আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যারা অন্যের স্বাধীনতাকে স্বীকার করতে চায়না, তারা নিজেদের স্বাধীনতাকেও সন্মান জানাতে অক্ষম

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

স্বাধীনতার অর্থ কি সেচ্ছাচারিতা? কখনোই নয়। এমনকি পশুরাও সেচ্ছাচারী নয়। এদের ভেতরেও মায়া, দয়া আছে, সঙ্গিনী ও নিজেদের স্বন্তানদের প্রতি ভালবাসা আছে। আমরা মানুষ হয়ে সেচ্ছাচারীতাকে যদি স্বাধীনতার সাথে তুলনা করি ও তা ভেবে নিজে সেচ্ছাচারী হই, তাহলে মানুষ হয়েও আমরা পশুদের চেয়েও অধম। স্বাধীনতার নানা রকম সংজ্ঞা থাকতে পারে।

আমার মতানুযায়ী ‘যা ভাবতে ও করতে চাই, তাই ভাবতে ও করতে পারা’। কিন্তু সেদিকে নজর রেখে, যাতে নিজের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যাতে ‘অন্যের স্বাধীনতার ব্যাহত না হয় ও অন্যের ক্ষতি যাতে না হয়’। এই ‘অন্য’ একক কোন মানুষও হতে পারে, সে সাথে এই ‘অন্য’ একটি সমাজও হতে পারে। দেশ, জাতি ও সমাজের প্রভাবের প্রেক্ষিতে এই ‘অন্যের’ ভিন্ন ভিন্ন চেহারা। এই কথিত ‘অন্যের’ দিকে স্বাধীনতার নজর রাখতে না পারলে নিজের স্বাধীনতা সেচ্ছাচারিতাই হয়ে দাঁড়ায়।

আর যারা সেচ্ছাচারী তারা পশুর চেয়েও অধম, তারা স্বাধীন বা পরাধীন, যাই হোক না কেন। তাদের কথাই বলতে চাচ্ছি, যাদের নিজের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, আবার অন্যদিকে পরের স্বাধীনতাকে স্বীকার করায় নিজের পরাজয় ও ধর্মকে বিপন্ন দেখে। এদের কোন সত্যিকারের স্বাধীন সত্বাই নেই। উদাহনণ হিসেবে বলছি, যদি ‘নারী স্বাধীনতার’ কথা তোলা হয়, সমাজ গেল, দেশ গেল বলে চেচিয়ে পাড়া মাত করে তারা। নিজেরদের চোখের পর্দা টানায় ভয়ঙ্কর অনীহা, আর নিজেদের সুবিধাবাদী অবস্থান শক্ত করার খায়েসে নারীদেরকে অন্তরীণ করে তথাকথিত সুখী সমাজ গড়তে চায়।

ধর্মকে বর্ম হিসেবে ধরে জেহাদের ধুয়ে তুলে তারা নিজেদের স্বার্থের জিহাদে মেতে উঠে। ভিন্ন ধর্মের ও ভিন্ন মতের মানুষদের ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনাকে অসন্মান ও প্রশ্নবিদ্ধ করেই তাদের আত্মতৃপ্তি । সেজন্যে তারাই আঘাত হানে তারা কাদীয়ানীদের স্বাধীনতায়, তাদের ধর্মচেতনায়। জাতিগত প্রশ্নেও তাদের একই সমাজবিধ্বংসী অবস্থান। সেজন্যে আঘাত হানে তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপজাতীয়দের মানবিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায়।

এরা চিন্তায় ও ভাবনায় স্বাধীন নয়, হয়তো তা ভোগ করার যোগ্যতাও এদের নেই, এদের নেই নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। অন্যের স্বাধীনতার উপর খড়গ চালিয়ে এরা নিজেদের পাশবিকতা চরিতার্থ করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা অন্যের স্বাধীনতার দাবীকে ধর্মের দোহাই দিয়ে অবদমিত করায় পিছপা’ হয় না। উদাহরণ হিসেবে, কিছু ব্লগারের কাদিয়ানী বিরোধী প্রচারনা, কারো কারো নারী স্বাধীনতা ও সন্মানের প্রতি বিষোদগার বা কারো করো পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অধিকার এর উপর অযৌক্তিক হস্তক্ষেপকে তুলে ধরা যেতে পারে। এদের প্রতিটি বক্তব্যে তাদের সাথে নেচে ওঠে আরো কিছু স্বাধীনতা বিরোধী চরিত্র।

ধর্মের ধুয়ো তুলে তারা ইতিহাসকে বিকৃত করে নিজেদের বিকৃতিকে প্রতিষ্ঠা করে। তারা মহামনীষিদের নাম ধরে বড় বড় রচনা লিখে যায়, কিন্তু নিজেদের ভেতরে সে মনীষীর মহানুভবতা, অহিংসতার লেশমাত্রও ধারণ করে না। এদের হিংসা বিদ্ধ করে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন ধর্মের ও জাতির মানুষদের। অন্যদিকে এরাই সেই চরিত্র, যারা নানা ধরণের কাহিনী ফেঁদে, আরো কিছু স্বাধীনতাবিরোধীদের সত্য মিথ্যা রেফারেন্স টেনে, আমাদের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করায় প্রতিদিনই প্রয়াসী হয়। এরা বিভিন্ন দেশদ্রোহীদের কলঙ্ককে নানা ছলনায় ঢেকে মিথ্যাকে সামনে তুলে ধরে।

গোলাম আজমের মতো কুখ্যাত খুনীকেও তারা শুধুমাত্র ধর্মীয় উন্মাদনার কারণে তারা মহামনিষী হিসেবে তুলে ধরায় দু:সাহসী হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নানা অযৌক্তিক কারনে প্রশ্নবিদ্ধ করে। নিজের স্বাধীনতার প্রতি অসন্মান প্রদর্শন করে। নিজের ও অন্যের স্বাধীনতার ভোগ অক্ষম এরা। তাই বন্দীত্ব তাদের এই স্বরচিত গোলক ধাঁধার অভিশাপে।

এদের চরিত্রের কারণেই সমাজ ও সানবতা বিরোধী। এরাই এদের হিংস্রতার বহি:প্রকাশে অন্ধকারের দানব হয়ে আমাদের সমাজকে ছিন্ন ভিন্ন করে। এদের দিকে তাকিয়ে একটি সত্যই চোখের সামনে পরিস্কার হয়। সে কঠিন সত্যটি হচ্ছে, যারা অন্যের স্বাধীনতাকে স্বীকার করতে চায়না, তারা নিজেদের স্বাধীনতাকেও সন্মান জানাতে পুরোপুরিই অক্ষম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।