"অ্যাবসার্ড"
আমি যখন এই প্রচণ্ড শীতে লেপের নীচে ওম খুজি, দোস্ত তুই লাশ কাটা ঘরে শুয়ে আছিস। তোর কাছে এখন শীত নেই, তোর কাছে এখন গরমের কোন অনুভুতি নেই।
এক সাথে কতটা বছর কাটাইসি দোস্ত। কত কিছু শেয়ার করসি।
দোস্ত, মৃত্যু যন্ত্রণা কেমন রে দোস্ত??
বান্দরবন যাওয়ার সময় তোরে জিজ্ঞেস করসিলাম, "বার বার অইখানে যাস কেন?" বলসিলি," আরে বেডা অইখানে গেলে আমার শান্তি লাগে।
"
আমি বলতাম," জি আর ই তো ফাডাইসস, এখন বান্দরবন গিয়া আমেরিকা কেমনে থাকবি সেই প্র্যাকটিস কর। "
মুগ্ধ হাসে।
আমি বলতাম, দোস্ত আমি তো ঢাকা আইতাসি, কিন্তু তুই তো হালা থাকবি না।
মুগ্ধ কইত,"ক্যা?"
বলতাম "আমেরিকা জাইবিগা হালা, আবার ভাব মারস?"
দোস্ত কীভাবে সবাইকে ফালায়া চলে গেলি রে? না ফেরার দেশে।
তোর সাথে প্রথম পরিচয়ের দিন তোরে দেইখা ভয় পাইসিলাম।
আমি গ্রামের থেকে আসছি। আর তুই নটরডেম, তাও ইংলিশ মিডিয়াম। মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি। লম্বা চুল। আমি ভাবলাম, খাইসে, কইত্থে আইল এই জিনিস?
তারপর আমি খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, তুই আমার সাথে এত বন্ধু সুলভ আচরন করলি, আমি মুহূর্তে তোর দোস্ত হয়া গেলাম।
সেই থেকে এক সাথে ছিলাম। সুখে দুঃখে সব সময়।
আজকে সবাইরে কাদায়া তুই চইলা গেলি?
শেষবার যখন ঢাকায় গেলাম, আমারে জি আর ই র সব নতুন বই কিনা দিলি। এখন কার লগে পরুম শালা?? কার ফোন দিয়া জিগামু কি পড়তে হইব??
তোরে কত নামে ডাকসি, তোর চুল দাড়ি নিয়া কত হাসা হাসি করসি। তোরে আমরা বলতাম 'হিদোনিসট' সুযোগ পাইলেই ঘুরতে জাইতি, সারক্ষন ফুর্তিতে থাকতি, গীটার গান বাজনা।
একি সাথে নামাজ, কোরান তেলাওয়াত, রোজা। তোরে আমরা মৌলানা বইলা পচাইতাম। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে সুরা ইয়াসিন পরতি। তোরে টাইনা নিয়া যাইতাম পরীক্ষা দিতে।
এত অল্প দিনের জন্য প্রিথিবিতে আইসস বইলা কি সব সময় এত আনন্দে থাকতি??
দোস্ত কালকে সবাই তোরে দেখতে যাইব, আমি কিন্তু আসব নারে।
তোর খত বিক্ষত মুখ আমি দেখতে পারব না। আমারে ক্ষমা করিস দোস্ত। তোর হাসি মুখ টা আমার হৃদয়ে চির অম্লান থাকুক। ।
বান্দরবন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।