জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
১৯৮৮ সাল। নাটকে অভিনয় করা তখন মাত্র শুরু করেছি। নাটকের দলের নাম পদাতিক নাট্য সংসদ নারায়ণগঞ্জ।
আমার এক বন্ধুও আমার সাথে নাটকের দলে কাজ করত। তার নাম মোশারফ।
মোশারফের সূত্র ধরে পরিচয় হল আরেক নাট্যকর্মী দীপক ভৌমিকের সাথে।
দীপক ভৌমিকের কাছে প্রথম শুনলাম আশিস খন্দকারের নাম। আশিস খন্দকার তখনও বিখ্যাত হন নাই। কেবল আমেরিকা থিকা ফেরত আইছেন। পরিবেশ থিয়েটার নামে একটা নাটকের দল গড়ে তুলেছেন।
পরিবেশ থিয়েটার কোন মঞ্চে অভিনয় করে না। সরাসরি লোকেশনে অভিনয় হয়। লোকেশনের অতীত ইতিহাস নিয়ে এবং ইম্প্রোভাইজ করে পাণ্ডুলিপি লেখা হয়। সেই পাণ্ডুলিপি ধরে অভিনয় করে নাটক করা হয় খোলা জায়গায়।
যাই হোক, দীপকদা আশিস খন্দকারের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিলেন ।
আমরা দু বন্ধু রাজি হয়ে গেলাম।
তখন ডিসেম্বর মাস। প্রবল শীত। এর মধ্যে রিহার্সেল শুরু হয় সকাল ৬ টায়। রিহার্সেলের জায়গা বাংলা একাডেমি।
আমরা ২ বন্ধু ভোর ৪ টায় শীতে কাঁপতে কাঁপতে বাসা থেকে বের হই। তারপর নারায়ণগঞ্জ থেকে অতি কষ্টে ঢাকা যাই। এই যাতায়াতের টাকার জন্য টিউশনি করি।
আশিস খন্দকারের সঙ্গে পরিচয় হল। গুরুগম্ভীর মানুষ।
ঢাবির টিএসসিতে প্রথম রিহার্সেলে বিস্তারিত বললেন পরিবেশ থিয়েটার সম্পর্কে। ২/১ দিন পরে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল লোকেশনে। বাংলা একাডেমির বিক্রয় কেন্দ্র যেখানে সেখানে তখন একটা লোহার খাচা পড়ে ছিল। খাচাটি সম্ভবত কোন ফোয়ারার সঙ্গে ব্যবহৃত হত। ৪/৫টা লম্বা লোহার পাইপ উঠে গেছে উপরে এবং তাকে ঘিরে অনেকগুলো পাইপ বৃত্তাকারভাবে প্যাঁচানো।
কাঁত হয়ে পড়ে থাকায় ওটাকে কোন একটা রকেটের মতো মনে হচ্ছিল।
আশিস দা আমাদের জায়গাটায় হাঁটতে বললেন। আমরা হাঁটলাম। পরের দিন গিয়েও হাঁটলাম। এভাবে ১০/১৫ দিন গিয়ে কেবল হাঁটি।
আমি ও আমার বন্ধু খুবই বিরক্ত। এটা কী ধরনের রিহার্সেল ?
এরপর তিনি আমাদের জায়গাটা অনুভব করতে বললেন। আমি মিনমিনে গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, কিভাবে অনুভব করব ? এই প্রশ্ন করেই খেলাম এক ধমক। তিনি বললেন, কোন প্রশ্ন নয়।
আবার হাঁটি আর অনুভব করার চেষ্টা করি।
৪/৫ দিন পর তিনি বললেন, এই জায়গা কী সংলাপ দেয় ? আমার মাথায় ঢুকল না জায়গা আবার কিভাবে সংলাপ দেয়। আমার বন্ধুর অবস্থাও আমার মতো। কিছুই বুঝি না। কিন্তু ভয়ে দীপক দাকে বলি না।
কয়েক দিন পর আমার টুকটাক সংলাপ বলতে শুরু করলাম।
বেশির ভাগই অনর্থক কথাবার্তা।
কয়েক দিন পর জানলাম পাণ্ডুলিপি লেখার দায়িত্ব পেয়েছেন মুরাদ ভাই। মোটামুটি একটা কাহিনী দাঁড়িয়ে গেল। সেই লোহার খাঁচাটিকে বানানো হল একটা রকেট। সেই রকেটে আমরা রিহার্সেল করি।
নাটকের নাম - চন্দ্রবিন্দু।
আমিসহ আর কয়েক জন সেই রকেটের যাত্রী। আমরা রকেটে করে চান্দে যাইব, মঙ্গলে যাইব ইত্যাদি।
এর মধ্যে ৩ মাস কেটে গেল। আমরা প্রায় নাটক দাঁড় করিয়ে ফেলেছি।
কিন্তু তখনই ঘটে গেল অঘটন।
একদিন সকালে গিয়ে দেখি আমাদের রকেটখানা নাই। কী ব্যাপার ? কেউ বলতে পারে না ব্যাপারটা কী ? রকেটখানা গেল কোথায় ?
পরে আশিস খন্দকার গেলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে । মহাপরিচালক জানালেন, ওটা বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
আশিস খন্দকার জানালেন, ওটাকে ভিত্তি করে একটা নাটক তৈরি করা হয়েছে।
বিক্রি করার আগে কমপক্ষে একবার জানানো উচিত ছিল।
মহাপরিচালক বললেন, তিনি তার পিয়নের কাছে শুনেছেন ভোর বেলা কতগুলি লোক ওই লোহার খাঁচায় চড়ে ব্যায়াম করে।
পড়ে থেকে একটি মূল্যবান জিনিস নষ্ট হচ্ছে বিধায় তিনি তার বিক্রি করে সরকারের উপকার করেছেন ।
ফলে অল্পের জন্য আমাদের আর চান্দে যাওয়া হইল না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।