আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সেনাপ্রধানকে উৎসর্গকরে লেখা

এ লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আমার যুদ্ধাপরাধ

বিচার বিভাগ এবং মিডিয়াকে ক্ষেপিয়ে এখন বেশ বিপাকে আছেন পাকিস্তানি সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ। স্বভাবতই সেনা নায়ক হওয়ার কারণে গণতন্ত্রের প্রতি তার আস্থা কম_ নিজের মানদণ্ড দিয়েই জনসমর্থন মাপতে ভালো বাসেন তিনি। গত বছর বিবিসিকে দেয়া এক সাাৎকারে মোশাররফ বলেছিলেন, এখনো তার জনসমর্থন তুঙ্গে। যেদিন তিনি জানবেন, তিনি জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন_ সেদিনই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি। এ সামরিক শাসক বিবিসিকে আরো বলেছিলেন, জনপ্রিয়তা হারালে জনগণই রাস্তায় নেমে আসবে এবং তাকে উৎখাত করবে।

মাস খানেক ধরে ইসলামাবাদ, লাহোর বা করাচির জনপথে আমরা সেই দৃশ্যই দেখছি। লন্ডন ও ওয়াশিংটনের স্নেহাসঙ্দ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জনগণ প্রকাশ্যে মিছিল করছে। তবু মোশাররফের সরে দাঁড়ানোর কোনো লণ আমরা দেখছি না। 9 মার্চ প্রধান বিচারপতিকে বরখাস্তের মধ্য দিয়ে পকিস্তানে এ নতুন টানাপোড়েনের শুরু। প্রধান বিচারপতি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করার পরপরই আদালত অঙ্গণে প্রতিবাদ শুরু হলো।

আইনজীবীরা ধর্মঘট, আদালত বর্জন ও রাজপথে বিােভ প্রদর্শন করতে শুরু করলেন। মোশাররফবিরোধী বিােভ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লো। সুশীল সমাজ এবং বিরোধী দলগুলো এ বিােভ সমর্থন করলে তা' যেন ফুঁসে উঠল। টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং লাঠি চার্জের মাধ্যমে পুলিশ এর প্রতিক্রিয়াও জানালো। এবং এ দৃশ্য কাভার করতে গিয়ে সামরিক সরকারের তোপের মুখে পড়লো মিডিয়া।

জিও টিভির অফিসে হামলা চালিয়ে সাংবাদিকদের মারধর করেছে পুলিশ। এ সময় অফিস ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। আজ টিভির সমঙ্্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের রিপোর্টিংয়ের ওপর সরকারি কর্মকর্তাদের কড়া নজরদারি রয়েছে এখনো। দুর্বল গণতন্ত্রের উপজাত হিসেবে নির্গত স্বেচ্ছাচারিতার বিরোধিতার দোহাই দিয়ে 1999 সালের অক্টোবরে ক্ষমতা দখল করেন পারভেজ মোশাররফ।

তার অসাধারণ কথাবার্তায় অনেক পাকিস্তানিই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন_ নওয়াজ শরিফ ও বেনজির ভুট্টোর নির্বাচিত সরকারের আমলে সংগঠিত দুর্নীতি, কুশাসন এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ত্রাণকর্তা হিসেবেই ভেবেছিলেন মোশাররফকে। ফের আশাভঙ্গ হলো পাকিস ানিদের। মোশাররফের আমলে ধনী ও গরিবের ব্যবধান আরো বাড়তে থাকলো। সব ধরনের রাষ্ট্রীয় মতা একে একে দখল করতে থাকলো ইউনিফর্মধারীরা। হরতাল, বিােভ থেকে শুরু করে যে কোনো ধরনের জন সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলো।

বুশ-ব্লেয়ারের সঙ্গে সুসমঙ্র্কের কারণেই দেশে জনপ্রিয়তা হারালেও বহাল তবিয়তে আছেন এ স্বৈর শাসক। তবে বিচার ব্যবস্থা এবং মিডিয়ার ওপর এ নগ্ন হস্তক্ষেপ তাকে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে। জনগণের আন্দোলন আরো তীব্রতর হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি আরো জোরালো হচ্ছে। হয়তো একটি পরিছন্ন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে তার রাজত্বের পতন ঘটবে।

(আজ গার্ডিয়ানে প্রকাশিত পাকিস্তানি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওমর ওয়ারাইচের লেখা অবলম্বনে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।