যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
[ছুটির দিন, কাজকাম নাই; একটু দর্শন কপচাই; উচ্চমার্গের কিছু খুঁজিলে, এখানে ঢুইকা লাভ নাই]
ইউনিভার্সিটি লাইফে বিভিন্ন দেশের(বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) বন্ধুরা মিলে একটা ক্রিকেট ক্লাব করেছিলাম; ছুটির দিনে সবাই একসাথে খেলতাম, গালগল্প করতাম।
অস্ট্রেলিয়ান একবন্ধু ছিল, নাম টিম। ভাল বোলার-ব্যাটসম্যান। আমি নামতাম শেষের দিকে, হাতে স্ট্রোক ছিল, দুচারটা চার-ছয় মেরে অনসাইডে ক্যাচ দিয়ে ফিরতাম।
তো একবার আমাদের দলের ছয় উইকেট পড়ে গেল ধুপধাপ করে; নামলাম ব্যাট করতে।
ক্রিজে তখন টিম। আমাদের অনেক রান করতে হবে তখনও, আমার পরে বাকী যারা আছে তারা প্রতিম্যাচেই ব্যাট কিভাবে ধরতে হয় এব্যাপারটাতে ধাতস্থ হতে হতেই আউট হয়ে যায় - এমন টাইপের।
কাজেই, আমার ঠুসঠাস আউট হওয়া চলবেনা!!
টিম এসে আমাকে বলল, 'বল-বাই-বল খেল। মোট কত রান নিবা সেটা ভাবার দরকার নেই, যাস্ট ভাব যে পরের বলটা টিকে থাকব, লুজ বল হলে রান নিব। পরের বল গেলে, এর পরের বল নিয়েও একই চিন্তা কর।
'
একদম সেইভাবে খেললাম, সব মনোযোগ শুধু পরের বলটার প্রতি। আমার সাধারণত ১০-১২ বলের বেশী খেলা হতোনা, সেদিন ৩৫ বল খেললাম। লাইফের একমাত্র ফিফটিও সেদিন আসল।
খেলাশেষে হয় খেলার পর্যালোচনা; আমি রীতিমতো টিমের মন্ত্রে মুগ্ধ। ব্যাপারটা নিয়ে এটাসেটা বলছি।
হঠাৎ টিম ামাকে বলল, 'ম্যান, লাইফ ইটসেলফ ইজ লাইক দ্যাট। শুধু আগামীকালের দিকে ফোকাস কর, আগামী বছর কি হবে টা নিয়ে এখনই এত ভাবার কিছু নেই। আগামীকালগুলো ভাল হলে, আগামীবছরটা এমনেই ভাল হবে। '
আমার মুগ্ধতা বেড়েই চলল। বললাম,'কোথায় শিখেছ এত চমৎকার দর্শন?'
সে বলল, 'আমার স্কুলে এক চমৎকার শিক্ষক ছিলেন।
'
ওদের স্কুলিং সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানলাম। মনে হলো খুব জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো শিখে।
আমাদের মতো 'ভবিষ্যতে হ্যান হয়ে ফাটাইয়া ফেলব, ত্যান করে উড়াইয়া ফেলব' - এসব শিখেনা। খুব কাছের বিষয়গুলোতে ফোকাস থাকে, বাচ্চারা ক্লাসে যা শেখে নিজের জীবনে তা দেখতে পায় সরাসরি।
জাপানে বাচ্চারা প্রত্যেক ক্লাসে অন্তত একবার নিজের বাবার উপরে একটা, মায়ের উপরে একটা লেখা লেখে।
আমাদের দেশে রচনার বিচারে হয়ত লেখাগুলো খুবই সাধারণ মানের, ১০ এ ৩ ও পাবেনা।
কিন্তু তাতে কি?
হরলাল রায়ের বই থেকে 'মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য' কোটেশানসহ মুখস্থ করার চেয়ে নিজের-আরও-অনেক-ঘনিষ্ট বাবা-মা সম্পর্কে নিজে থেকে দু-চারলাইন লিখলেই বরং নিজের বাবা-মার প্রতি সন্মানটা অনেক বাড়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।