে (নিশাত মাশফিকা কিন্তু আমি না!)


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.