যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে
- কি প্রবলেম করছে আপনার বলেন কুরবাণী? রক্ত দেখলে কাপবে কেনো মুসলিমের অন্তর?...
.
[গাঢ়]কুরবাণী করতে হুকুম প্রাণ প্রিয় ধন। গরু ছাগল হইলো কি তোর এতই প্রিয় ধন? নিজের থাইকে প্রিয় বস্তু আর যে কিছু নাই, আত্নত্যাগই আসল কুরবান, জেনে নিও ভাই। [/গাঢ়]
.
1.
আমাদের ধর্মবোধ ও ধর্ম চিন্তার ব্যাপক সীমাবদ্ধতার একটা উদাহরন হলো কুরবাণীর ঈদ বা উৎসর্গের উৎসব। ধমর্ীয় ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে বাইবেল ও কুরআনের বর্ননা অনুসারে নবী ইব্রাহিমকে (সালাম) নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো তার প্রাণ প্রিয় বস্তুকে স্রষ্টার কাছে উৎসর্গ করতে। তিনি উপলব্ধি করেন এবং তার সবচেয়ে প্রিয়, সন্তান ইসমাঈলকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হন।
এর পরের ইতিহাস সবার জানা। ... এই ইতিহাসকে স্বরণীয় করতে প্রচলিত হয় নবী ইব্রাহিমের হাতে গড়া কাবায় তীর্থের (হজ্জ) পরে পশুকে উৎসর্গ করা। আরবের মুশরিকরাও এটা পালন করতো তীর্থের আচার আচরন হিসেবে। নবী মুহাম্মদ (সালাম) -এর মাধ্যমে, যিনি হজ্জের কিছূ পরিমার্জন করার পরে (যেমন উলঙ্গ তাওয়াফ, উৎসর্গ করা পশুর রক্তপান) মুসলিমরা এই ট্রাডিশন অনুসরন করে আসছে।
হজ্জের পরে আসে একটি বড় উৎসব।
হজ্জে যাক নি না যাক, কোন না কোন ভাবে মুসলিমদের ভিতরে প্রচলিত হয়ে গ্যাছে এই পশু উৎসর্গ করার ব্যাপারটা। অথচ নির্দেশটা ছিলো যারা হজ্জ পালন করবে তাদের জন্য (কুরবাণীর সাথে হজ্জের এক্সপ্লিসিট সম্পর্কের জন্য দ্রষ্টব্দ্য কুরআনে 22 নং সুরা, হজ্জ)। পশু উৎসর্গ ওতোপ্রোতভাবে হজ্জের সাথে জড়িত। মাংশ খাওয়ার উছিলায় না কোন কারনে আমার স্রষ্টাই জানেন, সারা পৃথিবীতে এই উৎসবের নামে যে পরিমান প্রাণীকে জবাই করা হয় তা রীতিমতো বিভৎস একটা প্র্যাক্টিস। এটা ইসলামিকও নয়।
আমাদের দেশে কুরবানীর সময়ে যে পরিমান পরিবেশ দূষন হয়, শহরের রাস্তা বন্ধ করে গরু ছাগলের হাট বসে সেটা দেখলে মনে হয় ইসলামের নামে মাংশ খাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। [গাঢ়] ধর্মকে কুৎসিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে ভারতীয় উপমহাদেশের গরু খাওয়া মোছলমানের জুড়ি নাই। আমাদের কাছে মোছলমান মানে গরু খাওয়া ঠিক আছে, শুওর হারাম। ফুল স্টপ। ওইখানেই এছলামের শুুরু এবং মৃতু্য।
[/গাঢ়] ধর্মের নামে চরম হঠকারীতার পরিচয় নিয়ে এই ঈদে একটা ব্যাপক প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এমনও বলতে শোনা যায়, আরে কুরবাণী ছাড়া ভালো মাংশ খাওয়ার সুযোগ কোথায়? প্রতিযোগিতা চলে ঘুষের পয়সায় কে কত বড় গরু কুরবাণী দিবে। আফসোস!! এই যদি কুরবাণী হয় তাইলে আপনার এছলাম আপনার কাছে রাখেন, আমি আমাজনে ট্রেকিং করতে যাই।
আরে ভাই, 10 হাজার টাকা দিয়া গরু কিন্না জবাই না দিয়া সেই টাকাটা দিয়া একজন গরীবরে পুর্নবাসন করেন না! এক ইউনুস না, বাংলাদেশে আমি লক্ষ ইউনুস তৈরী হওয়া দেখতে পাই। নাই বা পাইলেন নোবেল।
কোনটা খোদার কাছে বেশি ভালো এইটা বুঝতে কি কাঠ মোল্লার ফতোয়া লাগে? যে দেশে এতো মানুষ চরমভাবে গরীব, না খাইয়া এখনো মানুষ মরে, আশরাফুল মাখলুকাত আত্নহত্যা করে খিদার কষ্টে; সেইখানে ফ্যাশন কইরা হজ্জে যাওয়ার মতো হিপোক্রেসি কয়টা আছে আঙ্গুল দিয়া গুনতে হবে। ধমীর্য় আফিমের আবডালে মুনাফেকি যত্তোসব!
2.
অনেকদিন থেকে ভাবছিলাম বিষয়টা নিয়ে যারা ভালো জানেন তাদের জিজ্ঞেস করবো যে হজ্জের বাইরে, যারা হজ্জ করেন না, তাদের প্রতি বছর ঈদে পশু উৎসর্গ করা কতখানি ইসলামিক ও যুক্তিসংগত? যেখানে নবী ইব্রাহিমকে তার জীবনে একবার উৎসর্গ করার নির্দেশ, সেখানে আমরা প্রতি বছর করার মানে কি?
গতকাল দুটো ফোরামে প্রশ্ন করেছিলাম। কাঠমোল্লাদের না, যারা সত্যিকারের ইসলামের স্পিরিট বোঝেন তাদেরকে। আমি এই প্রশ্নটাই করেছিলাম যে প্রতিবছর সাধারন মানুষের পশু জবাই করার যে কালচার চলে আসছে সেটার ভ্যালিডিটি নিয়ে। উত্তরগুলোর ব্যাখ্যা দিচ্ছি না।
কেবল দূর্বল অনুবাদ করছি ইংরেজী থেকে।
3.
শেখ জুনায়েদ বাগদাদী হজ্জের প্রসঙ্গে একজন সদ্য হজ্জ সমাপ্ত করা হাজীকে জিজ্ঞেস করছেন:
হজ্জে যখন তুমি পশু জবাই করার স্থানে পৌছলে এবং স্রষ্টাকে পশু উৎসর্গ করলে, তখন কি তুমি তোমার নাফস (অহং, মিথ্যা আত্ন-অহংকার)-কে কুরবাণী করেছিলে?
- না। হাজীর উত্তর।
- জুনায়েদ প্রতিউত্তরে বলেন, 'তাহলে তোমার কুরবাণীই হয় নি। '
4.
আরেকটি ঘটনায়, বিখ্যাত যুলনুন মিসরী বলছেন, 'হজ্জের সময় মিনায় যখন সবাই পশু জবাই করতে ব্যস্ত তখন আমি এক অল্প বয়স্ক যুবককে মৌণভাবে বসে থাকতে দেখি।
আমি তার দিকে খেয়াল করছিলাম যে সে কি করে। আমি শুনতে পেলাম সে স্রষ্টার সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত। সে বলছে, 'হে খোদা, সবাই যার যার মতো করে পশু হত্যা করছে। আর আমি আকাংখা করি আমার নাফসকে কুরবাণী করতে। '
তার এই উক্তির সাথে সাথে দেহত্যাগ করে সেই যুবক।
(এই হলো কুরবাণী) হযরত মুহাম্মদ যে কারনে বলতেন, মৃতু্যর আগে মৃতু্য বরণ করো। এই মৃতু্য অহংয়ের (নাফসের) মৃতু্য। স্বরণ করুন, শেষ বিচারে সবাই একটা মাত্র উচ্চারনে আফসোস করবে আর ভীত হবে, আর সেই উচ্চারন হবে, ইয়া নাফস! ইয়া নাফস!!! ওহ আমার মিথ্যা অহং! ওহ আমার মিথ্যা অহং!!!
5.
আরেকজন লিখছেন: মুসলমানদের পশু উৎসর্গ করায় আমি আপত্তি করি না। কিন্তু উৎসর্গ করতে হলে যে পশুই করতে হবে তা হতে হবে কেন? একজন মুসলমান তার টাকা পয়সা, সময়, কায়িক ও মানসিক পরিশ্রম উৎসর্গ (কুরবাণী) করতে পারে শিক্ষা, উন্নয়ন, মানুষের মঙ্গলের জন্য যেকোন কাজে। এটা একটা পশুকে উৎসর্গ করার চাইতে অনেক মহৎ উৎসর্গ হবে।
বিষয়টা কেবলমাত্র মানুষকে মূল ইসালামের স্পিরিটের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার ব্যাপার, সুষ্ঠ ধর্মবোধে শিক্ষিত করার সাথে জড়িত। আর এতে এগিয়ে আসতে হবে মুসলিমদেরকেই।
[ দ্্বিতীয় পর্বে সমাপ্য। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।