আয়কর বিবরণীর নথিতে সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজাটি পাঁচতলা দেখানো হয়েছে। অথচ ভবনটি আটতলা ছিল। ভবনের তিনটি তলা (ফ্লোর) ও এর আয় গোপন করা হয়েছে। আবার ভবনের পুরো মালিকানাও সোহেল রানা নিজের নামে দেখাননি। এই ভবনের ৪০ শতাংশ মালিকানা তাঁর নামে রয়েছে।
বাকিটা তাঁর বাবা আবদুল খালেকের নামে রয়েছে।
২০১২-১৩ করবর্ষের বার্ষিক আয়কর বিবরণীতে এসব তথ্যই দিয়েছেন ভবনটির মালিক সোহেল রানা। কর অঞ্চল-১২-এর ২৫৮ নম্বর সার্কেলের করদাতা তিনি।
সম্প্রতি সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর সোহেল রানা ও তাঁর মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় সম্পদ ও আয়কর প্রদানের তথ্যের গরমিল রয়েছে কি না, কিংবা তিনি কর ফাঁকি দিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল মঙ্গলবার সাভার কর সার্কেল-২৫৭ থেকে তাঁদের আয়কর বিবরণীর নথি সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে আনা হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সোহেল রানার রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার খবর প্রকাশ পায়। এত সম্পদের বিপরীতে সোহেল রানার করের নথি পর্যালোচনা করে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আয়কর নথি অনুযায়ী, রানা প্লাজা ছাড়াও রানা ব্রিক ফিল্ড ও এ কে ব্রিক ফিল্ডের এক-তৃতীয়াংশের মালিক সোহেল রানা। সব মিলিয়ে তাঁর এক কোটি ৬৪ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে এক কোটি ৪২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে রানা প্লাজায়।
২০১২-১৩ করবর্ষে সোহেল রানা ৬৭ হাজার ১০৬ টাকা আয়কর দিয়েছেন। আর তিনি আয় দেখিয়েছেন নয় লাখ ৬৩ হাজার টাকা। মূলত ভবনের ফ্লোর, দোকান ভাড়া, ঠিকাদারি ব্যবসাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে তিনি এই আয় দেখিয়েছেন। ২০১১-১২ করবর্ষে তিনি কর দিয়েছিলেন ৫৯ হাজার ৪৫৬ টাকা।
অন্যদিকে রানার বাবা আবদুল খালেক তাঁর আয়কর বিবরণীতে নিজেকে রানা প্লাজার ৬০ শতাংশের মালিক হিসেবে দেখিয়েছেন।
দুটি ব্রিক ফিল্ড, সাভারের বাড়ি, জমিজমাসহ মোট সাত কোটি ৩৫ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক তিনি। ২০১২-১৩ করবর্ষে তিনি কর দিয়েছেন এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
অন্যদিকে সর্বশেষ করবর্ষে সোহেল রানার মা মারজিনা বেগম আয় করেছেন প্রায় ১২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে কর দিয়েছেন ৭৭ হাজার ৯৯২ টাকা।
এনবিআরের সদস্য (নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত) মোহাম্মদ শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, কর ফাঁকি চিহ্নিত করার যেকোনো আয়কর নথি পর্যালোচনা করা কর কর্মকর্তাদের নিয়মিত কাজের অংশ।
সন্দেহ হলেই যেকোনো করদাতার বার্ষিক আয়কর বিবরণী পুনরায় মূল্যায়ন করা হয়। কর্মকর্তাদের কাজই হলো করদাতাদের কাছ থেকে প্রকৃত আয়ের বিপরীতে কর আদায়।
সোহেল রানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা কর ফাঁকি দিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে আয়কর অধ্যাদেশের ১২০ ধারা অনুযায়ী, সাভার সার্কেল কার্যালয় থেকে কর অঞ্চল-১২-এ ফাইল আনা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের আওতায় যুগ্ম কর কমিশনার ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা চাইলে অধীনস্থ যেকোনো কর সার্কেল থেকে নথি পুনর্মূল্যায়ন করতে পারেন। প্রসঙ্গত, কর ফাঁকিতে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা দেওয়ার বিধান রয়েছে।
জানা গেছে, সোহেল রানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সর্বশেষ আয়কর নথি প্রাথমিক পর্যালোচনায় আয়-ব্যয়ের অসংগতি ধরা পড়লে আয়কর অধ্যাদেশের ৯৩ ধারা অনুযায়ী, বিগত পাঁচ করবর্ষের বার্ষিক আয়কর বিবরণী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। নিয়মানুযায়ী, কর ফাঁকি প্রমাণিত হলে করদাতাকে কর পরিশোধের জন্য নোটিশ দেওয়া হবে। নোটিশের জবাব না পেলে মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।