আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বালের ব্যবচ্ছেদ

সুন্দরী বালিকাদের যত্ন করে কামড়াই

বাল। বাংলাদেশে বাংলাভাষীদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি রূঢ় শব্দ। এর ব্যবচ্ছেদ খুব একটা সহজ কাজ নয়। বালের চুলচেরা বিশ্লেষণ প্রকৃতপক্ষেই দুরূহ একটি কর্ম। বাল শব্দটি উর্দু।

এর শাব্দিক অর্থ চুল (হিন্দি সিনেমায় আমরা হরবখত নায়ককে নায়িকার বালের গুণগান গাইতে শুনি)। আপাতনিরীহ এই শব্দটি গঙ্গাঅববাহিকায় এসে তার সামগ্রিক চুলার্থ হারিয়ে ঘনীভূত হয়েছে বয়সন্ধি উত্তীর্ণ কেশরাজিতে। সম্ভবত গুপ্তকেশের ব্যবহারিক তাৎপর্যহীনতা, অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাহুল্য, নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার হ্যাপা এবং আনুষঙ্গিক ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিবেচনা করেই আমরা একে একটি রূঢ় গালি হিসেবে বেছে নিয়েছি। অনেকেই শিশু বয়সে, বাল গজানোর আগেই বাল বলতে শিখে ফ্যালে। এটি দুঃখজনক।

রূঢ় শব্দের অসচেতন ব্যবহারের কারণেই বাল এর সংক্রমণ ঘটতে থাকে উত্তরপুরুষের চেতনায়। আমাদের উচিত বাল বলার আগে আশেপাশে তাকিয়ে দেখা, এবং কোন শিশুর উপস্থিতিতে বালের পরিবর্তে "চুল", "কেশ", "রোম", "লোম", "কুন্তল", "অলক" ইত্যাদি কারুকার্যমন্ডিত প্রতিশব্দ ব্যবহার করা। শিশুদের অনুপস্থিতিতে বাল বলা যেতে পারে, তবে না বলাই ভালো। বহুল ব্যবহারে বালের ওজন হ্রাস হতে পারে। আপনি যদি সবসময় বাল বলেন তাহলে সময়মতো শুধু বাল বলে কার্যোদ্ধার করতে পারবেন না।

তখন আপনাকে অপাদান ও অধিকরণ কারকে বালের শারীরবৃত্তীয় অবস্থান নির্দেশ করে রূঢ় শব্দের ব্যবহারের যথার্থতা নিশ্চিত করতে হবে। বালের লেজ ধরে তখন আরো খারাপ খারাপ শব্দ তখন ব্যবহার করতে হতে পারে। পচা কথা বলার ধারাই এমন, একবার একটা বললে পেছন পেছন দশটা এসে হাজির হয়। তবে সাম্প্রতিক বিবর্তনে বালের সাথে ছন্দ মিলিয়ে বালছাল বলছেন অনেকে। বাল আর বালছালের মধ্যে কিছুটা প্রায়োগিক পার্থক্য রয়েছে, কিছু কেস স্টাডি করলে এর সূক্ষ্মতা সহজেই অনুধাব্য।

যারা একেবারেই রূঢ় শব্দ ব্যবহার করেন না, তাদের মুখে বাল একটা বিস্ফোরণের সমার্থক। তাই ঘন ঘন বাল না বলে কালেভদ্রে বললে এটি একটি খুব কার্যকরী এক্সপ্লিটিভ হতে পারে। এছাড়া আদর করে কোন কিছুকে গালি দিতে চাইলে বালটুস, বালটুন, বাল্লু, ইত্যাদি বলা যেতে পারে। তবে গদ্যে পদ্যে বালের সময়োচিত ব্যবহার অনেক সময় মূল রচনাকে আরো আবেদনময় করে তুলতে পারে। কিছুদিন আগেই যূথচারী বালস্য বাল হরিদাস পাল প্রসঙ্গের অবতারণা করে একটি শক্তিশালী কবিতা উল্লেখ করেছেন তাঁর একটি পোস্টে।

এসব ক্ষেত্রে বাল অলঙ্কারবিশেষ। বালের বহুল ব্যবহারের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে অভ্যাসে পরিণত হওয়া। তখন গুরুজন, সুধীজনের সামনেও এটি নিজের অজান্তে ঠৌঁটের আগল খুলে বেরিয়ে আসতে পারে স্বমহিমা নিয়ে। তখন একটা কেলো হতে পারে। বহুল ব্যবহারে কিছুটা অস্থির, এলোমেলো হলেও এখনো আমাদের মাঝে বালের ব্যবহারিক উপযোগিতা অবিসংবাদিত, এবং সমাদৃত।

বালের উৎস্থস্থলগুলিও গালি হিসেবে কম যায় না, কিন্তু বালের আসন হয়েও তারা বালের আসন দখল করতে পারেনি। তবে আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, বালের ব্যবহারে পরিমিতিবোধের পরিচয় দিন। একে বেশি ঘাঁটলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। মাঝে মাঝে একটি দুটি উৎপাটন করুন সময় বুঝে, কিন্তু উঠতে বসতে যদি বাল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে ব্যাপারটা চোখে আর কানে কটু ঠেকবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।