১৯৮৪-৮৫ সাল। এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন চলছে দেশ জুড়ে। আন্দোলনের রাজপথে আমিও একজন সৈনিক ছিলাম।
যশোর শহরে সন্ধ্যা থেকে রাত যেকোনো সময় হঠাৎ হঠাৎ মিছিল হয়। আমাদের আবাস বেজপাড়ার চোপদার পাড়া রোডে বাম আন্দোলনের বিশেষত ছাত্র আন্দোলনের অনেক নেতা-কর্মীর বাস ছিল।
শহরের অলিগলিতে হঠাৎ দৌঁড়ে মিছিলে-শ্লোগানে আমাদের সরব উপস্থিত ছিল। আমাদের বন্ধুদের অনেকেই তখন আন্দোলনের মাঠের সৈনিক। রাতে আমরা বাসায় থাকি না। সেনাবাহিনী, পুলিশ আমাদের খুঁজে ফিরছে। আমাদের কারো কারো নামে হুলিয়াও ঝুঁলে আছে।
আগেই বলেছি চোপদার পাড়া রোডে অনেক বাম আন্দোলনের নেতা-কর্মীর বাস ছিল। অবস্থাটা এমন ছিল যে পুলিশের চোখে এই এলাকার সবাই বিশেষত ছাত্র-যুবা সবাই যেন সরকার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ফলে আমাদের ধরতে এসে অনেক নিরিহ (এই অর্থে যে তারা আন্দোলন বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন) ছাত্র-যুবাকে ধরে নিয়ে যেত।
এতে আমরা যখন পালিয়ে থাকতাম আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত নয় এমন অনেকে পালিয়ে বেড়াত। এরা অনেকেই আমাদের বন্ধু।
রাতে যেখানে পালিয়ে থাকতাম সেখানে মাঝে-মধ্যে খাওয়া-দাওয়া, ব্রিজ খেলা হত। আন্দোলনে যুক্ত নয়, কিন্তু পালিয়ে থাকতে হচ্ছে- এ থেকে কাউকে কাউকে হতাশায় ভুগতে দেখেছি। এমন কেউ কেউ আবার গাঁজা-ভান সেবন করত। আবার আন্দোলনের মাঠের কর্মীদের কেউ কেউও এগুলো সেবন করত।
এই সেবনকারীরা হঠাৎ ছাদে উঠে গিয়ে তাদের নেশা মিটিয়ে ফিরত।
আমরা আবার কেউ কেউ ছিলাম, যারা মার্কস-লেনিনবাদের ভালো পাঠক ও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চালাতাম। সমসাময়িক সময়ে (দুই-এক বছরের মধ্যে) সাপ্তাহিক বিচিন্তা, সংবাদের গাছপাথরসহ (সময় বহিয়া যায়) নানা প্রবন্ধ-লেখা নিয়ে কম বেশি রাজনৈতিক আলোচনা চলত। রাজনৈতিক কর্মীদের কারো কারো এতে আগ্রহ তেমন নেই। তারাও হঠাৎ হঠাৎ ছাদে চলে যেত। প্রথম দিকে ছাদে যাওয়া নিয়ে লুকোছাপা ছিল।
একদিন আমরা আবিস্কার করি যারা ছাদে যাচ্ছে তারা আসলে নেশা করতে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা হত। আমরা সেবনকারীদের কটাক্ষ করতে লাগলাম। আমাদের একজন আবার বেশ বাক পটু ছিল। একদিন সে ব্যাখ্যা দিল নেশার স্তর নিয়ে।
নেশাকারীরা কিভাবে একটির পর একটি স্তর পারিয়ে যায়। এমনই এক স্তরে নেশাকারীরা ভাসতে ভালোবাসে। জাগতিক বিষয় থেকে দূরে চলে যায়।
এই পর্যায়ে আমাদেরই মধ্যে অন্য একজন একদিন এক ব্যাখ্যা হাজির করল। তার ব্যাখ্যা এমন যে, যারা ছাদে নেশা সেবনে গেছে তারা কি তাহলে চান্দে মই লাগাতে গেছে' (নেশার স্তর বোঝাতে চান্দ আর তাতে উঠতে রূপক অর্থে এই মইয়ের ব্যবহার করা হয়)।
আর আলোচনা এসেছিল গাঁজা সেবনকারীদের নেশাস্তর বোঝাতে। তাতে বিষয়টি দাঁড়ায় গাঁজা সেবনকারীরা মই লাগিয়ে নেশার স্তর চান্দে উঠছে। পরবর্তীতে এই চান্দে মই লাগানো উপাধিটি গাঁজা সেবনকারীদের বেলায় বহুল পরিচিতি পেয়ে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।