আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুনুয়েলের বুর্জোয়া

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

লুই বুনুয়েলের সিনেমাডিসক্রিট চার্ম অব বুর্জোয়াজি নিয়ে ব্লগে একটা লেখা দিয়েছিলাম। পরশু আবার সিনেমাটা দেখলাম। কেন দেখলাম কে জানে ! দেখতে ইচ্ছা হলো তো দেখে ফেললাম। ডিসক্রিট চার্ম অব বুর্জোয়াজি কথাটার মানে কী? বুর্জোয়াদের সতর্ক প্রমোদ নাকি সতর্ক বুর্জোয়াদের প্রমোদ? বুনুয়েল নিজে একজন বুর্জোয়া ছিলেন বলে কথিত আছে।

আবার তিনি বুর্জোয়াদের বেশ সমালোচনাও করেছেন। বুর্জোয়াদের হিপোক্রেসি, আচার আচরন নিয়ে কয়েকশ কটাক্ষ করেছেন নানা সিনেমায়। সাধারণভাবে বুর্জোয়া বলতে এক ধরনের ক্ষমতাধর, অর্থ-সম্পদশালী গোষ্ঠীর কথাই মনে হয়। অর্থনৈতিক এলিট বা আপার ক্লাশও বলা হয় কখনো কখনো। কিন্তু কেন তাদের সতর্কভাবে আমোদ-প্রমোদ করতে হবে? প্যারির মতো অভিজাত শহরের বুর্জোয়ারা যথেষ্ট ক্ষমতাশালী হওয়াই স্বাভাবিক।

ক্ষমতার সঙ্গে তাদের গাটছড়া পোক্ত হওয়ারই কথা। আলামতও তাই বলে। প্যারির একটি বুর্জোয়া গোষ্ঠীকেকে নিয়ে এই সিনেমা। গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য এক ভিনদেশী রাষ্ট্রদূত। লাতিন আমেরিকার কাল্পনিক দেশ মিরান্ডার পক্ষ থেকে তিনি দূতিয়ালি করতে প্যারিতে এসেছেন।

যোগ দিয়েছেন এই ছোট বুর্জোয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে। তিনি ক্ষমতার একটা প্রতীক বটে। বেশ বিতর্কিত ক্ষমতা। এইবার বুর্জোয়াদের ভীতির ব্যাপারটা একটু আচ করতে পারলাম। বাংলাদেশ হোক কি ফ্রান্স বুর্জোয়ারা সব সময়ই লুম্পেন।

লুটপাট, চুরি, চোরাচালানি করেই তাদের অর্থসম্পদ তৈরি হয়। টাকা সংগ্রহের এই প্রক্রিয়ার কারণেই তারা ভীত থাকে। বুনুয়েলের বুর্জোয়ারাও একই রকম। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিপ্লবী সবার ভয়েই থাকতে হয় তাদের। এর মধ্যেই নিজেদের গোপন সমাজে তাদের সামান্য সুখ ও প্রমোদ।

বুর্জোয়াদের সঙ্গী রাষ্ট্রদূত লোকটিকে মনে হলো বুনুয়েল যেন তার ফোকাসে এনেছেন। এই লোকটির দেশ মিরান্ডা অর্থনেতিকভাবে পিছিয়ে পড়া। কিন্তু প্যারিতে তার লাইফস্টাইল পশ্চিমা বুর্জোয়াদের মতোই। দেশের প্রতিনিধত্ব করেন তিনি। আর এটা করতে গিয়ে দেশের বাস্তবতাটাকে ধামাচাপা দেয়ার কাজটি আগে সারেন।

অনুমান করি আমাদের মতো দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা বিদেশে গিয়ে অনেকটা মিরান্ডার রাষ্ট্রদূতের মতোই আচরণ করেন। এবার সিনেমাটা দেখতে দেখতে বাংলাদেশের বুর্জোয়াদের পরিস্থিতি বারবার মনে পড়লো। রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের সঙ্গে এদের ওতোপ্রোতো সম্পর্ক একটা বিষয় বটে। লক্ষ্য করার মতো বিষয়। সিনেমা তৈরি করার মতো বিষয়।

প্যারিতে মিরান্ডার রাষ্ট্রদূত আর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের আচরণের পার্থক্য থাকবে। তাদের মেলামেশার ধরনে তফাত থাকবে বটে কিন্তু বিষয়টা বিচার করে দেখা দরকার। আমরা অনেক সময় বলি, বিদেশিরা বেশ বাড়াবাড়ি করছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে। অমুক তমুক।

কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়ালে আসে না। এনারা নাক গলাবেন কিনা এই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আমাদের না। আমাদের লুটপাট নির্ভর লুম্পেন বুর্জোয়াদের সিদ্ধান্তেই তারা নাক গলান, গলা ভেজান। তাদের স্বার্থ দেখতেই তারা বাংলাদেশকে মডারেট রাষ্ট্র, দুর্নীতি, সুষ্টু নির্বাচনের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে ওয়াজ দেন। আমরা যত যাই বলি এইটার অবসান হওয়ার নয়।

কারণ লুম্পেন বুর্জোয়াদের পাশাপাশি আমাদের রাজনীতিকরাও এখন ড্রয়িংরুম পলিটেক্সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বড় বড় দলগুলো ছোট ছোট চোরবাটপারদের মতো দূতাবাসের দরবারে হুমড়ি খেয়ে পড়তে শুরু করেছে। ব্যস রাজনীতি ব্যবসা বাণিজ্য সব ওনারা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছেন। বাকী থাকলো বুনুয়েল। সমাজের জটিল আন্তসম্পর্ক দেখিয়ে দেবার মতো ব্যক্তি পৃথিবীতেই খুব কম।

আর বুনুয়েলের বুর্জোয়া এমন ব্যাপক এক বিষয় যে এক আলাপে শেষ হওয়ার না। সুখের কথা, বুনুয়েলের সিনেমাগুলো ঢাকার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এখন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।