আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুগ্ধ পাঠক -৫ : নজমুল আলবাব (মরুভূমির গোলাপ চাষী)



লেখা পড়ে লেখক সম্বন্ধে আইডিয়া করতে পারেন, আপনারা? মোঁপাসা - ব্যক্তিজীবনের সাথে তার লেখার প্রেম, মানসিক টানাপোড়েন, আর উন্মত্ত যৌনতার পদে পদে মিল। তার লেখা চরিত্রগুলোও তার মত সিফিলিসে ভোগে। সত্য মিথ্যা জানি না - শুনেছি, তিনি নাকি পৃথিবীর সেই সব সৌভাগ্যবানদের একজন যারা কিনা রতিরত অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন । আবার বিপরীত চিত্রও আছে। জুলভার্ন - বাপরে বাপ! আমার শৈশব, কৈশোরের ঘুম কেড়ে নেয়া সব লেখা: চাঁদে অভিযান, সাগর তলে, আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ।

অথচ, এই লোকটি নাকি মারাত্মক ঘরকুনো! জীবনে বাড়ির বাইরে খুব কম গিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করিনি। হতেই পারে না এমন! ভূমিকাটা মনে হয়, একটু বড় হয়ে যাচ্ছে। সংক্ষেপ করি এবার। নজমুল আলবাব এর লেখা পড়ে আমার মনে কোনো কনফিউশন জাগে না কখনও।

তার আটপৌঢ়ে শব্দমালা আমাকে একজন নিরীহ এবং খাটি ভদ্রলোক এর ছবি উপহার দেয়। আমি যদি ভবিষ্যতে কোনোদিন জানতে পারি, তিনি খুব ডাকাবুকো টাইপের লোক আমি মেনে নেব না। কিছুতেই না। মেনে নেব না -কারণ, তার লেখা প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য আমাকে জীবন্ত একটি মানুষের সাথে কথোপকথনের অনুভূতি জাগায়। 'ভূল সময়ের মর্মাহত বাউল' - আমার মনে বাউল হয়েই বেঁচে থাকবে।

নজমুল আলবাবের লেখার যে জিনিসটি আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে, তা হলো পরিমিতিবোধ। এই জিনিসটার খুব অভাব আমার মধ্যে। আমি যেখানে ধান ভাঙতে শিবের গীত গাই, সেখানে উনি মাত্র ৫ টি লাইন খরচ করেন 'ডোনেশন' এর মত ৫০০০০০০ লাইনের ব্যাপ্তিওয়ালা পোস্ট দিতে। 'আমাদেরও ছিল সুসময়'- এমন একটি লেখা যে লেখায় বার বার কমেন্ট করতে চেয়েছি। পারিনি।

পারব কী করে? চোখ ঝাপসা হয়ে গেলে, কীবোর্ডের অক্ষরগুলোতো অস্পষ্ট হবেই। মানুষ কেমন করে ওমন লেখে? সাধারণ থেকে স্বপ্নবাজ হবার গল্প? 'দেয়ালের দাগ' - ছোট ছোট বাক্যে সাজানো একটি অসাধারণ ছোটগল্প। সাইদ, রনজু, রনজুর বাবা মা, তাদের দ্বিধা, সংশয়, সুররিয়েলিস্টিক উপন্যাসের ডিটেইলস এর মত দেয়ালে দেয়া দাগ - সবকিছু কতই না আপন! 'সে বড় মায়াবতী ছিল, সে ছিল ছায়াময় বৃক্ষের মত': 'অর্ণা বন্ধু আমার' - কবিতার দুটো লাইন। দুটো লাইনে কী সুন্দরভাবে আমরা একজন মায়াবতীকে দেখি!!! আর এরকম বন্ধুর জন্য বুকের মধ্যে কতশত দীর্ঘশ্বাস জমা করি। 'আমার কোনোদিন দুধ চা খাওয়া হবে না' - গল্পটি সম্বন্ধে আমার কিছু বলার নেই।

সেই যোগ্যতাও আমার নেই। আমার শব্দভাণ্ডার নি:শেষ করেও এর মূল্যায়ন করতে পারব না। এই ব্লগের পাঠকরা মূল্যায়ন করেছেন গল্পটিকে ভালবেসে টপ রেটেড লিস্টে তুলে। বক্তব্যধর্মী পোস্টে যখন টপ রেটেড পোস্ট ভরে যায়, তখন নজমুল আলবাব এর গল্পটি একই লিস্টে দেখে অহংকার হয়। ভরসা পাই, সত্যিকারের সাহিত্য এখনও মূল্যহীন হয়ে যায়নি।

'আমাদের ক, খ, গ, ঘ এবং ঙ' - আরেকটি দুর্দান্ত গল্প। কতটা হতাশা থেকে এরকম একটি গল্প লেখা যায় - জানি না। যে গল্প কেউ বলে না, সেই গল্প যে বলে----- সে ভূল সময়ের মর্মাহত বাউল হতে পারে । কিন্তু, এতে তার চরিত্রের পূর্ণ প্রকাশ আমরা পাই কি? আমি অন্তত পাই না। তার জন্য আর একটি বিশেষণ আমি চোখ বন্ধ করে যোগ করে দেই - 'মরুর বুকে একনিষ্ঠ গোলাপ চাষী।

'

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।