যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
ওড়না বক্ষচ্যুত হয়ে যাচ্ছে বারবার। উতালা হাওয়ার রসিক ঘুর্নি মেয়েটিকে বাধ্য করছে আঙুল দিয়ে ওড়নার কোনটাকে স্তন্যসন্ধিতে চেপে রাখতে। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভাবছি, বোরখা পড়লে এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারতো। অথবা স্তন্যমঞ্জুরী ওড়নাবিচ্যুতি হলে যে অস্বস্তিটুকু তৈরি হয় তা ইগনর করতে পারলেও হতো। এর চেয়ে ঢোলা টিশার্ট বা ফতুয়াতে বক্ষ অনেকবেশী ননরিভিলিং থাকে।
পুরো বিষয়টা নির্ভর করে মেয়েটি কিসে স্বস্তি বোধ করবে আর কিসে অস্বস্তি। আমি পাশ কেটে যেতে তার মুখে একটা নির্লিপ্ততা দেখলাম। আশ্চর্য হলেও সত্যি হচ্ছে তার স্তন্য দেখেছি আগে পরে দেখলাম মুখ। আরেকটু মনযোগ দিয়ে দেখতেই আমার ঘোর লেগে গেল, পরিচিত মুখ, তাকে তো চিনি, এ যে গুলশান!
আজকে সকালে দোয়েল চত্বরে সিএনজি নষ্ট হলে আমি শিশু একাডেমীর গেট থেকে সিগারেট কিনে ফুঁকছি আর ড্রাইভারের স্টার্ট নেবার প্রচেষ্টা দেখছি। একটু দূরেই গুলশান দাড়িয়ে।
জগন্নাথে ইংলিশ পড়তো। আমার সাথে তার যখন পরিচয় তখন আমি একক ইশ্বরীর পুজারী। ছেলেরা একজন প্রেমিকা বর্তমান থাকলে দ্বিতীয় কোন নারীকে প্রেমিকার দৃষ্টিতে দেখতে পারে না। যৌনতা নিয়ে ভাবতে পারে, নির্দোষ ফ্লার্ট করতে পারে, গুলশানের সাথে আমার সম্পর্কটা এমনই ছিল। পুরান ঢাকা থেকে রিকশায় করে শিশুপার্কে গিয়ে বসে থাকতাম।
মাঝে মাঝে ঢাকা এলে গুলশান তখন আমার গাইড হতো। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি। গুলশান সেকেন্ড ইয়ারে।
একবার আমার বন্ধু রাব্বি যে জগন্নাথে গুলশানের ডিপার্টমেন্টেই পড়া সূত্রে বড় ভাই আমাকে গুলশানের কাছে তার প্রেমপ্রস্তাব দেবার জন্য অনুরোধ করলো। গুলশান সম্পর্কে আমার বেয়াইন, রাব্বির প্রস্তাবটা আমি তার কাছে পাস করে দিলাম।
শুনে সে তো মহা টং, বলে, আমি তোমাকে কেমন ভাবি, আর তুমি এমন একটা জঘন্য প্রস্তাব আমাকে দিতে পারলে! আমি বুঝি না, বলি, তোমার যদি ইচ্ছে না হয়, না বলে দিবে, এত ক্ষেপার কি আছে?
গুলশান আমাকে দেখলো খানিক পরে। চেহারায় যে বিষ্ময় ফুটে উঠলো তাতে সে ভুলে গেল রসিক বাতাস নিয়ন্ত্রণকারী হাতের অস্তিত্ব। সেটা উঠলো মুখে, ওড়না গেল সরে, আর আমি মুখ ও বুক দেখে চিৎকার করে বলি, ওহ মাই গড, তুমি এখানে কি করছো? গুনে দেখি পাক্কা ছ'বছর পরে দেখা। এর মাঝে তার বিয়ে হয়েছে, দুই বাচ্চার মা হয়েছে, স্বামী জনতা ব্যাংক থেকে সিটি ব্যাংকে পেটমোটা স্যালারিতে জয়েন করেছে। এর কোন অংশে আমার কোন বিচরণ নেই, নাই কথা, নাই দেখা।
রাব্বির প্রস্তাব দেবার পরে গুলশান আমার সাথে অভিমান করে ছিল অনেকদিন, তারপরে যখন মান ভাঙানোর জন্য তাকে নিয়ে বুড়িগংগায় নৌকায় ঘুড়ি, একসময় তার চোখের ভাষা যেন বলে ওঠে, এখনও বোঝনি তুমি! আমি তখন সেটা বুঝি বলে বুঝাইনি।
গুলশান বলে, সালা, তোমার বিয়েতে দাওয়াত দাও নি কেন? ফোন নম্বর দাও। আমি গুলশানকে ভালোভাবে দেখি, শরীরে মেদ জমেছে, চিবুক থেকে গলার দিকের বলিরেখা একটু বোধহয় মোটা হলেও সৌন্দর্য্য অনেক বেড়েছে। লাগসই মাটির গহনার সাথে সবুজ কামিজে কয়েকরঙের সুতোর কাজ রয়েছে প্রান্তভাগে। গুলশান এখন ইউনিভার্সিটির কোয়ার্টারে থাকে।
শশুর প্রফেসর, ছেলে, বউ বাবার সাথেই থাকে। একমাত্র সন্তানের বউ হয়ে গুলশান এখন পুরোদ্স্তুর গৃহিনী।
ফোন নম্বর দেয়া নেয়া করলাম। গুলশান কলুটোলা যাবে, আমি যাব সদরঘাট। সিএনজি ঠিক হয়ে গেলে, গুলশানকে ড্রপ করার কথা বলতেই সে রাজি হয়ে গেল, অনেকক্ষন যাবত কিছু পাচ্ছিল না।
সিএনজিতে বসে আমি গুলশানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলি, তুমি আমাকে কেন ভালবেসেছিলে?
ছাড়ো তো, ওসব মনে রাখতে নেই।
আমি আব্দার করি, আরে বলোই না!
গুলশান মুখ ভার করে বলে, সেটা আমার একটা ভুল ছিল!
আমি শুধাই, কেন?
গুলশান বলে, তুমি আমার ভুল পুরুষ নির্বাচন ছিলে!
কেন?
আমার প্রতি তোমার ভালবাসা তৈরী হয়নি।
কেন?
তুমি কাউকেই ভালবাস না।
কী!
গুলশান আমার মাথায় হাত দিয়ে বলে, দিব্যি দিলাম, বলো, কাউকে ভালবাসতে পেরেছো জীবনে? আমি একটু চোখ মুদে ভাবলাম, প্রচন্ড অন্ধকার কেঁটে ক্রমশ আকাশ আলো আর আলোতে ভরে উঠলো, আলোর রঙ নীল, লাল, বেগুনী। সাদা সাদা পায়রা উড়ে যায় সাদা মেঘের জমিনে।
একটা নীল মেঘের মাঝে জীবনের এ্যালবাম পৃষ্ঠা উলটিয়ে দেখায়, সেখানে এ মুহূর্তে গুলশানের ছবি। অন্য পৃষ্ঠায় যাবার আগে আমি গুলশানকে দেখছি। একক ইশ্বরী বর্তমান থাকা অবস্থায়ও সেখানে গুলশানের ছবিও ফ্রেমবন্দী হয়েছে। গুলশান ধাক্কা দেয়, কি হলো? ভালোবাসা কারো জন্য বেশী কম হতে পারে, কিন্তু একজনেই যে পুরোটুকু থাকে, সেটা বড় গোলমেলো, গুলাশান আবারো বলে, কি হলো, কাউকে ভালবাসতে পেরেছো? আমি চটপট বলি, আমি তো তোমাকেও ভালবেসেছিলাম!
গুলশান মনে হলো হতাশ হয়েছে। সে তাকিয়ে থাকে, দৃষ্টি ক্রমশ ম্লান থেকে ম্লানতর হয়।
আমাকে বোঝার চেষ্টা করে, তারপরে ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে চুপ মারে। আমি বলি, সব ভালোবাসা সামাজিক নির্মাণের দিকে না গেলেও ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে যায় না। বাঁচিয়ে রাখা যায়। গুলশান এবার হেসে ওঠে। স্বাভাবিক হয়ে যায়।
মনে হয় সেই আগের বেয়াইন, যখন কথায় কথায় ঝগড়া, আর দুষ্টুমী লেগেই থাকতো। তুমি কি পরকীয়ার কথা বলছো? আমি হেসে বললাম, বন্ধুত্বও তো হতে পারে, তার মধ্যে কি ভালবাসা থাকে না! গুলশান বলে, সেটা আর ঐটা এক নয়! আমি বলি, চলো, তাহলে পরকীয়াই করি, আমি তো শুনেছি এই বয়সে মেয়েদের চাহিদা বেড়ে যায়! গুলশান মনে হয় অনেকদিন পরে প্রানখুলে হাসে, না ভাই, আমি এখন জিরো গ্রাউন্ডে! মাঝেমাঝে হৃদয় নাচলেও শরীর নাচে না, দুটো বাচ্চাই নরমাল ডেলিভারী হয়েছে! আমি বলি, তো? গুলশান হেসে বলে, এখন আমার আর ডিমান্ড নাই!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।