আওয়াজ উঠতে হবে, আওয়াজ উঠছে
সংসারের সম্পর্কগুলো হারিয়ে ফেলছে মানে, জানি না, কেন? এভাবে বদলে যাচ্ছে জীবনের আয়োজন ও এর দাবী। চলতে চলতেই হঠাৎ-ই ম্যানহোলের গভীরে অজানা পথচারীর মত চেনা চেনা মানুষগুলো একে অপরের কাছে হয়ে উঠছে অচেনা। এক সাথে দেখা স্বপ্নগুলো সহসাই দ্বি-খন্ডিত হয়ে ফ্যাকাসে করে যাচ্ছে বসন্ত বিকেলে তোলা জোড়া ছবিগুলোর বর্ণ। কিন্তু কেন, হচ্ছে এমন? ভালবাসা গুলো কি ফেসবুক কিংবা টুইটারের বার্তার সাথে সাথে প্রতিদিন পাল্টে ফেলছে চেহারা, কিংবা অজানা নামে ইয়াহু চ্যাটরুমে আমরা আসক্ত হয়ে পড়ছি প্রতিদিনকার প্রেমে। ”দেখি না, কি হয়” - এ নীতি গ্রহন করতে যেয়ে ধীরে ধীরে বর্জন করে চলছি আমার প্রিয় সঙ্গিটির ভালবাসা।
আবিস্কারের নেশায়, আমরাই সেরা আবিস্কারকে পদদলিত করছি, অবহেলায়। কিন্তু কেন? এভাবে তো উচিত নয়।
মানুষের প্রবনতাগুলো কেমন জানি জটিল হয়ে উঠছে। আমরা নিজেদেরকে ছাপিয়ে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও কিন্তু অনেক কাজ করছি। বর্তমান সম্পর্কগুলোর এই যে ছেদ, এই যে বিচ্যুতি এর কারন খুজতে যেয়ে আমরা দেখি শিক্ষার অতি প্রয়োগ অথবা যুগের সাথে তাল মেলাতে না পারার পরাজয়।
আমাদের আজকের পরকীয়া বলতে যে সম্পর্ক বোঝায় তার আসল চেহারা, কিন্তু এসব বিচ্যুতির ফসল, আর এর জন্য দায়ী আমরা নিজেরাই। যতটুকু দেখেছি, বুঝেছি সমাজের আজকের গতিশীল এক শ্রেনীর জেনারেশন (পুরুষ মহিলা উভয়ই) আছেন, তাদের অধিকাংশের বয়স ২৫-৪০ অবধি, দুরন্ধরাম অফিস ওয়ার্কার, চটপট স্বভাবের, আইটি থেকে জেনারেল সবখানে সমান পারদর্শী, তারা কেবলি ছুটে চলেন, সবখানে তাদের গতিতে অন্যরা তাল মেলাতে টালমাটাল হয়ে যায়। আর অন্যদিকে একই বয়সের পুরুষ/মহিলা-রা আছেন যারা না আইটি পুরোটা জানেন, না সাধারন জ্ঞানের সমারোহে বুঝতে সক্ষম হোন তার সহযাত্রীটি কতটা দ্রুত গতিতে জীবন অতিবাহিত করছে, ফলে দুরত্ব শুরু হয়ে যায়, শুরু হয়ে যায় তোমার আমার অপূর্ণ কথা-বার্তার সমারোহ, জমাটবদ্ধতা। একজন কম্পিউটারের ভেতর খুজে বেড়ান জীবনের উদ্দেশ্য, অন্যজন ছেলে/মেয়ে কিংবা বাজার সওদায়-তে কাটিয়ে দেন বেলা, কিন্তু দুজনেরই মনের ভেতর জমতে থাকে না ব্যাথা না বলা, জমতে থাকে মেঘ তার আদ্রর্তা ভিজিয়ে ভিজিয়ে তাদের মনে সর্দি জ্বর বাধিয়ে দেয় অথচ তাদের ভেতর বাহিরে বলা-শোনার মত কেউ থাকে না। ব্যবসা কিংবা চাকরীর মোহে বিত্তশালী হওয়ার স্বপ্নে আমরা তাকিয়ে দেখি না কোন এক কালের আমার প্রিয়/প্রেয়সীটি কেমন মন মরাভাবে বসে থাকে, অলক্ষে হয়তো তার অশ্র“ক্ষনর তাকে ভয়ংকর ভাবে নাড়া দেয়, জীবনের মাঝ পথে এসে হঠাৎ-ই সে হারিয়ে ফেলে জীবনের মানে, তার কাছে দিন নিছক-ই পঞ্জিকার পাতা উল্টানোর মত নিরস মনে হয়, ভোরের শিশির কিংবা রুপালী জোছনা আর তাকে নাড়া দিয়ে যায় না।
আমি বুঝি না, বিয়ের ৫/১০/১৫ বছর পরও কি নতুন করে আবিস্কার করতে হয় না, প্রিয়/প্রিয়সীকে। উচিত, প্রতিনিয়ত নতুন করে আবিস্কার করা উচিত, তার আচরণ ও তার হাসি তার কান্না না দেখে এর পেছনে লুকায়িত কারন কি আবিস্কার করা উচিত নয়। অবশ্যই করা উচিত। আমি বুঝি না, আজকাল কার সহযাত্রীরা কেন গতিশীলতার সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারছেন না, যারা গতিশীল তারা চাচ্ছেন তাদের সহযাত্রীটিও যেন তার মত গতিশীল হয়, তাদেরও এখানে কষ্ট কাজ করে। কিন্তু তারা ভুলে যান সংসার ভালবাসা এত গতি দিয়ে আসে না, স্থীরতা দিয়ে আসে, ধৈর্য্য দিয়ে আসে, সহনশীলতা দিয়ে আসে।
ভালবাসার নামে একটু এনজয়ের নামে আমরা আজ প্রযুক্তির কাছে যা চাচ্ছি তা হয়তো সামান্য মনের কিংবা চোখের খোরাক হচ্ছে কিন্তু জীবনের অংশ হয়ে তা কখনও আপনাকে আমাকে পূর্ণাঙ্গ সুখ দিতে পারবে না। তৃপ্তি যে শব্দটার সাথে আজ আমরা আর কম্পোরমাইজ করতে চাচ্ছি না, তার পরিধি কত দিন, জীবনের ১০ টি বছর, কিন্ত জীবনের এই তৃপ্তি তো প্রকৃত আত্ব্যার তৃপ্তি, শরিরী ধর্মে আমরা আজ দিক্ষিত, লিপ্তিত, উত্তেজিত, আবেগিত। কিন্তু এ শরীরি নীতি কি আমাদের রেহাই দিতে পারবে আমাদের আত্ব্যার প্রশ্নে, আমরা কি পেরে উঠব আমাদের আত্ব্যার কাঠগড়ায় আমাদের বিচারে। সংস্কৃতিটা কোথায় যেন যাচ্ছে, দুরে কোথাও, কালচার যে শব্দটা একটি শৈল্পিক মানে রাখতো তা আজ অভিশাপের মত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমাদের কোমল মনের ভাল অনুভুতিগুলোকে। সর্ম্পকগুলো আমরা নিজেরা ভেঙ্গে ফেলছি, যা আমাদেরই হাতে ছিল গড়া, মাটির কোমল কাঁদায়, তার উপর সময়ের প্রলেপে, আজ আমাদের গতিশীলতার হাতুড়ী ভাঙছে সেই মহল, তার ভালবাসা।
আমরা কেথায় যাচ্ছি।
আমি চাই এ সিড়িগুলো আবারও জোড়া লাগুক, ভাললাগায় ভালবাসায় ভরে থাকুক সংসার। মানুষের আত্ব্যাগুলো শুদ্ধ হয়ে উঠুক। সমস্যাগুলো একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে, আচরণ বুঝে পড়ে নিক একে অন্যে। যদি এটা সম্ভব হয়, তবে দেখবেন, প্রতিদিনই ঘর হয়ে উঠবে সংসার, ছোট ছোট আসাবাবপত্রগুলো ফুলদানীর মরা ফুলগুলো প্রকৃতির এক একটা উপদানা হয়ে রাঙিয়ে দিবে আমাদের সংসার।
আমরা হয়ে উঠব সুখি, হাস্য-আনন্দে ভরপুর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।