আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেজাকুল হায়দার চৌধুরী : কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

মেজর জেনারেল (অব.) রেজাকুল হায়দার চৌধুরী। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান। তার সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জানা গেছে, তারই পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ সহায়তায় আসামের জঙ্গিবাদী সংগঠন উলফার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা 21 আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলা করেছিল।

হামলাকারীদের অন্যতম উলফার অধিনায়ক পল্লব সাইকিয়া গ্রেফতারের পর আসাম রাজ্য পুলিশের কাছে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিকল্পনা ও সহায়তায় উলফার আত্দঘাতী স্কোয়াডের 11 জন সদস্য 21 আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় বলে তারা স্বীকার করেছে। পল্টনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় 23 জন নিহত হওয়ার পর থেকেই অভিযোগ পাওয়া যা"িছল, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদেই গোয়েন্দা সহায়তায় এ হামলা চালানো হয়েছিল। বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ 24.কম, এএফপি ও বিভিন্ন আন-র্জাতিক মিডিয়া থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অভিযোগ পাওয়া যা"িছল, এনএসআইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠন জেএমবি (জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) সৃষ্টি ও এর উত্থান ঘটিয়ে দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।

ভারতের আসামের চিহ্নিত উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) প্রধান বাংলাদেশের জেলখানায় আটক অনুপ চেটিয়ার সহায়তায় গোয়েন্দারা এ হামলার পরিকল্পনা ও বাস-বায়ন করে বলে রাজ্য পুলিশের কাছে তথ্য দেয়া হয়েছে। এ হামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও মারাত্দকভাবে আহত হন এবং অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা বেগম আইভী রহমানসহ 23 জন নেতাকমর্ী প্রাণ হারান। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন দু'শতাধিক নারী-পুর"ষ। সদ্য বিদায়ী এনএসআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজাকুল হায়দার চৌধুরীর বির"দ্ধে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ও সহায়তা, জঙ্গি মদদ, আওয়ামী লীগসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকমর্ীদের হয়রানি ও নির্যাতন এবং বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস-বায়নের গুর"তর অভিযোগ ছিল।

এছাড়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সৃষ্টি এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাদের মাধ্যমে জেএমবির অর্থ সহায়তা ও বিকাশে তার গুর"ত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অভিযোগ আছে, সারাদেশে একযোগে জেএমবির বোমা হামলা সম্পর্কে আগাম সুনির্দিষ্ট খবর থাকার পরও জেনারেল চৌধুরী কোন পদক্ষেপ নেননি। শুধু তাই নয়, এনএসআইয়ের ডিজি হওয়ার পর থেকেই তিনি হাওয়া ভবনের পরিকল্পনা ও নীলনকশা অনুযায়ী সব কাজ করেছেন। 11 জানুয়ারি দেশে জর"রি অবস্থা ঘোষণার পরপরই মে. জে. রেজাকুল হায়দার চৌধুরীর অতীত কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে এনএসআইয়ের মহাপরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ওইদিনই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে খালেকুজ্জামান খান লোদীকে নতুন ডিজি করা হয়।

রেজাকুল হায়দার চৌধুরীর উলি্লখিত রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বদলির মাত্র 5 দিনের মাথায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরও প্রদান করা হয়। শনিবার রাতে আসাম রাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া উলফার অধিনায়ক পল্লব সাইকিয়ার জবানবন্দির মধ্য দিয়ে রেজাকুল হায়দার চৌধুরীর অতীত কার্যকলাপ আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। সূত্র জানায়, আসাম রাজ্য পুলিশের কাছে পল্লব সাইকিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের কারাগারে আটক উলফা প্রধান অনুপ চেটিয়ার গোপন নির্দেশ অনুযায়ী তিনিসহ উলফার 11 জন সশস্ত্র সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য কুমিল্লার একটি সীমান-ে হাজির হন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন উ"চ পর্যায়ের কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি নিয়ে তাদের সীমান- থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের ঢাকার গুলশানের একটি দোতলা বাড়িতে নিয়ে যান।

ওই বাড়িতেই এনএসআইয়ের মহাপরিচালক পরিচয়ের এক আর্মি জেনারেল উলফার আঞ্চলিক প্রধান পরেশ বড়-য়ার সঙ্গে পরামর্শ ও পরিকল্পনা করে 21 আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য তাদের নির্দেশ দেন। আঞ্চলিক প্রধান পরেশ বড়-য়া তাকে (পল্লবকে) এ হামলার অধিনায়ক মনোনীত করে 2004 সালের 26 জুলাই পরিকল্পনা চূড়ান- করে। অধিনায়ক হওয়ার পর তিনিসহ উলফার 11 জন সুইসাইড স্কোয়াডের কমান্ডো নিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সহায়তায় পল্টনের আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় যেসব গ্রেনেড ও অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও গোয়েন্দারা ঘটনার দিন সকালে গাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় এবং সরবরাহ করে। যে 11 জন সুইসাইড স্কোয়াড সদস্য এ অভিযানে অংশ নেয় তাদের 4 জনের ইতিমধ্যেই মৃতু্য হয়েছে।

পল্লব সাইকিয়া পুলিশকে হামলায় অংশ নেয়া সবার নাম উল্লেখ করে বলেন, তার অধিনায়কত্বে যিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন তার নাম র"বেল। এই র"বেল আসামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি সম্মুখ হামলায় গত বছরের জুন মাসে নিহত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কড়া পুলিশ প্রহরার মধ্যে শেখ হাসিনার সমাবেশে এই গ্রেনেড হামলার পর বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বেই তোলপাড় শুর" হয়। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকে এ হামলার সঙ্গে জোট সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন। আবার কেউ কেউ সরকারি মদদে আন-র্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা বলেও দাবি করেন।

সেসময় সরকার একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় যে তদন- কমিশন গঠন করেছিল, তাদের রিপোর্টেও হামলার পেছনে আন-র্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের হাত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও নায়কদের আড়াল করার জন্য জোট সরকারের ওপর মহলের ইশারায়, এনএসআই প্রধান রেজাকুল হায়দার চৌধুরী ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে পুলিশ আওয়ামী লীগের রমনা এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মোখলেসুর রহমানসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশ প্রচার করে, মোখলেস স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেবে এবং 21 আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সেসহ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন বাহিনী জড়িত ছিল। এ কাহিনীর পর পুলিশের সোর্স নোয়াখালীর জনৈক জজ মিয়াকে দিয়ে 21 আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতৃবৃন্দ দায়ী বলেও একটি মিথ্যা ও প্রতারণামূলক স্বীকারোক্তির কথাও প্রচার করে পুলিশ। কিন' এসব কল্পকাহিনী দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় পরবতর্ী সময়ে উলি্লখিত চক্রের পরামর্শে পুলিশ হঠাৎ করেই প্রচার করে, হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নান 21 আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে।

কিন' মুফতি হান্নানের এ সংক্রান- কোন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করাতে পুলিশ ব্যর্থ হওয়ায় এই বানোয়াট গল্পও অবিশ্বাস্য প্রমাণিত হয়। 21 আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে জোট সরকার তথা পুলিশের পরপর তিনটি কল্পকাহিনী বানোয়াট ও কাল্পনিক প্রমাণিত ও মাঠে মারা যাওয়ার পর থেকে জোট সরকারের বিদায়ের আগ পর্যন- এ সম্পর্কে আর তারা কোন উ"চবাচ্য করেনি। তাদের এই নীরব ভূমিকার মধ্যেই লুকায়িত ছিল গ্রেনেড হামলার আসল কাহিনী। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এনএসআইয়ের সাবেক প্রধান মে. জে. রেজাকুল হায়দার চৌধুরী (অব.) সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে একটি অত্যন- স্পর্শকাতর সংস্থায় চাকরি করেও তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের সঙ্গে প্রচলিত সব নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে আমেরিকা সফরে যান।

তারেক রহমানের ব্যবসায়ী অংশীদার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু বহুল বিতর্কিত গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের নানা ব্যবসায়িক অপকর্মের তিনিই অন্যতম সহযোগী ছিলেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এহেন কার্যকলাপ তাকে শুধু বিতর্কিত ও প্রশ্নের সম্মুখীনই করেনি, দেশের সর্বো"চ গোয়েন্দা সংস্থার ভাবমূর্তিও মারাত্দকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বাস-বায়নেও তার গুর"ত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল। এসব নীলনকশা বাস-বায়নে আওয়ামী লীগ, এলডিপি ও জাতীয় পার্টিসহ মহাঐক্যজোটের অনেক প্রভাবশালী নেতাকেও তিনি বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি দিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা থেকে নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। চারদলীয় জোটের পরিকল্পনা বাস-বায়নে তিনি বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের বিভিন্ন নেতার নির্বাচনী এলাকায় গিয়েও প্রশাসনে অবৈধ প্রভাব বিস-ার করেছেন বলে জানা গেছে।

রেজাকুল হায়দার চৌধুরীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে 21 আগস্টের গ্রেনেড হামলা, 17 আগস্ট দেশজুড়ে জঙ্গিদের বোমা হামলা, বিএনপি-জামায়াতের সীমাহীন দুনর্ীতি ও দুনর্ীতিতে সহায়তার তথ্য উদঘাটনের জন্য দাবি জানিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ঐক্যমঞ্চ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এসব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন পৃথক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এনএসআইয়ের সদ্য বিদায়ী ডিজি মে. জে. রেজাকুল হায়দার চৌধুরী জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষ মদদদাতা। জামায়াত ও শিবির ক্যাডারদের প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি অত্যন- কৌশলে সবরকম কাজ করেছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।