নোয়াখালী জেলার সুধারামে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রয়োজনীয় শিক্ষক, শ্রেণী কক্ষ ও আসবাবপত্রের অভাব এবং শিবিখা কর্মসূচিতে দুর্নীতি ও পরিচালনা কমিটির দায়িত্বহীনতার কারণে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। নোয়াখালী সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনসাধারণ, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক, এনজিও কর্মী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সরকার ১৯৯০ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক আইন পাশ করে। ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে এ কর্মসূচি একযোগে চালু হয়। এ আইনের মাধ্যমে ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুদের বিদ্যালয়ে গমন বাধ্যতামূলক করা হয়।
দরিদ্র পরিবারের শিশুরা যাতে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য সরকার শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করে। সরেজমিন আলাপে অনেকে অভিমত দেন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা একটি কাগুজে ঘোষণা। সরকার প্রয়োজনীয় উপকরণ, শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট দারিদ্র্যের জন্য সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে পারছে না বলে সাধারণ মানুষের ভাষ্য থেকে জানা যায়। তবে এ প্রসঙ্গে কবির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকতেয়ার উদ্দিন বলেন, শিক্ষা সংস্কারের জন্য নানা কর্মসূচির সাফল্য প্রবক্তাদের আশানুযায়ী কখনোই অর্জন সম্ভব হয়নি। গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি রেজিষ্টার্ড, নন রেজিষ্টার্ড, মক্তব, হাফেজিয়া ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা এবং উপানুষ্ঠানিকসহ চতুমাত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে।
যা সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কাম্য নয়
প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিটি শিশুর জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বুনিয়াদি শিক্ষা নিশ্চিত করে এবং পরবর্তীকালে জীবন ধারণের ভিত্তি রচনা করে।
প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে এমসিসি (ম্যানোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি) বানদত্ত শাখার ব্যবস্থাপক যুগল কিশোর দাস বলেন, তুরস্ককে এক সময় ইউরোপের রুগ্ন দেশ বলা হত। অথচ ব্রিটিশ শাসনের পর মাত্রা বিশ বছরের মধ্যে তুরস্কের শিক্ষার হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৬০-এ। ফলে সে দেশের অর্থনেতিক চিত্রের বদল হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের ত্রিশ বছর পরও আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় বহু সমস্যা বিদ্যমান বলেও তিনি জানান।
সরেজমিন পরিদর্শন ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সীমাহীন অনিয়ম ও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে সুধারাম থানার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। সরকার বিদেশী ফর্মূলা মোতাবেক আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষার ক্যারিকুলাম চালু করলেও সে অনুপাতে শিক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারেনি। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও আসবাবপত্রের স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রায় প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে চেয়ার, টেবিল ও ছাত্রছাত্রীদের বসার বেঞ্চের অভাব লক্ষণীয়। একটি লম্বা বেঞ্চে তিনজন ছাত্রছাত্রী বসার কথা থাকলেও সেক্ষেত্রে চার/পাঁচ জন করে ছাত্রছাত্রী বসে।
ফলে স্বাভাবিক পাঠদান যেমন ব্যাহত হয় তেমনি গাদাগাদি করে বসার ফলে অনেক ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে জানা যায়।
শিক্ষক স্বল্পতাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বড় সমস্যা। বিদ্যালয় সমূহে ৬০ঃ১ অনুপাতে শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলেও কোনো বিদ্যালয়েই সে অনুপাতে শিক্ষক নেই। বানদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক দরকার আট জন। কিন্তু শিক্ষক রয়েছে পাঁচ জন।
ফলে প্রয়োজনীয় শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বেবী রানী পাল বলেন, আমরা সবাই মিলে বিরতি ছাড়া এক নাগাড়ে ক্লাস নিলে পাঠদানের সমস্যা সমাধান করা যায়। কিন্তু আমাদের যে পরিমাণ সরকারি কাজ করতে হয় সেগুলো করতে হিমশিম খেয়ে যাই। শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির তালিকা তৈরি, বিভিন্ন ধরণের চারুকারুর কাজ ও সরকারি অন্যান্য কাজ করতে একজন শিক্ষককে পুরোমাস অফিসে বসে থাকতে হয়। ফলে একজন শিক্ষক মত ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও ক্লাস নিতে পারেন না বলে তিনি জানান।
মাকু চৌধুরী রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হানিফ বলেন, শিক্ষকদের ওপর ম্যানেজিং কমিটির প্রভাব শিক্ষা কার্যক্রমেরএকটি অন্তরায়। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের অনেক সদস্য গম পাওয়ার অযোগ্য অনেক ছাত্রছাত্রীদের কার্ড দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের অবৈধভাবে চাপ দেয় অথবা প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। ফলে কোথাও কোথাও শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। এ সকল দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষা ব্যাহত হয় বলে তিনি জানান।
গ্রামের অনেক শিক্ষকের শিক্ষকতা ছাড়াও অন্য পেশায় জড়িত থাকতে দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে হাজির হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, শিক্ষকদের যে বেতন ভাতা দেওয়া হয় তাতে অনেক শিক্ষক সংসারের খরচের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। ফলে শিক্ষকরা অন্য পেশায় জড়িত হয়।
প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হলেও গ্রামাঞ্চলের অনেক শিশু বিদ্যালয়ে আসে না। নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ফলাহারী গ্রামের অভিভাবক আবুল খায়ের মিয়া বলেন, শিশুদের বিদ্যালয়ে না আসার প্রধান কারণ দারিদ্র্য এবং অভিভাবকদের মাঝে মান্ধাতার আমালের ধারণা। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের নিজের কিংবা অন্যের শ্রমে নিয়োজিত করে।
পড়ালেখা শিখিয়ে কি লাভ, এ ধারণা পোষণ করে অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠায় না। শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য সম্পর্কে আবুল খায়ের মিয়া বলেন, শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্প চালু হওয়ায় বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদেরও নৈতিকতার মৃত্যু ঘটেছে। কারণ এ প্রকল্প চালু হওয়ায় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের মধ্যে দুর্নীতি আশ্রয় নিয়েছে। তিনি ছাত্রছাত্রীদের গম কিংবা উপবৃত্তি না দিয়ে তাদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করতে সুপারিশ করেন।
আগের তুলনায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান সবদিক দিয়ে ভালো বলে মন্তব্য করেন অশ্বদিয়ার বদরপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান চৌধুরী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপকরণের অভাব, শিক্ষক স্বল্পতা, শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা এবং কিছু শিক্ষকের দক্ষতার অভাব থাকায় শিক্ষার মান কমছে। প্রাথমিক স্তরে গ্রাম ও শহর এবং সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধান করলে গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষার মান আরো উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি পাবে।
রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়
গ্রামীণ শিক্ষার উন্নয়নে সরকার গ্রামভিত্তিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করার ফলে গ্রামাঞ্চলে অনেক রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। সরেজমিন দেখা যায় রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা খুবই নাজুক।
মাকু চৌধুরী রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হানিফ বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী প্রায় ২০০ জন। অথচ আমরা দু’জন শিক্ষক। ফলে এত ছাত্রছাত্রীকে পড়াতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া প্রতিদিন হাজিরা খাতা এবং চক পেন্সিলসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শিক্ষা সরঞ্জাম আমি ব্যাগে করে বাড়ি থেকে নিয়ে আসি। কারণ বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রখার ব্যবস্থা না থাকায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাড়িতে রাখতে হয়।
বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য প্রয়োজনীয় বেঞ্চ নেই। শিক্ষকদের কোনো অফিস কক্ষে বসার জন্য কোনো আসবাবপত্র নেই। বিদ্যালয় গৃহের টিনের চাল থাকলেও চারপাশে কোনো বেড়া কিংবা আলাদা কোনো শ্রেণী কক্ষ নেই। এ বিদ্যালয়ের দৈন্যদশার কারণে গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে আসে না বলে তিনি জানান। শিশুরা সব সময় চাকচিক্য, নতুনত্ব এবং সুন্দর জিনিস চায়।
কিন্তু শিশুরা নিজের গ্রামের বিদ্যালয়ের এ করুণ অবস্থা দেখে শিক্ষার প্রতি অনাসক্ত হয়ে পড়ে বলে জানান সোন্দলপুর ইউনিয়নের পুর্ব রাজুরগাঁও গ্রামের মাহবুবুল হক চৌধুরী। রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সবিতা প্রভা শীল বলেন, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারের সাহসী পদক্ষেপ। গ্রামীণ শিক্ষার উন্নয়নে এ বিদ্যালয়গুলোর আরো উন্নয়ন করা উচিত। তিনি বলেন, আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সমান শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান করলেও তাদের সমান বেতন ভাতা এবং সম্মান পাই না। তিনি আরো জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝে সুযোগ সুবিধা এং শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদান সংক্রান্ত বৈষম্য দূর করলে গ্রামীণ শিক্ষা আরো অগ্রগতি লাভ করবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
যারা সরকারি বা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না অথবা ভর্তি হয়েও বিদ্যালয় ত্যাগ করে অথবা তাদেরকে শিক্ষার মূল ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষিত ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে দেশে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
সোন্দলপুরের রামদেবপুর গ্রামের আবদুল মোল্লা বলেন, বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো গ্রামের মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে অনেক ভূমিকা রাখছে।
বড় রামদেবপুরে এনআরডিএস পরিচালিত উপানুষ্ঠানিক কেন্দ্রের শিক্ষিকা মোস্তারী বেগম বলেন, গ্রামের অভাবী এবং বিদ্যালয় ত্যাগী শিক্ষা বিমুখ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে শিক্ষিত করে তুলতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করি। তবে আমরা এত পরিশ্রম করা স্বত্ত্বেও সংস্থা থেকে প্রদত্ত আমাদের পারিশ্রমিক অতি নগন্য। তিনি শিক্ষকদের পারিশ্রমিক বাড়ালে পাঠদানের শিক্ষকদের মনোনিবেশ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান।
মাদ্রাসা শিক্ষা
গ্রামের অনেক অভিভাবকই ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে তাদের ছেলেমেয়েদের আরবি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে আগ্রহী। এতে সন্তানরা যেমন শিক্ষিত হবে তেমনি অভিভাবকদের ইহকাল ও পরকালের পূণ্য আদায় হবে। নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ফলাহারী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শুধুমাত্র আরবি শিক্ষায় শিক্ষিত হতেই পাঠান না। তারা তাদের সন্তানদের সুযোগ্য নাগরিক তথা আদর্শ চরিত্রবান ও উপযুক্তভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে মাদ্রাসায় পাঠান। গ্রামীণ শিক্ষার মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষাও অন্যতম ব্যবস্থা।
ইবতেদায়ী স্তরই হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষার ভিত্তি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রাথমিক বিদ্যালয় সমমানের এ মাদ্রাসাগুলোর কোনো কোনাটিতে মাত্র দু’তিন জন শিক্ষক দ্বারা ছয়/সাতটি বিষয় পড়ানো হয়। সেই সাথে মাদ্রাসার পরিবেশ, পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ, আসবাবপত্র ও অবকাঠামোগত যথেষ্ট সমস্যা আছে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা শিক্ষকদের মাঝে। অনেক শিক্ষকই হীনমন্যতায় ভোগে।
সমশিক্ষিত যোগ্যতা নিয়ে অন্যরা উচ্চ পর্যায়ে শিক্ষকতা করে বলে অনেকেই নিজেদের ইবতেদায়ী মাদ্রাসার অনেক শিক্ষক তাদের অবস্থানকে অসম্মানজনক ও বেমানান বলে হীনমন্যতায় ভোগেন বলে রামেম্বরপুর এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্যাহ বলেন।
মাদ্রাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও মানবিক বিষয়ে সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও উন্নয়ন সাধন। কিন্তু গ্রামের অনেক ইবতেদায়ী, হাফেজী মাদ্রাসা ও ফোরকানিয়া মক্তবে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের চেয়ে কায়িক শ্রমই বেশি করিয়ে থাকেন। ছাত্রছাত্রীরা মাদ্রাসায় পড়তে গিয়েও দেখা যায় মাদ্রাসার সবজি বাগানসহ অনেক কাজ করতে হয়। দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার অন্য একটি ধারা হল হিফজ।
যে সকল মাদ্রাসায় এ হিফজ শিক্ষা দেওয়া হয় সে সকল প্রতিষ্ঠানকে হিফজখানা বা হাফেজী মাদ্রাসাও বলে। এ শিক্ষাক্রমের বর্ষভিত্তিক কোনো সুনির্দিষ্টতা থাকে না। এ সকল প্রতিষ্ঠান কোনো বোর্ডের আওতাভূক্ত নয়। মূলতঃ সম্পূর্ণ ব্যক্তির দান অনুদানের ওপরই এগুলো পরিচালিত হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য সরকারের বাৎসরিক ব্যয় থাকলেও গ্রামের অনেক মাদ্রাসা তেমন কোনো সরকারি সাহায্য পান না বলে একজন মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন।
অভিভাবকগণের দেওয়া সামান্য অর্থকড়ি ও বিভিন্ন ব্যক্তির দান অনুদানেই মাদ্রাসা চলে। কিন্তু যখনই দাতারা তাদের সাহায্য বন্ধ করে দেন তখনই মাদ্রাসাগুলোর অপমৃত্যু ঘটে বলে অধিকাংশ অভিভাবক জানান।
শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রামীণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ছে। বিভিন্ন গ্রামে বর্তমানে মেয়েদের জন্য মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে এখনো যথেষ্ট সেকেলে প্রথার প্রচলন রয়েছে।
বড়রামদেবপুরে ইউসুফ বলেন, আমাদের গ্রামীণ শিক্ষাও একটি ছকে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। অনেক অভিভাবক কোরআন শরীফ ও নামাজ শেখা ছাড়া মেয়েদের অন্য কোনো শিক্ষার কথা বিবেচনা করেন না।
গ্রামাঞ্চলের ফোরকানিয়া মাদ্রাসাও গ্রামের মানুষের দান খয়রাতে চলে। অনেক আগে যেখানে সেখানে ফোরকানিয়া মাদ্রাসা গড়ে উঠতে যেমন দেখা যায় তেমনি আবার সেগুলো বন্ধ হয়ে যেতেও দেখা যায়। সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের সাধারণ শিক্ষার চেয়ে আরবি শিক্ষা দিতে বেশি আগ্রহী হন।
কিন্তু সেখানেও সমস্যা রয়েছে। কবির হাট সিনিয়ার মাদ্রাসার শিক্ষক ওবায়েদ উল্যাহ বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় সুষম ও সঠিক কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে কোনো কোনো এলাকায় একাধিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবার কোনো কোনো এলাকায় কোনো মাদ্রাসা নেই।
ধর্মীয় ভাবাপন্ন ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় আমাদের দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার চাহিদা রয়েছে। তবে গ্রামে গড়ে ওঠা মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা, শিক্ষাদান পদ্ধতিতে ত্র“টি রয়েছে।
সমস্যা রয়েছে পরিচালনা পদ্ধতিতেও। অনেক মাদ্রাসায় দেখা গেছে দু’একজন ব্যক্তি নিজ খেয়াল খুশিমতো মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। তাই মাদ্রাসাগুলো সঠিক উদ্দেশ্যে ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তুলতে পারছে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে নিয়োজিত হয় শিশু শ্রমে।
গ্রামীণ ও শহুরে শিক্ষা
গ্রামীণ জনগণকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য শহরের তুলনায় গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থায় সুযোগ সুবিধা অপ্রতুল।
গঙ্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জোবেদা কামরুন নাহার বলেন, গ্রামের তুলনায় শহরের শিক্ষার সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি। গ্রামের ছেলেমেয়েরা রাস্তাঘাট না থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। অথচ শহরের ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা থাকে। কবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সহসভাপতি মফিজ উল্যাহ বলেন, গ্রামে অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে আছে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, শিক্ষা সরঞ্জামও নেই, আবার ওপরের শ্রেণীতে ছাত্র থাকলেও ভালো শিক্ষক নেই।
ব্যবহারিক ক্লাসের ব্যবস্থা নেই। অথচ শহরের বিদ্যালয়গুলোতে এ সকল সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত। ফলে মেধা থাকা স্বত্ত্বেও গ্রামের ছেলেরা মেধার সঠিক সুষ্ঠু বিকাশ ঘটাতে পারে না।
গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানসমূহে সাধারণত ভাল শিক্ষক পাওয়া দুস্কর। ভাল শিক্ষকরা গ্রামের বিদ্যালয়ে আসতে চান না বলে জানান, ফলাহারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সেতারায়ে ফেরদাউস।
গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করলেও অনেক শিক্ষক শহরে থাকেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখা করানোর চেয়ে শহরের স্কুলে বদলী হওয়ার জন্য অনেক শিক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।