আমি সত্য জানতে চাই
তুমি কখন এসে দাড়িয়ে আছো আমার গানের প্রান্তে, গীতিময় সেই দিন চিরদিন, তুমিযে আমার কবিতা সহ অনেক গানের কালজীয় সঙ্গীত শিল্পী সুরের যাদুকর মাহমুদুন্নবীর মৃত্যুদিন আজ। ১৯৯০ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এছাড়া শিশু সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীও আজ। ১৯১৫ সালের আজকের দিনে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনে এই দুই কিংবদন্তিকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
১৮৬৩ সালের ১০ মে ময়মনসিংহ জেলার মসূয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। তাঁর পিতা কালিনাথ রায় ছিলেন সুদর্শন ও আরবি, ফারসি ও সংস্কৃতে সুপণ্ডিত। তাঁর ডাকনাম ছিল শ্যামসুন্দর মুন্সী। উপেন্দ্রকিশোর শ্যামসুন্দরের আটটি সন্তানের মধ্যে তৃতীয় পুত্রসন্তান। তাঁর পৈত্রিক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়।
পাঁচ বছরেরও কম বয়সে তাঁর পিতার অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে দত্তক নেন ও নতুন নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। মেধাবী ছাত্র বলে পড়াশোনায় ভাল ফল করলেও ছোটোবেলা থেকেই উপেন্দ্রকিশোরের পড়াশোনার থেকে বেশি অনুরাগ ছিল বাঁশী, বেহালা ও সঙ্গীতের প্রতি। ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে উপেন্দ্রকিশোর প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি পান। তারপর কলকাতায় এসে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে।
একুশ বছর বয়সে বিএ পাস করে ছবি আঁকা শিখতে আরম্ভ করেন উপেন্দ্রকিশোর।
এই সময় তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য হওয়ায় তাঁর অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটে। ছাত্র থাকাকালীনই তিনি ছোটোদের জন্যে লিখতে আরম্ভ করেন। সেই সময়কার সখা, সাথী, মুকুল ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত বালক নামে মাসিক পত্রিকাগুলিতে তাঁর লেখা প্রকাশ হতে সুরু হয়। প্রথমদিকের (যেমন সখা, ১৮৮৩) প্রকাশিত লেখাগুলি ছিল জীববিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ। তার পরে চিত্র অলঙ্করণযুক্ত গল্প প্রকাশিত হতে আরম্ভ হয়।
১৮৮৬ সালে ২৩ বছরের উপেন্দ্রকিশোরের সঙ্গে বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম পক্ষের কন্যা বিধুমুখীর বিবাহ হয়, এবং তখনকার কলকাতার কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের ব্রাহ্ম সমাজের মন্দিরের বিপরীতে লাহাদের বাড়ির দোতলায় কয়েকটি ঘর ভাড়া নিয়ে উপেন্দ্রকিশোরেরর সংসার জীবন শুরু হয়। উপেন্দ্রকিশোরের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলেরা হলেন সুকুমার, সুবিনয় ও সুকোমল, এবং মেয়েরা হলেন সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা।
উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন একাধারে লেখক চিত্রকর, প্রকাশক, শখের জ্যোতির্বিদ, বেহালাবাদক ও সুরকার। স্কুলজীবনেই চিত্রাঙ্কনে দক্ষতা অর্জন করেন।
বাংলা শিশুসাহিত্য রচনায় যেমন পথিকৃৎ ছিলেন তিনি তেমনি বাংলা ছাপাখানারও অগ্রপথিক। গবেষণা করে নানারকম ডায়াফার্ম সৃষ্টি, অ্যাডজাস্টার যন্ত্র নির্মাণ করেছেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। ডায়োটাইপ ও রে-প্রিন্ট পদ্ধতির উদ্ভাবক ছিলেন তিনি। যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে তাঁর প্রথম বই "ছেলেদের রামায়ণ" প্রকাশিত হয়। এই বইটি সমাজে অতি আদরের সঙ্গে সমাদৃত হলেও মুদ্রণ সম্বন্ধে অতৃপ্ত উপেন্দ্রকিশোর ১৮৮৫ সালে বিদেশ থেকে তখনকার দিনের আধুনিকতম মুদ্রণযন্ত্রাংশাদি নিজের খরচায় আমদানি করেন, এবং ৭ নম্বর শিবনারায়ণ দাস লেনে নতুন ভাড়াবাড়ি নিয়ে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে নতুন ছাপাখানা খোলেন।
এখানের একটি কামরায় তিনি নিজের আঁকার স্টুডিও খোলেন এবং সেখানে হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করেন। ১৯১১ সালে তিনি বড় ছেলে সুকুমারকে বিলাতে পাঠান ফোটোগ্রাফী ও মুদ্রণ সম্বন্ধে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্যে।
উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী গল্প, নাটক, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ, কবিতা, গান, মনোরম ছবি সবই তিনি উপহার দিয়েছেন ছোটদের। গুপি-গাইন-বাঘা-বাইন, টুনটুনির বই ইত্যাদি তাঁরই অমর সৃষ্টি। ১৯১৩ সালে তাঁর সম্পাদনায় শিশুতোষ পত্রিকা ‘সন্দেশ’ প্রকাশিত হয়।
স্বরচিত গ্রন্থে নিজের আঁকা চিত্র সংযোজন করেছিলেন তিনি। ‘বলরামের র্দুভাগ্য’ তাঁর আঁকা একটি বিখ্যাত ছবি। তাঁর রচিত গ্রন্থপঞ্জি-‘ছোটদের রামায়ণ’, ‘সে কালের কথা’, ‘ছোটদের মহাভারত’, ‘মহাভারতের গল্প’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ ইত্যাদি।
১৯১৫ সালের ২০শে ডিসেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর পরলোক গমন করেন। প্রতিথযশা দুই কিংবদন্তির মৃত্যুদিনে তাঁদের স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
তথ্যসূত্রঃ Galpobolishono
Upendrokishore Ray (উপেন্দ্রকিশোর রায়),
মাহমুদুন্নবীর গান শুনতে ক্লি করুন
মাহমুদুন্নবীর গান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।