আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী (নরহরি দাস)

"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "

যেখানে মাঠের পাশে বন আছে, আর বনের ধারে মস্ত পাহাড় আছে, সেইখানে, একটা গর্তের ভিতরে একটি ছাগলছানা থাকত। সে তখনো বড় হয়নি, তাই গর্তের বাইরে যেতে পেত না। বাইরে যেতে চাইলেই তার মা বলত, 'যাবিনা! ভালুক ধরবে, বাঘে নিয়ে যাবে, সিংহ খেয়ে ফেলবে!' তা শুনে তার ভয় হত, আর সে চুপ করে গর্তের ভিতরে বসে থাকত। তারপর সে একটু বড় হল, তার ভয়ও কমে গেল।

তখন তার মা বাইরে চলে গেলেই সে গর্তের ভিতর থেকে উঁকি মেরে দেখত। শেষে একদিন একেবারে গর্তের বাইরে চলে এল। সেইখানে এক মস্ত ষাঁড় ঘাস খাচ্ছিল। ছাগলছানা এত বড় জন্তু আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু তার শিং দেখেই সে মনে করে নিল, ওটাও ছাগল, খুব ভালো জিনিস খেয়ে এত বড় হয়েছে।

তাই সে ষাঁড়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'আচ্ছা, তুমি কি খাও?' ষাঁড় বললো, 'আমি ঘাস খাই। ' ছাগলছানা বললো, 'ঘাস তো আমার মাও খায়, সে তো তোমার মতো এত বড় হয়নি। ' ষাঁড় বললো, 'আমি তোমার মায়ের চেয়ে অনেক ভালো ঘাস অনেক বেশি করে খাই। ' ছাগলছানা বললো, 'সে ঘাস কোথায় পাবো?' ষাঁড় বললো, 'ঐ বনের ভিতরে। ' ছাগলছানা বললো, 'আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে।

' একথা শুনে ষাঁড় তাকে নিয়ে গেল। সেই বনের ভিতেরে খুব চমত্‍কার ঘাস ছিল। ছাগলছানা পেটে যত ঘাস ধরল, সে তত ঘাস খেল। খেয়ে তার পেট এমনি ভারি হল যে, সে আর চলতে পারে না। সন্ধ্যে হলে ষাঁড় বললো, 'এখন চল বাড়ি যাই।

' কিন্তু ছাগলছানা কি করে বাড়ি যাবে? সে তো চলতেই পারে না। তাই সে বললো, 'তুমি যাও, আমি কাল যাব। ' তখন ষাঁড় চলে গেল। ছাগলছানা একটা গর্ত দেখতে পেয়ে তার ভিতরে ঢুকে রইল। সেই গর্তটা ছিল এক শিয়ালের।

সে তার মামা বাঘের বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিল। অনেক রাত্রে ফিরে এসে দেখে, তার গর্তের ভিতর একটা জন্তু ঢুকে রয়েছে। ছাগলছানাটা কালো ছিল, তাই শিয়াল অন্ধকারের ভিতর ভালো করে দেখতে পেল না। সে ভাবল ওটা বুঝি রাক্ষস-টাক্ষস হবে। তাই মনে করে সে ভয়ে-ভয়ে জিজ্ঞেস করল, 'গর্তের ভিতরে কে রে?' ছাগলছানাটা ভারি বুদ্ধিমান ছিল, সে বললো - লম্বা লম্বা দাড়ি ঘন ঘন নাড়ি।

সিংহের মামা আমি নরহরি দাস। পঞ্চাশ বাঘ মোর এক-এক গ্রাস। শুনেই তো শিয়াল, 'বাবা গো। ' বলেই সেখান থেকে দে ছুট! এমনি ছুট দিল যে একেবারে বাঘের ওখানে গিয়ে তবে সে নিশ্বাস ফেললো। বাঘ তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'কি ভাগ্নে, এই তো গেলে, আবার এখুনি এত ব্যস্ত হয়ে ফিরে এলে যে?' শিয়াল হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, 'মামা সর্বনাশ হয়েছে, আমার গর্তে এক নরহরি দাস এসেছে।

সে বলে কিনা পঞ্চাশ বাঘে তার এক গ্রাস!' তা শুনে বাঘ ভয়ানক রেগে বললো, 'আচ্ছা, তার এত বড় আস্পর্ধা! চল তো ভাগ্নে! তাকে দেখাব কেমন পঞ্চাশ বাঘে তার গ্রাস!' শিয়াল বললো, 'আমি আর সেখানে যাব না, আমি সেখানে গেলে যদি সেটা হাঁ করে আমাদের খেতে আসে, তাহলে তুমি তো দুই লাফেই পালাবে। আমি তো তেমন ছুটতে পারবে না, আর সে বেটা আমাকেই ধরে খাবে। ' বাঘ বললো, 'তাও কি হয়? আমি কখনো তোমাকে ফেলে পালাবো না। ' শিয়াল বললো, 'তবে আমাকে তোমার লেজের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে চল। ' তখন বাঘ শিয়ালকে ভালো করে লেজের সঙ্গে বেঁধে নিলো, আর শিয়াল ভাবছে, 'এবারে আর বাঘমামা আমাকে ফেলে পালাতে পারবে না।

' এমনি করে তারা দুজনে শিয়ালের গর্তের কাছে এল। ছাগলছানা দূর থেকেই তাদের দেখতে পেয়ে শিয়ালকে বললো- দূর হতভাগা! তোকে দিলুম দশ ভাগের কড়ি, এক বাঘ নিয়ে এলি লেজে দিয়ে দড়ি ! শুনেই তো বাঘের প্রাণ উড়ে যায়। সে ভাবলো, নিশ্চয় শিয়াল তাকে ফাঁকি দিয়ে নরহরি দাসকে খেতে দেবার জন্য এনেছে। তারপর সে কি আর সেখানে দাঁড়ায়? সে পঁচিশ হাত লম্বা এক এক লাফ দিয়ে শিয়ালকে সহ পালাল। শিয়াল বেচারা মাটিতে আছাড় খেয়ে, কাঁটার আঁচড় খেয়ে, খেতের আলে ঠোকর খেয়ে একেবারে যায় আর কি! আল দেখে শিয়াল চেচিঁয়ে বললো, 'মামা, আল! মামা, আল!' তা শুনে বাঘ ভাবে, সেই নরহরি দাস এল বুঝি, তাই সে আরো বেশি করে ছোটে।

এমনি করে সারারাত ছোটাছুটি করে সারা হল। সকালে ছাগলছানা নিরাপদে বাড়ি ফিরে এল। শিয়ালের সেদিন খুব শাস্তি হয়েছিল তো, তাই সেই থেকে বাঘের উপর তার এমন রাগ যে, সে রাগ আর কিছুতেই গেল না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।