কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
আমি ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স জানি না। ব্যাংকিং অর্থনীতি বিষয়েও আমার খুব ভালো ধারনা নাই। ছাত্র জীবনে পড়ছি এমন একটা বিষয়, যেইটা পড়ার কারনে অর্থনীতি নিয়া কথা বলার ক্ষেত্রে নিজেরই কেরম অস্বস্তি লাগে।
জামী ভাই অনেক বুঝাইলেন পরে আমি বুঝলাম। বুঝতে গিয়া আমার চোখে ভাইসা উঠলো সেইসব মানুষের ছবি, বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরনের টাইমে যেইসব মানুষরে দেখছি ঋণ শোধের টাইমে কেরম উতলা হইয়া উঠে, তাগো কপালে কেরম চিন্তার রেখা।
আমি য্যান তার করিমন বেওয়ারে দেখলাম! যে নাকি আজ স্বাবলম্বি। প্রশ্ন জাগলো মনে, স্বাবলম্বি কেমনে হয় করিমন বেওয়ারা কি তা জানে? মনে হয় জানে না, কারন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্সে পড়ালিখা শেষ কইরা প্রতিষ্ঠিত জামী ভাই পর্যন্ত ঠিকমতো জানেন না কারে স্বাবলম্বি কয়, বেওয়ারা জানবো কেমনে!?
গ্রামীন ব্যাংকও শুনছি তাগো উদ্দেশ্য বিধেয়তে কয় দেশের মানুষরে স্বাবলম্বি বানানটাই তাগো প্রধান লক্ষ্য। এর লেইগাই তাগো বেতনভূক সমাজকর্মীরা দিনমান ব্যয় করে। পুরানা আমলের সুদখোর মহাজনের হাত থেইকা বাইর কইরা আইনা মডার্ন ুক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পে নাম লিখানের লেইগা গরীব মানুষরে বহুত কিছু বুঝান। আবু চাচারা অনেক মানুষের ত্রাতা হ'ন, কারন করিমনরা ইউনুসরে চিনে না।
আদর করুক কিম্বা গালি দেউক, সবটাই আবু চাচাগো দায়।
করিমনের পালা মুরগীর ডিম আর লাউ বেইচা 1000 টাকা সুদ পরিশোধ করতেই হইবো, এইটাই তার জীবনের লক্ষ্য হইয়া উঠে... নাইলে আসমা, সালমা আরো দুই ভাবী তারে বহুত কথা শুনাইবো। কিছু মাস করিমনের সুদ পরিশোধ বাদ গেছে, ঐটা আবার চক্রবৃদ্ধি না কি জানি একটা হারে বাড়ে! (সেইটার হিসাব আমিও বুঝি না...করিমন বেওয়া তো কোনখানকার কে!...জামী ভাই বুঝতে পারেন!) তয় আসমা, সালমা আর ভাবীরা সেইটার কিছু টাকা নাকি দেওনের কথা কইছে! গ্রামে এখন এইরম দল আছে 4টা। বাজার হইলো 2টা। গ্রামের সব মানুষের স্বাস্য্থ ঠিক রাখনের লেইগা ডিম খাওনটা ফরজ।
কিন্তু এইসব গরীব মূর্খ মানুষেরা স্বাস্থ্য নিয়া ভাববো! একটু বেশি কষ্ট কইরা টাকা কামাইয়া যে ডিম খাওয়া বাড়াইতে হইবো তা'ও বোঝে না! না হয় ঘরের মাল সামানা বেচ রে বাপ, তাও ডিম খা! নাইলে করিমন, আসমা আরো অনেক ডিমবিক্রেতার কি হইবো! সবাইর ডিম কি আর সমান বেচা হইবো নাইলে! করিমনের সুদের হার 25% যেইটা বাড়ে চক্রবৃদ্ধি না কি জানি হারে! কিন্তু লাভ তো হয় না সেই রম। টায় টায় থাকে! আসমা, সালমা আর ভাবীরাও একই কথা কয়! কয়, করিমন আবার নিতে হইবো ধার...এইবারের টাকাটা যেমনে পারো শোধ করো! কনতো করিমনের কি মান ইজ্জত নাই! তার কপালে চিন্তার বলি রেখা বাড়ে...
করিমনের কিছু করনের নাই। ঘরে এমন কিছু নাই যেইটা বেইচা বাকী টাকা দিবো। কিন্তু আবু চাচা আবার আসে, সে বুঝায় নতুন ঋণ নিলে নাকি আগের বাকী টাকা কাইটা থুইয়া দিবো। এই নিয়মে এইবারের মতোন বাঁচন সম্ভব! করিমন তো হাফ ছাইড়া বাঁচে! মান ইজ্জতটা থাকলো এইবার! কিন্তু তাগো এক ভাবীর পাওনা নাকি অনেক বেশী! তার মুরগীর নাকি রানীখেত রোগ হইছিলো।
বেশির ভাগ মুরগীই গেছিলো মইরা। এখন তার টাকা শোধ না করলে নাকি তারা আবার ঋণ পাইবো না! করিমনের তো মাথায় হাত! তাইলে! আবু চাচা কয় তোমরা বুঝাও তার একটা সেগুণ গাছ আছে না ঐটা বেচবো কিনা কও! আমার কাছে ভালো গাহেক আছে। ভাবী কিছুতেই রাজী হয় না। করিমনরা সবাই গিয়া আবুরেই আবার ধরে, আপনেই কিছু একটা করতে পারেন, আমরা অনেক বুঝাইছি, সে কিছুতেই রাজী না! আবু কয় খারাও পুলিশ আমাগো লোক। ডান্ডা মাইরা ডর দেখাইলেই হইবো।
এরপরের গল্প আমাগো জানা...করিমন বেওয়াগো আর স্বাবলম্বি হওয়া হয় না। ভাবী ভয়ে সেগুণ গাছটা বেচে। তারা আবার গ্রামীন টেডি মহাজনের কাছ থেইকা আবার ঋণ নিয়া চলে। করিমনের আয় কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সবসময়ই কিছু টাকার টানাটানি থাকে সুদ দেওনের টাইমে।
কারন দেশের এক বেআক্কেল মন্ত্রী আছে যে খালি চাল ডাইলের দাম বাড়ায়। মুরগীর খাওনের দাম বাড়ায়। লাউ বিচির দাম বাড়ায়। কিন্তু ফইরারা কিছুতেই ঠিক দাম দেয় না। আবার তাই নতুন ঋণ...কিরম একটা শিকলে আটকা পরে করিমনের জীবন! স্বাবলম্বি হওনের তার সাধ মনে হয় না জীবনে হইছে কখনো।
কিন্তু খাওয়া পরাটা একটু ভালো হয়। সালমা জমি বেচে, আরেক ভাবীর ছেলেরে কাজে লাগায় স্কুলে যাওন বন্ধ কইরা...
তয় ভাবী আবার এখন নতুন একটা পদ্ধতি আবিস্কার কইরা ফেলে। গ্রামে আরো কয়জন এখন টাকা ধার দেয়। ইনুস সাবের ব্যবসা বুদ্ধিমতো এখন তারাও ঋণ ব্যবসায় টাকা খাটাইতেছে। ভাবী একজনের থেইকা টাকা নিয়া গ্রামীন ব্যাংকেরটা শোধ করে।
সময় হইলে আরেকজনেরটা নেয়, ঐ খানেতো আর বাংলাদেশ ব্যাংক নাই, তাই তারা বাঁইচা গেছে। সবাই য্যান একটা নতুন খেলা শিখে...
যাউগ্গা জামী ভাই আমার চেয়ে এই গল্প অনেক বেশি জানে। তার বইয়ে নাকি এইসব কথা ভালো মতো লেখা আছে। আমি হুদাই এতো বড় গল্প বানাইলাম। মানুষ এখন সামাজিক ভাবে ঋণ নেওন শিখা ফালাইছে।
এইটা বিশাল পরিবর্তন! এইটা আমরা না বুঝলেও বিদেশীরা ঠিকই বুঝে। আর তাই আবু চাচার বড় অফিসার ইনুস সাবরে তারা পুরস্কার দেয়। শান্তির লেইগা। যদিও শিবগঞ্জেই গুলিতে মানুষ মরে। কানসাটে রক্ত খেলে! রব্বানীরা নেতা হয়।
করিমনের আয় বাড়ে (?)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।