আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকাশ স্বপ্নের মুখটা তুলে ধরে আলতো করে চুমু খেল কপালে। বললো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি.........।।

রোকেয়া ইসলাম

স্বপ্নের আকাশ.. ল্যাম্প-পোষ্টটার গায়ে আঘাতের টুকটুক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় স্বপ্নের। শব্দটা তার খুব পরিচিত। আকাশ যখনি তার সাথে খো করতে আসে তখনি এই শব্দটা করে। স্বপ্ন বারবার তাকে বলেছে এই শব্দটা না কওে মোবাইলে কল দিতে বা এসএমএস পাঠাতে। কিন্তু আকাশ তা না করে প্রতিবার এই একই কাজ করে।

সপ্ন কিছু বললেই সে বলে -কি করব তোমাকে ভীষন দেখতে ইচ্ছা করে তাই এই কাজটা করি। -ঠিক আছে দেখতে ইচ্ছা করে এই কথাটাতো কল দিয়েও বলা যায়। -না কল দিলে তুমি কল রিসিভ করবে ব্যালকনিতে তো আসবেনা। কিন্তু শব্দটা শুনলে তুমি বাহিরে আস আমি তোমাকে দেখতে পারি। -তবু লোকজন দেখে যে তুমি প্রতিদিন এই শব্দটা করআর আমি বের হয়ে আসি।

প্লিজ তুমি এই শব্দটা আর করোনা। কিন্তু আকাশ তাই করে। সে ল্যাম্পপোস্টটার গায়ে শক্ত কিছু দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করে। সপ্ন মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো এখন প্রায় একটা বাজে। এত রাতে ও কি চায়? কেন এসেছে।

কোন সমস্যায় পড়েনিতো? ঘুম জরানো চোখে বিছানা ছেড়ে ব্যালকনিতে এসে দাড়ায় সপ্ন। ল্যাম্পপোস্টটার গায়ে হেলান দিয়ে আকাশ দাড়িয়ে আছে। চারপাশে আবছা অন্ধকার। গায়ে কালো শার্ট থাকার কারনে তাকে একরকম দেখাই যাচ্ছে না। এরই মাঝে দেখলো আকাশ মোবাইল হাতে নিল ফোনে সপ্নকে বললো- -তোমার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে আমি তা সামনাসামনি বলতে চাইএবং তা এখনি।

-তুমি কি পাগল হয়ে গেছ নাকি? তুমি জান এখন রাত কয়টা বাজে? এখন রাত একটাবাজে। -আমি জানি তবু কথাগুলো আমি তোমাকে সামনে এসেই বলবো। তুমি ফোন রাখ আমি উপরে আসছি। আকাশ ফোনটা কেটে বাড়ির পিছন দিকে চলে গেল। সপ্ন কিছু বলার আগেই দেখতে পেল আকাশ একটা রড বেয়ে উপরে উঠে আসছে।

ভয়ে সপ্নের বুকটা ধুকধুক করছে। গলা শুকিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এখনি হয়তো পড়ে যাবে। ও কেন এমন করছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। অথছ আজ প্রায় চার বছর ওর সাথে সম্পর্ক ও কোনদিন এমন করেনি।

আজ হটাৎ কি হল তার। ভাবতে ভাবতেই ব্যালকনিতে উঠে এল আকাশ। কিছু না বলে সপ্নের একটা হাত ধরে টেনে নিয়ে এল রুমের ভিতর। পাশের রুমেই বাবা শুয়ে আছে। জোরে কথাও বলা যাচ্ছে না।

সপ্ন লাইটটা অন করতে সুইচে হাত দিতেই আকাশ তার হাতটা টেনে নিল। বললো থাক অন্ধকারই ভালো লাগছে। -আচ্ছা তোমার কি হয়েছে বলতো? এমন করছো কেন? -তা বলবো বলেইতো এসেছি। আমি খুব বিপদের মধ্যে আছি। আমাকে আজই ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।

আপাতত চিটাগাং খালার বাসায় যাচ্ছি। সেখান থেকে অন্য কোথাও যাব। - কেন আবার কি হল। সবকিছুতো ঠিকঠাকই চলছিল। আবার কি গন্ডগোল বাধিয়েছ? -রফিক আজ সকালে মারা গেছে।

নাইম, রাশেদ, সজল ওরা সবাই হন্যে হয়ে আমাদের খুজছে। থানা থেকেও বারবার আমাদের ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় হানা দিচ্ছে। তাই কিছুদিন লুকিয়ে থাকতে হবে। তুমি চিন্তা করবে বেবে তোমাকে কিছু জানাইনি। এখন পরিস্থিতি অন্যরকম।

বাহিরে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তোমাকে না দেখে যেতে পারলাম না। আকাশ স¦প্নের দুটি হাত ধরে বললো স্বপ্ন আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে এক নজর না দেখে যেতে মনটা কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না। আমি ভেবে পাইনা তোমাকে না দেখে আমি কেমন করে থাকবো।

স্বপ্ন একটু অভিমানের সুরেই বলল- -তাই যদি হতো তাহলে তুমি এই পথ থেকে অনেক আগেই সরে আসতে। তোমাকে আমি বহুদিন এই ব্যাপারগুলো বুঝিয়েছি কিন্তু তুমি আমার কথার কোন মুল্য রাখনি। [তুমি বিশ্বাস কর যে অপরাধের কারনে এত কিছু আমরা তার কিছুই জানিনা। আমরা তার সাখে কোন ক্রমেই জড়িত নই। আমি তোমার সাথে কখনো মিথ্যা বলিণি আজও বলছি না।

রফিকের মৃত্যুর ঘঁনায় আমাদের ফাসিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি সত্যি বলছি আমরা তার কিছুই জানি না। -এখন এসব কথা থাক। যা হবার তা হয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

তুমি এখন যাও। ওরা নিশ্চয়ই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আকাশ উঠে দাড়াল। ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে আবার পিছন ফিরে এল। দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো স্বপ্নকে।

কিছুক্ষন এভাবেই বুকের মধ্যে ধরে রাখলো তাকে। তারপর স্বপ্নের মুখটা তুলে ধরে আলতো করে চুমু খেল কপালে। বললো স্বপ্ন আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে তো? -স্বপ্ন কিছুই বললো না শুধু নিবির হয়ে মিশে থাকলো আকাশের বুকের মাঝে। কিছুক্ষন থাকলো এভাবেই।

খুব কাছাকাছি চলে এল ওরা। যেখান থেকে দুজনের নিঃশ্বাশের শব্দ শুনা যায়। হঠাৎ করে আকাশ সপ্নকে ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে সপ্নের হাতে দিয়ে বললো- -এই আমার নতুন ফোন নাম্বার। আজই নিয়েছি। তুমি ছাড়া আর কেউ যেন এই নাম্বারটা না জানে।

আমি কোথায় যাব কি করবো সব কিছুই তোমাকে জানাবো। তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি আসি বলেই ঠিক আগের মতই যেভাবে এসেছিল সেভাবেই নিচে নেমে গেল। এশবারও পিছন ফিরে তাকাল না। সপ্ন শুধু দাড়িয়ে দেখলো আকাশ কেমন করে অন্ধকারে হারিয়ে গেল।

সপ্ন ফিরে এল বিছানায়। সারা রাত ছঁফট করলো একটুও ঘুমাতে পারেনি। হাজারো চিন্তা এসে ভর করলো তার মনের ভিতর। প্রায় তিন বছর আকাশের সাখে পরিচয়, স¤পর্ক। ওখুব ভাল ছাত্র।

পড়াশুনায়ও ছিল খুব মনযোগি। আস্তে আস্তে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে ও । লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে উঠে। ঠিকমতো ক্লাসে আসতো না পরিক্ষায় অংশ নিলেও ভালো রেজাল্ট হতো না। স্বপ্ন অনেক চেষ্টা করেছে ওকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু পারেনি।

কেবল বলেছে “এইতো আর কটা দিন তারপরই তো ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যাব। তখন লক্ষি ছেলের মত চাকরি বাকরি করে তোমাকে নিয়ে সুখের সংসার করবো”। ওর বড় বোন ও ঢাকায় থাকেন। সেও চেষ্টা করেছে কোন লাভ হয়নি। অনেক এলোমেলো কথাই মনে হচ্ছে ওকে ঘিরে।

ও কি বাস ধরতে পেড়েছে?রফিক কে কারা মেরেছে কেনই বা মেরেছে। আকাশ কি এত কিছুর ভিতর থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে? সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারেনি স্বপ্ন। আকাশকে ঘিরে হাজারও স্মৃতি নিয়ে কেটে গেল পুরো রাত। সকালে ফজরের আযান দিতেই বিছানা ছেঁড়ে উঠে পড়ে স্বপ্ন। ছাদে এসে দাড়ায়।

আঁধার এখনো পুরাপুরি কাটেনি। সকালের হিমেল হাওয়াটা খুব ভালো লাগছে। রাতের কুয়াশা কাটিয়ে ভোরের সূর্যটা কেবল উঠি উঠি করছে। পুব আকাশে লাল আবিরের খেলা। প্রকৃতি যেন সূর্যের অপেক্ষায় বরন ডালা নিয়ে তৈরি।

বাড়ির ছাদে অনেক ধরনের গাছ লাগানো আছে। নানা রকমের পাতা বাহারের সাথে অনেক রকমের ফুলের গাছও আছে। সেই গুলিতে অনেক ফুল ধরেছে। গন্ধে চারিদিক মৌ মৌ করছে। ফুলগুলি সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে ও।

নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি যেন অনেকটাই দূর হয়ে গেছে। অনেক্ষন ছাঁদে থেকে নীচে নেমে এল সে। ততক্ষণে বাবা ও উঠে পড়েছে। সকালের নামায পড়ে খালি পেটে চা খাওয়া বাবার প্রতিদিনের অভ্যাস। স্বপ্ন চা করে বাবার রুমে আসতেই কলিং বেলটা বেজে উঠলো।

এত সকালে কলিং বেলের শব্দে চমকে উঠলো দুজনই। বাবার হাতে চায়ের কাপটা তুলে দিয়েই বলল- -বাবা তুমি চা খাও আমি দেখে আসি কে আসল। দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেল স্বপ্ন। দেখে আকাশের বন্ধু রাজিব দাড়িয়ে আছে। স্বপ্নকে দেখেই বলল- -স্বপ্ন তুমি আমার সাথে চল এখনই এক জায়গায় যেতে হবে।

-কোথায়? -হাসপাতালে। -কেন কি হয়েছে? -আকাশ এক্সিডেন্ট করেছে। একটু ব্যাথা পেয়েছে। এখন হাসপাতালে আছে। হটাৎ যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল স্বপ্নের।

কান্নায় ভেঙ্গে পরে ও। -রাজিব ভাই আপনি সত্যি করে বলেন ওর এখন কি অবস্থা । -এখন কথা বলার সময় নেই তুমি তাড়াতাড়ি চল। -কে এল রে মা?বলতে বলতে বাবা এসে রুমে ঢুকলো। -বাবা আমার আকাশের অনেক বিপদ ও এক্সিডেন্ট করেছে বাবা।

আমি ওর কাছে যাচ্ছি। তুমি দোয়া করো বাবা। আমার আকাশের যেন কিছু না হয় বাবা তুমি ওর জন্য ভাল করে দোয়া কর বাবা বলে কাঁদতে কাঁদতে রাজিবের সাথে বেড়িয়ে গেল। গাড়িতে বসে স্বপ্ন বলল “রাজিব ভাই আপনি আমাকে সব খুলে বলেন” -কাল রাতে তোমার এখান থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য আমরা তিন জন একটা সিএনজি তে উঠি। ওখানে জয় আমাদের জন্য আগেই থেকেই অপেক্ষা করছিল।

পথে নাইম, রাসেদ, ও সজল আমাদের সিএনজি আটকে দেয়। ওদের সাথে ধস্তা ধস্তির এক পর্যায়ে ওরা এলোপাথারি গুলি ছুড়ে । একটা গুলি আজাদের পায়ে লাগে আর একটা আকাশের বাম পাজরে এসে লাগে। ওদের ঢাকামেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। আকাশের প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।

স্বপ্ন কিছুই বলতে পারছেনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদেই চলেছে। হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে আকাশকে । স্বপ্ন এসে দাঁড়ালো রুমের সামনে। গ্লাসের ভিতর দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। এক হাতে ব্লাড অন্য হাতে স্যালাইন মুখে অক্সিজেনের মাস্ক বুকের মধ্যে অনেক গুলো মেশিন পত্র লাগানো বুকটা কেবল উঠানামা করছে।

তিন চার জন ডাক্তার ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। বারবার ওর হার্টবিট চেক করছে তারা আর কিযেন বলাবলি করছে। আকাশের চোখ দুটো একটু ফাক হয়ে আছে। স্বপ্নের মনে হচ্ছে ও যেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আকাশের কি খুব কষ্ট হচ্ছে? স্বপ্ন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।

ছুটে গেল দরজার দিকে। একটা নার্স এসে ওকে ধরে ফেললো। -এখন ভিতরে যাওয়া যাবেনা। ডাক্তাররা উনাকে চেক করছেন। -আমি একটু ওর কাছে যাব।

প্লিজ আমাকে যেতে দিন। -বললাম তো এখন যাওয়া যাবেনা। -স্বপ্ন জোর করেই ভিতরে ঢুকতে গেল। রাজিব, জয় ওরা বাধা দেয়ার অনেক চেষ্টা করলো নার্সের সাথে জোরাজুরির এক পর্যায়ে একজন ডাক্তার এসে বললেন -কি হচ্ছে এখানে। দেখছেন না রুগির অবস্থা ভালো না।

-ডাক্তার সাহেব প্লিজ আমাকে একটু যেতে দিন। আমি কোন কথা বলবো না। শুধু চুপ করে ওর পাশে দাঁড়িয়েথাকবো। প্লিজ আমাকে যেতে দিন। -বললাম তো এখন কিছুতেই ভিতরে যাওয়া যাবেনা।

-প্লিস আপনার পায়ে পরি আমাকে ভিতরে যেতে দিন। বলেই স্বপ্ন ডাক্তারের পা জড়িয়ে ধরল। এমন সময় ভিতর থেকে বড় ডাক্তার সাহেব বললেন “উনাকে আসতে দিন”। -ঠিক আছে যান তবে কোন কথা বলবেন না বা কান্না কাটি করবেন না। স্বপ্ন দাড়িয়ে আছে আকাশের পায়ের কাছে ।

আকাশের মুখটাকেমন হা করে আছে। মনে হচ্ছে অক্সিজেন দেয়ার পরও ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সারাটা শরীর নীল হয়ে আছে। স্বপ্ন আস্তে করে ওর পায়ে হাত রাখল। প্রচন্ড ঠান্ডা।

পায়ের পাতা দুটো রক্তে ভেজা। স্বপ্নের খুব ইচ্ছা করছে ওর মাথার কাছে গিয়ে দাড়াতে। মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে। ঘন কালো চুল গুলিতে কপাল টা ঢেকে আছে। চুপচাপ শান্ত ছেলের মত যেন ঘুমিয়ে আছে সে।

মাথায় ব্যান্ডেজ বাধা। পেটের নিচের অংশটাও ব্যান্ডেজে বাঁধা । রক্ত চুঁয়েচুঁয়ে পড়ছে সেখান থেকে। সাদা ব্যান্ডেজ টুকুও রক্তে ভিজে লাল হয়ে আছে। হটাৎ করে আকাশ একটু কেঁপে উঠলো।

ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে ও। ডাক্তাররা সবাই তৎপর। দ্রূত গতিতে ওর প্রেশার চেক করতে লাগলো। মাথার কাছে মনিটর যেখানে আঁকাবাঁকা অনেক রেখা তা যেন জীবন মৃত্যুর নির্দেশনাই প্রকাশ করেেছ। সবাই তাকিয়ে আছে ঐ আঁকাবাঁকা রেখাগুলোর দিকে।

একজন ওর বুকে জোরেজোরে চাপ দিতে লাগলেন। আকাশ দ্রূত হাত পা নাড়াতে শুরু করল। বারবার মাথা এদিক ওদিক কাত করছে। চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। মনে হয় কাউকে খুঁজছে।

স্বপ্ন মনের অজান্তেই আকাশ আকাশ ডেকে উঠলো । স্বপ্ন আকাশের আরও কাছে চলে এল। বলল দেখ আমি এসে গেছি। তোমার কিচ্ছু হবে না । তুমি ভালো হয়ে যাবে আকাশ।

কিন্তু আকাশের কোন ভাবান্তর নেই। সে আরও বেশি ছটফট করতে লাগলো। -কি হয়েছে ডাক্তার সাহেব?ও এমন করছে কেন? ডাক্তার কোন কথা বললেন না। আরও জোড়ে ওর বুকে চাপ দিতে লাগলেন। এত জোরে মনে হচ্ছে ওর বুকটাই যেন ভেঙ্গে যাবে।

-ডাক্তার সাহেব আমার আকাশ বাঁচবে তো? -জানিনা আল্লাহকে ডাকুন। তিনি ভালো জানেন। আমরা চেষ্টা করছি। অনেক্ষন এভাবে চলল। ডাক্তারদের ছুটাছুটি তৎপরটা সব কিছু বন্ধ।

সবাই আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছেন। আকাশও হটাৎ করে শান্ত হয়ে গেল। একজন তার মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্কটা খুলে দিলেন। -কি হোল আপনারা এগুলো খুলছেন কেন? -সরি আমাদের আর কিছুই করার নেই । আমরা তাকে বাঁচাতে পারলাম না ।

-ডাক্তার সাহেব ও কথা বলবেন না। আমার আকাশের কিচ্ছু হয়নি। ও আমাকে ছেঁড়ে যেতে পারেনা। স্বপ্ন আকাশের মাথায়, গালে হাত রেখে ওকে আদর বুলিয়ে দিতে দিতে বলল -তুমি আমাকে কথা দিয়েছ তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। আমাকে তুমি অপেক্ষা করতে বলেছ আকাশ।

তুমি তোমার কথার অমর্যাদা করতে পারনা । আমি যে শুধু তোমার জন্যই বেঁচে আছি আকাশ। তুমি উঠ আমার সাথে কথা বল। আমি তোমাকে ছাড়া কি নিয়ে বাঁচব আকাশ! তুমি এভাবে চলে যেতে পারনা। স্বপ্নের বুকফাটা কান্নায় ভারি হয়ে উঠলো হাসপাতালের চারপাশ।

বারান্দায় দাড়িয়ে রাজিব, জয়, মাহি সবাই কাঁদছে। খবর পেয়ে ছুটে এসেছে আরও অনেকে। এসেছে স্বপ্নের বাবা, ওর বড় বোন। সকালে হাসপাতাল পরিস্কার করছে আয়ারা। চারিদিকে ফিলাইলের ঝাঁজরা গন্ধ।

শেতশুভ্র বিছানায় নিথর দেহে শুয়ে আছে আকাশ। দুই জন ডাক্তার শুধু তাদের শেষ কাজ টুকু করছেন। এরি মাঝে আকাশের বুকের উপর পরে কেঁদেই চলেছে স্বপ্ন। কেউ বাধা দিল না। থাকুক স্বপ্ন আরও কিছুক্ষন তার আকাশের কাছে ।

কেঁদে কেঁদে বলে যাক ওর জীবনের শেষ কথা গুলো.........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।