আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের আদিবাসী

বাঙ্গালী জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠে-অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে । জাতি হিসাবে আমরা এক জাতি, বাংলাদেশী, বাঙ্গালী । বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষা সংখ্যা হচ্ছে ২৬টি। যদিও একটি ওয়েবসাইটে বাংলাসহ মোট ৩৭টি ভাষার নাম উলেখ করা হয়েছে। রাখাইনরা নিজেদের উপজাতি মনে করে না।

তারা ধর্মীয়ভাবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। জুলাই থেকে প্রায় তিন মাসব্যাপী প্রতি শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবাগানে বৃষ্টিতে ভিজে এ উৎসব পালন করে রাখাইনরা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অর্থাৎ রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, ঠাকুরগাঁ প্রভৃতি অঞ্চলে দুই লক্ষাধিক সাঁওতাল বসবাস করে। তবে ভারত, বাংলাদেশ এবং নেপাল মিলিয়ে পৃথিবীতে ৫২ লক্ষ লোক সাঁওতালি ভাষায় কথা বলে। হাজার হাজার বছর ধরে বংশ পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসা এই সাঁওতালি ভাষার কোন নিজস্ব বর্ণমালা নেই।

বাংলাদেশে মোট উপজাতির জনসংখ্যা ১৫ লক্ষ ৫হাজার ৯৭৮ জন । পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী চাকমা। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধেও পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের বসবাসের নজির আছে। ১৫৬১ সালে এক ইওরোপিয়ানের আকা ছবি থেকে বাংলার যে মানচিত্র পাওয়া যায় সেখানেও চাকমাদের অবস্থানের প্রমাণ আছে। চাকমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বিজু।

বাংলা বছরের শেষ দুদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব পালন করা হয়। এক সময় জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল এ জনগোষ্ঠী এখন নিজ প্রচেষ্টা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্রসর আদিবাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে তাই সহজেই বিশেষভাবে পরিচিত চাকমারা। পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ও মধ্য-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় বসবাস পাংখোয়াদের। পাংখোয়ারা ১৫টি গোত্রে বিভক্ত।

পাংখোয়ারা প্রায় সবাই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। আগে তারা প্রকৃতি পূজারী ছিল। তারা জুম চাষের পরিবর্তে লাঙল চাষ, কমলালেবু চাষ ও কলা চাষ করে থাকে। এছাড়া হস্তশিল্প, পশুপালন ও শিকার বেশ প্রসিদ্ধ। উপজাতিরা বেশির ভাগই কোন সনাতন ধর্মের ।

ত্রিপুরারা মূলত ভারতের ত্রিপুরা’র বাসিন্দা, তাদেরই অপভ্রংশ হলো বাংলাদেশের ত্রিপুরা উপজাতি, যাদের একটা বৃহৎ অংশের বাস কুমিল্লায়, এছাড়াও রয়েছেন সিলেট আর এই চট্টগ্রামে। বৃটিশ উপনিবেশ শক্তির বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র সংগ্রাম, সে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন এ ভূখন্ডের আদিবাসীরা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এদেশের আদিবাসীদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কক্সবাজারে রাখাইনরা প্রথম আসে ১৭৯৭ সালে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে। জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়ে তারা মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশ থেকে কক্সবাজারে এলে তৎকালীন বৃটিশ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স তাদের এখানে পুনর্বাসিত করেন।

এ সময় এখানে একটি বাজারও প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকেই এ পর্যটন নগরীর নাম কক্সবাজার হয়ে যায়। এর আগে কক্সবাজারকে প্যানোয়া বা পালংক্যি নামে ডাকা হতো। বাংলাদেশের উপজাতি গুলো হলো- ওঁরাও, খাসিয়া বা খাসি, খুমি, গারো, চাকমা, টিপরা, পাংখো পাংগোন, মগ, মণিপুরী, মুরং, রাজবংশী, সাঁওতাল এবং হাজং । চাকমারা আদি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।

তবে তারা বৌদ্ধ হলেও কেউ কেউ আবার প্রকৃতি পূজারীও। চাকমারা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্ত-সংলগ্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মঙ্গোলয়েড খাসিয়া জাতির ভাষা। বর্তমানে খাসিয়া জনসংখ্যা প্রায় ১২,২৮০ জন। ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষ লোক খাসি ভাষায় কথা বলে।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, মধুপুর গারো পাহাড় সংলগ্ন ও সিলেট অঞ্চলে মান্দিদের (গারো) বসবাস। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ধারক ও বাহক এই মান্দি জাতির স্বীকৃত ভাষার নাম ‘আচিক বা মান্দি ভাষা’। মারমা সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। পুরুষদের মতো মেয়েরাও পৈতৃক সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকারী হয়। বান্দরবানে মারমা লোকসংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি।

শিক্ষাদীক্ষা ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মারমারা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী গারো ও সাঁওতাল আদিবাসীর সংখ্যা দুই হাজার দু'শ' জন, যুদ্ধে শহীদ আদিবাসীর সংখ্যা কয়েকশ'। রংপুরের উপকণ্ঠে পাকসেনাদের হাতে নিহত আদিবাসী সাঁওতালদের সংখ্যা দু'শ' জন বলে উল্লেখ রয়েছে ১৫ খন্ডের স্বাধীনতার ইতিহাস গ্রন্হে। মহাজোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে অংশগ্রহণ করতেন। আদিবাসীদের মিছিলে প্রথম সারিতে থাকতেন।

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে আদিবাসী ও ট্রাইবেল (ট্রাইবেল মানে উপজাতি নয়) বিষয়ক আইএলও কনভেনশন- ১০৭ অনুস্বাক্ষর করেছিলেন। শেখ মুজিব কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণা বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করেছেন । পৃথিবীর ৭০টির বেশি দেশে প্রায় ৫ হাজারটি জাতিগোষ্ঠীর ৩০ কোটির অধিক আদিবাসী রয়েছে। কিন্তু আদিবাসীদের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করেন আদিবাসীসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বুদ্ধিজীবীরা।

আদিবাসীরা এমন একটি এলাকায় বসবাস করে, যাতে খাদ্য সংগ্রহ শেষে ওই নির্দিষ্ট এলাকাতেই ফিরে আসতে পারে। আদিবাসীরা একই সংস্কৃতি ঐতিহ্যের অধিকারী। ত্রিপুরা জাতির ভাষার নাম ককবোরক যার অর্থ মানুষের ভাষা। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসরত প্রায় দশ লক্ষ ত্রিপুরা ককবরক ভাষায় কথা বলে। পাহাড়ের পাদদেশে বিভিন্ন টিলা এলাকায় তাদের বসবাস।

দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করলেও তারা অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের অন্যতম অংশ হলো পাত্র। সিলেট জেলার সদর ও গোয়াইনঘাট থানাদ্বয়ের অন্তর্ভুক্ত ২৩ গ্রামে প্রায় ৪০২টি পরিবারের ২০৩৩ জন আদিবাসী পাত্র সম্প্রদায়ের বসবাস। পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ছাড়াও কুমিল্লা, চাদপুর, চট্টগ্রামের সীতাকু-, মিরসরাই, ফটিকছড়ি, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এলাকায় ত্রিপুরাদের বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় ত্রিপুরা আদিবাসীর সংখ্যা বেশি।

তারা এ অঞ্চলে এসেছে তিব্বত থেকে। পাহাড় ও নদীর আশপাশের ছোট গ্রামগুলো যাদের পদচারণায় মুখরিত তারা আদিবাসী জনগোষ্ঠী হাজং নামে পরিচিত। নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে প্রায় সাড়ে আট হাজার হাজং পরিবার বসবাস করে। হাজং ভাষার সঙ্গে পালি ভাষার মিল আছে। আবার অনেকে বলেন, হাজং ভাষা তিব্বতি ও বর্মি ভাষা থেকে এসেছে।

বাংলা ভাষার সঙ্গে হাজং ভাষার মিল আছে। হাজং ভাষার কোনো লিখিত বর্ণমালা নেই। সনাতন বা হিন্দু ধর্মের অনুসারী বলে হাজং নারীরা কপালে ও সিথিতে সিদুর পরেন। কৃষির মূল কাজ মেয়েরাই করে। জমিতে ফসল লাগানো, সময় মতো ফসল কাটা এবং এ ফসল মাড়াই করার পুরো কাজটাই মেয়েরা দক্ষতার সঙ্গে করে থাকে।

জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করাও হাজংদের অন্যতম জীবিকা। বান্দরবানের এক দরিদ্র পল্লী লাঙ্গিপাড়ায় বসবাসরত বর্তমানে ইউ কে চিং মারমা। এই হলো আমাদের স্বাধীন দেশের একজন খেতাবপ্রাপ্ত স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধ । আয়রে করম রাজা ঘর দুয়ারে/কালরে করম রাজা সাত নদীর পারে। বুনোরা এ গানের সঙ্গে নৃত্য করে।

করম পূজার নাচ-গান মাতিয়ে রাখে সারা বুনোপাড়া। বুনোদের সবচেয়ে খুশির উৎসব করম পূজা। করম পূজাকে ঘিরেই তারা আগামীর স্বপ্ন নির্মাণ করে। বুনোদের অন্যতম কাজ ছিল দলবদ্ধভাবে শিকার করা। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে গেলে, ফিরে যাওয়া সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর অসন্তোষ ও হতাশা লাঘব করা সম্ভব হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.