...আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও লেখক সঞ্জিব দ্রং এই প্রতিবেদককে বলেন, "আদিবাসী সম্পর্কে বাংলাপিডিয়ার কোনো তথ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে নানান বিকৃত তথ্য দিয়ে বাংলাদেশর প্রায় 30 লাখ আদিবাসীকে অপমান করা হয়েছে। পাশাপাশি শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়নি তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে। এই গ্রন্থের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে-- আদিবাসীরা অসভ্য, জংলী ও নরমাংসভোজী!"
পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা রূপায়ণ দেওয়ান বলেন, "বাংলাপিডিয়ায় 'আদিবাসী' --এর পরিবর্তে 'উপজাতি' শব্দটি ব্যবহার করে সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বার প্রতি অবজ্ঞা ও উদাসীনতা দেখানো হয়েছে। "
তিনি বলেন, "এতে অনেক ভুল, দুর্বল ও অপমানজনক তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসও যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি। বংশপরম্পরায় যুদ্ধবিধ্বস্ত পাহাড়ের রক্তাক্ত স্মৃতি বহনকারী আদিবাসী মানুষের কথা উল্লেখ নেই। প্রায় 70 হাজার পাহাড়ি শরণার্থীর গ্ল্লানিময় জীবনের কথাও নেই গ্রন্থটিতে। কাপ্তাই লেকের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগলিক পরিবর্তন ও জনজীবনের দুর্ভোগের কথাও নেই সেখানে। ''
রূপায়ণ দেওয়ান বলেন, ''শান্তিচুক্তি স্বারের নয় বছর পরও এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলের জনজীবন যে আরো সংকুচিত হয়ে পড়েছে, বাংলাপিডিয়া পাঠ করলে তার কিছুই জানা যাবে না।
"
গারো আদিবাসী নেতা ও লেখক বাঁধন আরেং বলেন, "গারোদের সম্পর্কে ওই গ্রন্থে ব্যাপক তথ্য বিকৃতি রয়েছে। গারোদের খাদ্যাভাস, বর্ণমালা, জীবনাচার সম্পর্কে যা কিছু বলা হয়েছে, তার অধিকাংশই ভুল। "
তিনি বলেন, "বন উজার হওয়ার কারণে প্রায় 20 বছর আগেই গারোরা জুম চাষ বন্ধ করেছে। বন না থাকায় শিকারও এখন হয় না। শিক্ষিত -- অশিক্ষিত সব গারোই পেশা পরিবর্তন করেছে।
এছাড়া শুধু গারো বা খাসিয়ারা নন, এ দেশের সব আদিবাসীই দ্বিভাষী, তাদের পোষাকি ভাষা হচ্ছে বাংলা। "
খাসিয়া আদিবাসী নেতা অনিল ইয়াং ইউম বলেন, "খাসি নারীর বহুপতি সম্পর্কিত তথ্য একেবারেই ভুল। বন ও বনভূমি সংকুচিত হওয়ায় আদিবাসী জীবনে সৃষ্ট দুর্ভোগের কোনো কথাই ওই গ্রন্থে বলা হয়নি। "
ত্রিপুরা নেতা বিনতাময় ধামাই বলেন,"ত্রিপুরা ভাষা মোটেই বিলুপ্ত হয়নি। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষা ও কর্মজীবনের প্রয়োজনে আমরা কেবল বাংলা ব্যবহার করছি।
"
তিনি বলেন,"ত্রিপুরাদের ব্যবহারিক বর্ণমালার সঙ্গে চাকমা বর্ণমালার কোনো মিলই নেই। নিজস্ব বর্ণমালা না থাকায় বহু বছর ধরে আমরা রোমান বা ইংরেজি হরফে নিজস্ব ভাষা চর্চা করছি। "
ম্রো আদিবাসী নেতা রাংলাই ম্রো বলেন, "বাংলাপিডিয়ায় আমাদের 'মুরং' বলে হেয় করা হয়েছে। ম্রোদের 'ক্রামা' নামে নিজস্ব ধর্ম ও বর্ণমালা আছে। আমরা ম্রো বর্ণমালার কম্পিউটার সফটওয়ারও তৈরির চেষ্টা করছি।
"
তিনি বলেন, "ম্রো সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে যেসব তথ্য বাংলাপিডিয়ায় আছে-- সেগুলো হয় বিভ্রান্তিকর, নয়ত 100 বছরের পুরনো জনজীবনের কথা। "
আদিবাসী সম্পর্কে বাংলাপিডিয়ায় এসব তথ্যবিভ্রান্তির কথা অকপটে স্বীকার করেছেন এর প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, "আদিবাসী নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা এরই মধ্যে এই বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। "
নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গীর সীমাবদ্ধতা তথ্য বিকৃতির একটি কারণ স্বীকার করে তিনি বলেন, "আমরা যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি, তারা মনে করি অন্য ুদ্র জাতিসত্তা মানেই অনগ্রর, আদিম ও অসভ্য। এ কারণে বাংলাপিডিয়ার মতো একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থে এসব মারাত্মক ত্রুটি রয়ে গেছে।
"
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন,"একটি জাতিসত্তা যতোই ছোট হোক না কেনো, তাদের ভাষা, বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, ঐতিহ্য-- সবই শ্রদ্ধার চোখে দেখতে হবে। বাংলাপিডিয়ার নানা খণ্ডে এই দৃষ্টিভঙ্গীর প্রকাশ ঘটেনি। "
তিনি জানান, জ্ঞানকোষের দ্বিতীয় সংস্করণে আদিবাসী সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য বাদ দিয়ে তা নতুন করে সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবার আদিবাসী লেখক ও গবেষকদের দেওয়া হবে এই কাজ। আর তা সম্পাদনা করবেন নৃতত্ত্বের একজন গবেষক।
বিভ্রান্তি ও তথ্য বিকৃতি এড়াতে তথ্যগুলা প্রকাশের আগে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতাদের মতামতও নেওয়া হবে। #
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।