যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
১.
ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌছঁতে যখন একটু বাকী তখন শাহীন একদিন ফারজানাকে ডিভোর্সের কথা বললো। ফারজানা অনেকদিন যাবৎ স্বস্তি পাচ্ছিল না সম্পর্কটিতে। ছ'বছরের কন্যাকে স্কুলে দিয়ে অফিসে এসে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থেকে বাসায় ফিরে শাহীনের জন্য রাত্র এগারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফোন করলে একই জবাব, রাস্তায় জ্যাম, গাড়ীর টায়ার পাংচার হয়েছে। কোনদিন বলে, বসদের সাথে মিটিংএ।
বিদেশী ডেলিগেট এসেছে। ফারজানা বলে, এমন করলে কবে দেখবে আমি কারো সাথে লটকে গেছি!
শাহীন হেসে বলে, সে সম্ভাবনা আছে নাকি!
ফারজানা গম্ভীরভাবে বলে, সম্ভাবনা তৈরী হতে কতক্ষণ? আমার সব শেষ হয়ে গেছে নাকি, সবেতো পয়ত্রিশ! শাহীন জোরালোভাবে অফিসের কাজের কথা বলে যায়। একদিন ফারজানার বান্ধবী ফোন করে বললো, তোর জামাইকে একটু আগে নন্দন ডিপার্টমেন্টাল শপে এক সুন্দরীর সাথে দেখলাম। বাসায় ফিরে অজুহাত হচ্ছে, এ্যান্ডি নামের যে বিদেশী কনসালটেন্ট এসেছে তার জন্য বাসা খুজঁতে গিয়ে দেরী হয়ে গেছে।
২.
কে যেন বলেছিল শাহীনকে, তোমার বউকে দেখলাম একজন ইয়াং ছোকরার সাথে ঘুরছে শাহবাগে।
শাহীন বিষয়টাতে আমল দেয় নি। অফিসের কলিগটলিগ হবে, তাছাড়া ফারজানার অফিসও সেখানে। তাছাড়া রোমানার সাথে একটা অলিখিত সম্পর্ক শুরু হয়েছে তার ক'দিন হলো। রোমানা আলাদা ফ্লাট নিয়েছে, শাহীন সন্ধ্যা থেকে সেখানেই সময় কাটায়। যাদুটোনা করা প্রেমের মত অবস্থা।
শাহীন এখন তার জন্য ফারজানাকে ডিভোর্স দিতেও তৈরী হয়ে গেছে। ফারজানা কি করছে, কার সাথে ঘুরছে এটা আসলে এখন আর কোন মানে রাখে না। সমস্যা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসাটা তাদের হয়ে যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে। স্বামী স্ত্রী ডাক্তার হিসাবে একটা এসেসমেন্ট পরীক্ষায় ভালভাবে পাশও করেছে। সামনের মাসেই ইমিগ্রেশনের কাগজ চলে আসার কথা।
এখন বিষয়টা কিভাবে সমাধা করা যায় তা বের করতে হবে। শাহীন একদিন বলে, অস্ট্রেলিয়াতে বাঙালি মেয়েরা গিয়ে তো বেশি আধুনিক হয়ে যায়। স্বামীদের আর কেয়ার করতে চায় না!
ফারজানা মুখ বাকা করে বলে, এখন বুঝি তোমাকে খুব কেয়ার করি? তুমি কতটুকু কেয়ার করো?
শাহীনের এসব ভাল লাগে না। ফারজানা কোন কিছুই সহজভাবে নিতে পারে না। অথচ রোমানা কত প্রানবন্ত, মধুর ফ্রেন্ডলী রিসেপশন!
৩.
ডিভোর্সের প্রস্তাব দিতেই ফারজানার প্রথম চিন্তা হলো, ইমিগ্রেশনে কোন সমস্যা হবে কিনা! শাহীন সে আশংকা দূর করে দেয়।
আমরা একত্রে গিয়ে তোমাকে সেটেল করে দিয়ে তারপরে আলাদা হয়ে যাব। তুমি পোস্ট গ্রাজুয়েশন স্কলারশীপ দিয়ে খরচ মেনটেন করতে পারবে!
ফারাজানা বলে, রোমানাকে তুমি কি এখনই বিয়ে করবে?
শাহীন বলে, বুঝতে পারছি না। তবে একত্রে থাকবো কিছুদিন, পরে সিদ্ধান্ত নেব। সেনিনের খবর কি?
সেনিন হচ্ছে ফারজানার সাথে যে ছেলেটিকে ঘুরতে দেখা যায় সেই কলিগ। একই অফিসে কাজ করে, বয়সে ছোট, পজিশনে ছোট, কিন্তু ইদানীং রোমান্থন বেশী হচ্ছে।
ফারজানা বলে, সেনিন মনে হয় বুঝতে পারছে না কি করবে। ইন ফ্যাক্ট এটা ওর প্রেম কিনা সেটা নিয়েও আমি নিশ্চিত নই!
শাহীন চিন্তিতভাবে বলে, হুম! আচ্ছা তোমাদের মধ্যে শাররীক সম্পর্ক হয়েছে!
ফারজানা চোখ বিষ্ফোরিত করে তাকিয়ে থাকে শাহীনের দিকে। তারপরে বলে, নো পারসোনাল ইন্টারফেরেন্স!
৪.
সেনিন মুগ্ধ হয়ে থাকে ফারজানার দিকে। অফিসে তা চেয়ে দুই গ্রেড উপরের বসগোত্রীয় ফারজানা তার রুমে এসে বেগুনী শাড়ী পড়ে ক্যাটওয়াক করে বলে, ক্যামন লাগছে? তোমার জন্যই আজকে শাড়ী পড়ে এলাম!
সেনিন উঠে এসে চাইনিজ স্টাইলে বো করে, তারপরে ব্যালের মত ফারজানার দুই হাত ধরে দুইদিকে ছড়িয়ে এক পা সামনে এগিয়ে বলে, উইল ইউ বি মাই ওয়াইফ?
ফারজানা থতমত খেয়ে যায়। এয়ারকন্ডিশনড রুমে কারো ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারপরেও সেনিনের গলায় হালকা একটা চুমু খেয়ে বলে, সবতো দিনটা শুরু! অফিস শেষে এ কথাটা আরেকবার শুনতে চাই!
সেনিন তথাস্তু বলে আরেক পাক ঘুরে ফারজানাকে ছেড়ে দেয়। ফারজানা উড়তে উড়তে এক ফ্লোর ডিঙিয়ে তার রুমে এসে ১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডেও ঘামতে থাকে। ইয়েস! দ্যা বয় ইজ মাইন!
৫.
নাজনীন মায়ের সাথেই থাকবে। অফিস থেকে স্টাডি লিড নিয়েছে ফারজানা। রোমানার সাথে কয়েকদিন কথা হয়েছে।
নিজেদের মধ্যে ফারজানা ও শাহীন মানসিকভাবে সেপারেশন মেনে নিয়েছে। কাগজ-পত্রের কাজটুকু এখনও বাকী। সেটা ইমিগ্রেশনে ঝামেলা হতে পারে আশংকা করে করা হচ্ছে না। শাহীন রাত্রে এখন রোমানার সাথে থাকে। তবে ফারজানার বাসায় এসে সেনিন থাকছে না।
মাঝে মাঝে আসতে বলে, কিন্তু সেনিন কেমন যেন গুটিয়ে থাকে। এই বিষয়টা নিয়ে ফারজানা চিন্তিত। সেনিন কখনও তার বাসায়ও নিয়ে যায় না। বিয়ের প্রস্তাবের পর থেকে সেনিনকে একটু বয়স্ক ও গম্ভীর লাগছে। সারাদিন শুধু নাজনীনের কথা জিজ্ঞেস করে।
ফারজানা বলে, ওতো ভালই আছে।
সেনিন জানতে চায়, বাবাকে দেখতে চায় না?
ফারজানা বলে, এমনিতেই তো মেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল বাবাকে না দেখতে দেখতে। এখন মাঝে মাঝে দেখতে চাইলে, শাহীন এসে দেখে যায়।
সাত বছরের বড় ফারজানাকে সেনিনের হঠাৎ তার চেয়েও কম বয়সের মনে হয়। সবচেয়ে বড় কথা নাজনীনকে তার মনে হতে থাকে নিজের সন্তান।
কোন এক অদ্ভুত কারণে তার সমস্ত আকর্ষণ গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয়েছে ছ'বছরের নাজনীনের দিকে। ফারজানা একদিন নাজনীনকে অফিসে নিয়ে এসে পরিচয় করিরে দিয়েছিল, বলেছিল, তোমার এই কাকুটা আমাদের সাথে থাকবে।
নাজনীন সেনিনের কোলে উঠে নাক টেনে বলেছে, তোমার চেয়ে বাবার নাক অনেক সুন্দর।
নাজনীন কি মনে করে এমন কথা বলেছে মাথায় ঢোকে না অসামঞ্জস্য জুটির।
৬.
সেনিন একটা চাপ বোধ করে।
নাজনীনের বাবা হবার জন্য সে একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা টের পায়। তার প্রতিপক্ষ শাহীন। নাজনীনের সেদিনের কথার পর থেকে সে শাহীনের কথা শুনতে চায় ফারজানার কাছ থেকে। ফারজানা মহাবিরক্ত। বলে, কি হয়েছে তোমার?
সেনিন মাথা দুলায় অনিশ্চিত।
ফারজানার গা ঘেসে বসে থাকা অন্তরঙ্গতা তাকে উদ্দীপ্ত করতে পারে না। ফারজানা মানে নাজনীনের মা এমন ছাড়া ভাবতে পারে না সেনিন। তার ভেতরে গভীর একটা ভাবনা খুবলে খাচ্ছে। এটা স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে একধরণের বিকারেরর মত তৈরী করে। সে ভাবছে প্রেম নিয়ে নয়, সে ভাবছে সংসার নিয়ে।
সে দেহ নিয়ে ভাবছে না, সে ভাবছে সম্পর্কের স্থায়ীত্ব। চুপ থেকে বলে, তোমাদের মধ্যে কি সমস্যা হচ্ছিল মাইজান? ফারজানা থেকে ফারজান অপভ্রংশ হয়ে এখন দুজনের সন্বোধনে মাইজান রূপ লাভ করেছে।
ফারজানা প্রথমে বুঝতে পারে না কাদের কথা বলছে সেনিন। পরে বুঝতে পেরে আরো হতাশ হয়। বলে, কেন এ প্রসংগটা আনছো বারবার?
সেনিন বলে, সম্পর্কগুলো কেন ভেঙে যায়? আমাদের সম্পর্ক কতদিন থাকবে?
ফারজানার জানা নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।