ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ
বসন্ত বাতাস/ শেখ জলিল
1.
দুরন্ত প্রেমের এক কৈশোর সন্ধ্যা। দু'জনে মুখোমুখি। চুপিসারে চার চোখের মিলন। ভালোলাগা, ভালোবাসার ঢেউ দু'জনার অন্তরে। সহসা লোডশেডিং, ঘরময় অন্ধকার।
কমলাকোষ অধরের টান, দু'ঠোঁটের সশব্দ মিলন। প্রকম্পিত দুই হৃদয়, কেঁপে ওঠে চারদিক। শব্দ পেঁৗছে যায় অনতিদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির মায়ের কানে।
মেয়েটির বয়স 14, দেহে কিশোরী বাতাসের উচ্ছাস। ছেলেটির বয়স 18, সদ্য যৌবনের দুরন্ত আভাস।
ছেলেটি মেয়েটির প্রাইভেট টিউটর। কিশোর বয়সের প্রথম প্রেমের পাঠ ছাত্রীর- শিক্ষকের মনেপ্রাণে বিশ্বাস। বাঁধভাঙা জোয়ারের ঢেউ লাগে স্রোতজাগা স্বপ্নের নদীতে।
ফলাফল- ছেলেটির চাকরি নট। মেয়ের মায়ের কঠোর নিষেধ।
ছেলেটি মাড়াবে না তার বাড়ির আঙিনা। নিজের মেয়েও খেলো দু'চারটে চড়-থাপ্পড়। তারপর মাঝে দেয়াল, অাঁটসাঁট কঠোর শৃঙ্খল। দু'জনার দু'দিকে পথ, পড়াশোনায় যথারীতি মনোনিবেশ। তবে হাল ছাড়লো না ছেলেটি।
মাঝে মাঝে মেয়েটির খোঁজ নিতে চেষ্টা করে সে ।
2.
দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। চলতে থাকে ছেলেটির পড়াশুনা। মাঝে মাঝে মনে উঁকি দেয় প্রথম প্রেমের অনাবিল স্বপ্ন। সে স্বপ্ন ভেঙে যাবার নয়।
চলতে থাকে মেয়েটির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা। পরিচয় হয় একই কলেজের এক ষোড়শীর সাথে। ষোড়শীর অন্তরের আকুতি তাকে প্রেমিক হিসেবে পাবার স্বপ্ন বুঝতে পারে না ছেলেটি। তাকে জিজ্ঞেস করে তার প্রথম প্রেমের স্বপ্নরানীর কথা। ষোড়শীর কলেজেই পড়ে সে।
ষোড়শী খোঁজ দেবে বলে মেয়েটির নাম-ঠিকানা নেয়।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ছেলেটির। তার প্রথম প্রেম তাকে নাকি চেনে না। সোজাসুজি অস্বীকার করে। প্রত্যাখান করে তার প্রথম ভালোবাসার কথা।
এর বেশ কিছুদিন পর ষোড়শী খবর দেয় এইচএসসি-তে মেয়েটি ফেল করেছে। ছেলেটির প্রথম প্রেম খুব ভালো ছাত্রী ছিলো। ছেলেটির আশা ছিলো বড়ো হয়ে সে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। তাই এ খবরে সে ভীষণ আশাহত হয়।
3.
ছেলেটি বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছে।
ঢাকা কলেজে সিট পড়েছে। পরীক্ষা শেষে দেখা হয় তারই প্রথম প্রেমের বড়ো ভাই পিয়ালের সাথে। পিয়ালের কাছে জানতে পারে- তার প্রথম প্রেম এ বছর এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে। খুব আশ্চর্য হয় সে। তবে কী ষোড়শী মিথ্যা বলেছিলো? কী ছিলো তার দূরভিসন্ধি? ধীরে ধীরে সবকিছু পরিষ্কার হয় তার।
সে সময়ের ষোড়শীর চোখমুখ ভেসে ওঠে মনে। প্রেমে হারার এ এক প্রতিহিংসার আঘাত!
4.
ছেলেটি বসন্ত ভালোবাসে। ভালোবাসে বসন্তের ফুল শিমুলকে। টকটকে লাল রঙ তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। প্রতিবার বসন্ত বাতাস তার ভেতরটা দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে দিয়ে যায়।
চেয়ে দেখে সে শিমুল, পলাশ কিংবা মান্দারের কলি। বুকের ভেতরের হা-হুতাশ আরও পাগলপারা করে তাকে। এক বিরহ ব্যথা আনে তার হৃদয়ে বিনাশ।
ছেলেটির মনে পড়ে তার ছোটোবেলার কথা। শিমুল কাঁটা তুলে পাটায় ঘষে ব্লেড দিয়ে কেটে সিলমোহর বানানোর কথা।
নিজের বা প্রিয়জনের নাম লিখে সিল মারতো সে নিজের খাতায়। অথচ কী আশ্চর্য! বসন্ত এলে সে শিমুল গাছের কাঁটাই এখন তাকে রাতদিন বিদ্ধ করে। সিল বানিয়ে কোনোদিন তাকে বুকের খাতায় ছাপ দিতে পারে না! প্রথম প্রেমের সেই বিরহ দেয় তাকে প্রচন্ড আঘাত। ছুটে চলে বসন্ত বাতাস।
16.02.2007
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।