শাস্ত্রবাদীরা মেইডেন ওভার শব্দ দুটোর ভুল ব্যাখ্যা শুনে আতকে উঠতে পারেন। আবার ছি! ছি! করতেও পারেন। বলতে পারেন, অ্যামা! বলে কি, শেষ পর্যন্ত এতো কিছু!
মেইডেন বলতে অবিবাহিত বালিকা বা স্ত্রীলোককে বোঝানোর কারণেই এ বিপত্তি ঘটতে পারে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। কারণ কৃকেটে উইকেটের পতন ঘটলে যারা আজো গো...ও...ল বলে সোল্লাসে ফেটে পড়েন, তারা তো এ জাতীয় কেতাবি ব্যাখ্যাই দেবেন।
কিন্তু মেইডেন ওভারের সংবাদ পেলে অথবা ইডিয়ট বক্সের (টিভি) কল্যাণে লাইভ দেখার সুযোগ পেলে ক্রিকেটামোদীরা আমোদিত অথবা ব্যথিত হতে পারেন (কারণটা ব্যাখ্যা না করলেও চলবে)। অতএব মেইডেন ওভার মানে কুমারীত্ব খতম নয়।
ক্রিকেট শাস্ত্র মতে, কোনো রান হজম না করেই টানা ছয়টি বল করাকে মেইডেন ওভার বলে। অবশ্য ওভার সব সময় ছয় বলে সীমাবদ্ধ ছিল না। চার বল, পাচ বল এবং আট বলেও ওভার ধরা হতো এক সময়।
তবে আট বলের ওভারটির আগমন, প্রস্থান সবচেয়ে বেশি বার ঘটেছে।
মেইডেন ওভার প্রাপ্তি সংশ্লিষ্ট বোলারের জন্য ইজ্জতের সনদ হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাটসম্যানের জন্য বেশ শরমের, কান লাল করা লজ্জার। কারণ মেইডেন ওভারে ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং মুরোদ প্রমাণিত হয় না। এটা তার জন্য হিজড়া মার্কা সাফল্যের (?) সনদ বিবেচিত হতে পারে। আর বোলারটির ভাবখানা দাড়ায় এ রকম, ত্রিভুবন জয় করে ফেললাম গো।
রান চাওয়া এবং রান না দিতে চাওয়া নিয়েই চলে ব্যাটসম্যান ও বোলারের মাঝে চিরন্তর দ্বন্দ্ব। ব্যাটসম্যান উইলো চালিয়ে রান হাতিয়ে নিতে চান। কিন্তু বোলার চোখ পাকিয়ে বলেন, ‘ব্যাটা খবিস! ক্রিজে আছিস, এটাই তো বড় সৌভাগ্য। রান কিসের?’ তারপরও কখনো কখনো ব্যাটসম্যানরা বোলারদের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে নেন। একই নিয়মে বোলারও মাঝে মধ্যে রান প্রশ্নে কারুনের মতো কৃপণ বনে যান।
রান-কৃপণ বোলারের ফিরিস্তি বেশ লম্বা। তবে ১৮৫১ সালে ক্যান্টের বিপক্ষে অল ইংল্যান্ড একাদশের উইলিয়াম কার্ক টানা ২১ ওভার মেইডেন পান। আর নটিংহ্যামশায়ারের আলফ্রেড শ’ তো ছিলেন মহাকেপ্পন। ক্যারিয়ারে ২৪ হাজার ৭শ’ ওভার বোলিং করে ১৬ হাজার ৯৯২টি মেইডেন বগলদাবা করেছেন। আর টেস্টে মেইডেন ওভারের রেকর্ডটি দক্ষিণ আফ্রিকার অফ ব্রেক বোলার এইচ জে টেলিফিল্ডের।
১৯৫৭ সালে ডারবান টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি কোনো রান ছাড়াই টানা ১৩৭টি (১৬ ওভার, তখন ৮ বলে ওভার ছিল) ডেলিভারি ছোড়েন।
বোলাররা কুমারী ওভারের প্রতি দুর্বল থাকেন আর ব্যাটসম্যানরা থাকেন বেজায় রকম নাখোশ। তারপরও কুমারী ওভার নিয়েই চলে ক্রিকেট সংসার। কখনো সুখে, কখনো দুঃখে। ঘৃণা আর ভালোবাসার জোয়ার-ভাটায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।