স্মৃতিচারণ ও এলোমেলো ভাবনা। বেশিরভাগই জগাখিচুড়ি।
আমার ভ্রমনজনিত ব্যাপারে যাত্রী ভাগ্য বরাবরই খারাপ। অনেকেরই এ জাতীয় ব্যাপারে কপাল ঈর্ষনীয় থাকে। আমার স্কুলজীবনের বন্ধু সাম্মির সাফল্য এ ক্ষেত্রে ষোলআনা।
বছর সাতেক আগে সাম্মির সাথে বগুড়া থেকে ঢাকা আসছিলাম। ঈদের সময় দেখে পাশাপাশি সিট মিলে নি। কথা ছিল যেভাবেই হোক দু'জন পাশাপাশি সিট ম্যানেজ করে একসাথে যাব। ঘটনাক্রমে আমাদের পাশের 2 সিটের যাত্রী ছিলেন দুই ভাই-বোন। তাই আমরা কিছু বলার আগেই ভদ্্রলোক তার বোনকে সাম্মির পাশে বসিয়ে আমাকে অনুরোধ করেলেন, আমি যেন সাম্মির পাশে গিয়ে ব িস যাতে তারা ভাই-বোন এক সাথে যেতে পারেন।
আমি রাজি..মেঘ না চাইতেই জল।
কিন্তু বেঁকে বসল সাম্মি। সাম্মির এক কথা সে টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছে তার সিটে সে যাবে। আর এমনভাব করল আমাকে যেন সে চিনেই না। ততক্ষনে আমি ব্যাটার কুমতলব বুঝে গেছি, সে ভদ্্রলোকের সুন্দরী বোনের সাথে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমন করতে চায়।
আমিও সাম্মির সাথে কিছুক্ষন কপট চেঁচামেচি করে ভদ্্রলোককে বললাম " ভাই বাদ দেন। বুঝেনি তো দুনিয়াতে অনেকরকম ছাগল-পাগল আছে। " সাম্মি সাধারণত এ জাতীয় মন্তব্য পছন্দ করে না। কিন্তু পরিসিহতি বিবেচনা করে আমাকে সে যাত্রা আর কিছু বলে নি। এরপর ঐ মেয়ের সাথে সাম্মির কি কথা হয়েছিল তা আমার জানা নেই, তবে আমার জন্য অতি স্মরণীয় ভ্রমন ছিল সেটা।
ভদ্্রলোক সাম্মির সাথে আমার অসাধারণ ঝগড়াশৈলীতে মুগ্ধ হয়ে যাত্রাপথের যাবতীয় টুকটাক খরচ নিজ দায়িত্বে বহন করেছিলেন।
প্রথমবার দেশে যাচ্ছি বিদেশে আসার পর। মন খুবই প্রফুল্ল। থাই এয়ারে ঢুকে শান্তি পেলাম। কারন কিছুক্ষন পূর্বে ফেডারেল পুলিশ আমাকে সন্ত্রাসী সন্দেহ করে মানসিক অত্যাচার করেছে।
হ্যান্ড লাগেজ বাল্কে রেখে নির্ধারিত সিটে বসলাম। দেখি আমার পাশের 2 সিটে দুই ন্যাদা বাচ্চা। বুঝলাম যে তারপরের সিটে বসা অতিকায় মহিলাটি এই বাঁদরসম বাচ্চাগুলোর মা। মহিলার সাইজ আর চেহারা দেখে আমি কনফার্ম যে উনি বাংলাদেশী। এখানকার বেশিরভাগ বাংলাদেশী মহিলারা বাংলাদেশ থেকে আসার পরে 2/1 বছরের ভেতর ফুলে-ফেঁপে 3 থেকে 4 গুন হয়ে যান আর অজানা কারনে বাচ্চাদের সাথে ঘরে-বাইরে ইংরেজিতে কথা বলেন যা দেখে সহজেই এদের ভারতীয়দের থেকে আলাদা করা যায় ।
এটা খুবই বিতর্কিত বিষয় আর এর ব্যতিক্রমও আছে।
যাইহোক, আমি ভাবলাম এদের পিতৃদেব কোথায়?ফালতু চিন্তা না করে আমি আমার সি-অফকারী বন্ধুদের একটা ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানালাম। ফোন রেখে দেখি ভদ্্রলোক হাজির সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে। সাঙ্গ-পাঙ্গ মানে এয়ার হোস্টেজ আর ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট। কি ব্যাপার জিজ্ঞাসা করতে জানলাম উনারা পুরো পরিবার এ কসাথে সিট পান নি বিধায় আমার সাথে সিট বদল করতে চান।
আমি ঐ দিনও বুঝি নাই আজও বুঝি না নিজে এসে এই অনুরোধটা করলে কি হয়? খুব রাগ হলেও আমি অভদ্্রলোকটিকে কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নেই।
আমি এর আগেও যতবার বাংলাদেশ যাওয়া-আসা করেছি আমাকে এই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এবং বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশিদের কাছ থেকে। অজানা কারনে আমরা শেষ মুহুর্তে চেক ইন করি, পছন্দের সিট খুঁজি আবার লাগেজ নিয়ে সমস্যায় পড়ি। তখন বলি অমুক এয়ারলাইন্সের সার্ভিস খারাপ। 4 কেজি বেশি ওজন হওয়াতেও টাকা দিতে হয়েছে।
অথচ কয়েক ঘন্টা আগে আসলে কিন্তু এসব বিড়ম্বনা পোহাতে হয়না। একবার আমি 2 ঘন্টা আগে চেকইন করে উইন্ডো সিট নেবার পরেও ওই সিট ছেড়ে দিয়েছিলাম জনৈক বাংলাদেশি দমপতির কাছে। কারন ভদ্্রমহিলার বক্তব্য জানালার পাশে না বসলে নাকি তার বমি লাগে। সে যাত্রা অবশ্য ভদ্্রলোককে বলেছিলাম "এত সমস্যা আপনাদের ...তা আগে চেকইন করেন না কেন?" ব্যাটা তার উত্তরে বলেছিল "সিটও দিলেন, কথাও শুনালেন ভাই?" মেজাজ গিয়েছিল খিঁচড়ে, তাই বলেছিলাম "তাহলে কথা শুনেন.। সিট নিয়েন না"।
বলাই বাহুল্য এই ডায়লগ হজম করে ব্যাটা কথা আর বাড়ায় নি।
এসব ঝামেলার জন্য মাঝে মাঝে মনে হয় বিয়ে করে ফেলি। তাহলে আর একলা ভ্রমন করতে হবে না। আর কেউ সিট বদলের জন্য অনুরোধ করবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।