সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
সালাম বম্বে ও মুনসুন ওয়েডিং খ্যাত পরিচালক মিরা নায়ার এবার তৈরি করলেন নেমসেক। বাঙালি বংশোদ্ভূত লেখক ঝুম্পা লাহিড়ি এ উপন্যাসটির জন্যই পুলিটজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। এতে আছে কলকাতা থেকে নিউ ইয়র্কে মাইগ্রেট করা দম্পতি আশোক ও অসীমার কাহিনী। আমেরিকান ডৃমের স্বপ্নে 30 বছর পার করার পরও এ দম্পতির জীবনে পুরনো মূল্যবোধ ও নতুন পৃথিবীর সংঘর্ষ থেকেই যায়।
অন্যদিকে তাদেরই সনত্দান গোগোল নিজেকে খুজে পায় আমেরিকান আইডেন্টিটির ভেতর। ইরফান খান, টাবু, কাল পেন অভিনীত মুভিটি ইতিমধ্যেই বিশেষ সাড়া ফেলেছে। মুভি নিয়ে নিউজউইক ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলেছেন মিরা নায়ার।
নেমসেক কি নিয়ে তৈরি?
এটা মা ও ছেলেদের কাহিনী। আমারও একটি টিনএজ ছেলে আছে।
আমি নিজের অভিজ্ঞতাকেই মুভিতে রূপায়িত করেছি। কিন্তু যে জিনিসটা আমাকে মুভি তৈরিতে উৎসাহ দিয়েছে তা হলো বঞ্চনা। এমন একটি দেশে বাবা-মাকে হারানো যা সম্পূর্ণ নিজের নয়। প্রথম বারের মতো মৃতু্যর অভিজ্ঞতা লাভ করা।
এটা বাড়ির গল্পও।
আপনার নিজের বাড়িটা কোথায়? আপনার তো দিলি্ল, নিউ ইয়র্ক, আফৃকায়... বাড়ি আছে।
নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর বিলাসের মধ্যে কিছু সুবিধা আছে। আমার বাড়ি সেখানেই যেখানে আমার পরিবার থাকে। আমি বাড়ি বানিয়েছি বসবাসের জন্য, খোলা জায়গায় নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য আর আশ্রয়ের জন্য। আমরা ম্যানহাটানে থাকি।
আমার ছেলের স্কুল শেষ হলে আমরা ইউগান্ডার কামপালা যাই, সেখানে তিন মাস থাকি। একইভাবে আমার মুভি ও পরিবার প্রতি বছর আমাকে ইনডিয়ায় নিয়ে যায়। শুরুতে এক জায়গার জন্য আরেক জায়গা ছাড়ার ব্যাপারটা আমার জন্য বিভ্রানত্দিকর ছিল। কিন্তু আমি এ বিভ্রানত্দিটা মুভিতে ব্যবহার করার পর দেখলাম জীবনের অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমার যা নেই তার জন্য আমি এখন হা হুতাশ করি না।
আমি প্রত্যেক জায়গায়ই পরিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করতে শুরম্ন করেছি।
সিনেমাটি নিয়ে আপনার কি স্বপ্ন ছিল?
আমি একটি গভীর ও অপূর্ব প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমকাহিনী বানাতে চেয়েছি। গোগোলের বাবা-মার প্রেম কাহিনী এমনই যে, আমি সচরাচর এ রকম দেখি না। এটা নীরবতার গল্প। কিচেন টেবিলে এক কাপ চা দু'জনে শেয়ার করা, পরস্পরকে দেখার গল্প।
সঙ্গ কাকে বলে ও অংশীদারিত্বের কৃৎকৌশল বলতে যা বোঝায় তার কাহিনী। তরম্নণদের গোলাপ, হিরা, হলমার্কের কার্ড, আই লাভ ইউর ব্যাপার নয়। মুভির দুটি খুটি হলো এ প্রাপ্তবয়স্ক প্রেম আর গোগোলের মানুষ হয়ে ওঠা। এমনকি ম্যানহাটানেও আমি তিন প্রজন্মের সঙ্গে বাস করি। আমার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে থাকাটা আমার জন্য আনন্দদায়ক।
কিন্তু আমেরিকা নিজেকে বার্ধক্যের প্রজ্ঞা থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছি।
ইনডিয়ান-আমেরিকানদের জীবন সম্পর্কে আপনার ধারণা কতোটা বাসতব?
1979 সালে আমি যখন নিউ ইয়র্ক যাই তখন লোকে ইনডিয়া প্রায় চিনতোই না। খুব ভয়ঙ্কর একাকী সময় ছিল সেটা। আমি এখন ইন্টারনেটে কিক করলেই দক্ষিণ এশিয়ান নাট্যকার, পাঠচক্র, ফিল্ম ফেস্টিভাল_ সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির পুরো একটা উপরিকাঠমোই দেখতে পাই।
ঝুম্পা লাহিড়ি ও আমার জগৎ কসমোপলিটান। আমরা শিল্প, কলেজ নেটওয়ার্ক, প্রতিবাদ ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত। গোগোলের মাধ্যমে মুভিটিতে কলকাতা ও ম্যানহাটানের সমন্বয় ঘটেছে। সত্তরের দশকের যে কলকাতা আমি ভালোবাসতাম আর ম্যানহাটানের সেই সঙ্গীত, ফ্যাশন, মানুষ যারা রাসতায় বারে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তার মানে মুভিটি দুই শহরের কাহিনী?
কলকাতা আমার জন্য বিশেষ এক শহর।
এ শহরের তিনশ' মাইল দক্ষিণে আমি বেড়ে উঠেছি। গ্রীষ্মের ছুটিগুলো সেখানে কাটিয়েছি। আমি পরে যা হয়েছি তার অনেক কিছুই সেখানে শেখা। সেখানেই আমি প্রথম রাজনৈতিক পথনাটক পেয়েছি। প্রথম মুভি দেখেছি।
মহান বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের দেখা পেয়েছি। 18 বছর বয়সে আমি ক্যামবৃজে এসেছি যেখানে নেমসেকের সূচনা। তারপর আমি নিউ ইয়র্কে গিয়েছি। মুভিটি ওই দুই শহর নিয়ে যেখানে আমি শিখেছি, বড় হয়েছি আর দেখেছি। আমি এ দুই শহরকে এমনভাবে চলচ্চিত্রায়িত করেছি যেন সেগুলো একটা শহর।
কারণ আমি বিশ্বাস করি, কলকাতা আর ম্যানহাটানের মধ্যে অনেক মিল আছে। এটাই হলো বয়নের সূত্র। দর্শককে ধারণা দেয়া যে, দুই পৃথিবীতে বাস করাটা কেমন হতে পারে। কখনো কখনো আমরা জানি না, আমরা নিউ ইয়র্ক না কলকাতায় আছি।
(সংক্ষেপিত)
অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।