সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
মওলানা কাফিরুদ্দিন সাহেবের সকালের ঘুমটা বেশ ভালোই হয়েছিল। জাগার পরেই মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল। ফজর নামাজের পর ঘুমটা আসলেই ভাল হয়। আলবেলা হুক্কাটা ধরাতে গিয়ে না পেয়ে মেজাজ খারাপ হতে যাচ্ছিল। মনে হল গতকাল কালু লেঠেলের সাথে দরকারী আলাপের সময় মেহমানখানায় নিয়ে রেখেছিলেন।
বউদের ডাকতে সাহস পেলেন না। তিনজনেই ছুটে আসবে একসাথে। তারপর শুরু হবে ঝগড়া। তাই নিজেই গেলেন মেহমানখানায়। সেখানেও পেলেন না।
তাই গেলেন খুঁজতে খুঁজতে মেহমান খানার পাশের ঘরটায়, যেখানে বাড়ীর অদরকারী জিনিস সব জমিয়ে রাখা হয়। সেখানেও পেলেন না। খুঁজতে খুঁজতে একটি কোনায় তাকিয়ে চমকে উঠলেন। আরে ! একটা লাশ পড়ে আছে সেখানে। পড়ি কি মরি করে ছুটলেন মওলানা সাহেব।
শোবার ঘরে ঢুকেই মোবাইলটি নিয়ে ফোন করলেন থানায়। ফোন ধরলেন দারোগা সাহেব।
- দারোগা সাহেব জলদি আসেন ! আমি কাফিরউদ্দিন কইতাছি।
রোজার দিনে সকাল সকাল কাফির নামটা শুনে একটু চমকে গেলেন দারোগা সাহেব। কিন্তু কাফিরদের নিয়েই যাদের কারবার বিশেষ করে কাফিরদের পয়সায় যাদের পেট মোটা হয়, তাদেরকে কি এ নাম শুনে চমকে ওঠা সাজে ? তারপরেও জিজ্ঞেস করলেন
- কোন কাফিরউদ্দিন ?
শুনেই খিচড়ে উঠলো কাফিরউদ্দিনের মেজাজ।
তাকে চিনবেনা, এমন কোন শালা এই তল্লাটে আছে ?
- হারামজাদা, আমারে চিনস না, আমি তোর বাপ ! শুয়ারের বাচ্চা, জলদী আয় !
মওলানা কমিশনারের গালি খেয়ে এইবার চিনলেন দারোগা সাহেব। গালি খেয়ে রাগও হলো। কিন্তু তা হাজতে গতকাল যে লোকটিকে ধরে এনেছিলেন, পরে তার উপরই রাগ ঝাড়বেন ভেবে চুপ করে গেলেন।
- ও, মওলানা সাহেব, কইবেন ত, আরে আপনেরে তো আমি মওলানা হিসাবেই চিনি। আপনের মতো মওলানা এই তল্লাটে আছে একজন ?
একটু ঠান্ডা হলেন কাফিরউদ্দিন।
তাছাড়া বেশী রাগ করলে যদি হতের বাইরে চলে যায় ! তাই শান্ত হয়ে বললেন,
- আমার বাড়ীত একটা লাশ পাওয়া গেছে দারোগা সাহেব। জলদী আসেন আপনে।
আধ ঘন্টার মধ্যেই আসলেন দারোগা সাহেব। কাফিরউদ্দিন মওলানা তাকে ঘরটিতে নিয়ে গেলেন। দেখেই বিষম খেলেন দারোগা সাহেব।
- আরে এ তো আমাদেরই থানার লোক।
- কন কি ?
চমকে উঠলেন কাফিরউদ্দিন। পুলিশের লাশ এ বাড়ীতে পেলে তো বিপদ হয়ে যাবে। কাঁচুমাচু করে তাকালেন দারোগার দিকে।
- ভাইব্বেন না মওলানা সাব।
আমি থানায় গিয়া লোক পাঠাইয়া দিতাছি। আইয়া চুপে চাপে লইয়া যাইব। সাবধানে থাকেন, কাউয়ারেও কইয়েন না।
দারোগা সাহেবকে বিদায় করে কাফিরউদ্দিন কাচারী ঘরে গিয়ে বসলেন। মনটা একটু অশান্ত লাগলেও দারোগার কথায় ভরসা পেলেন।
কাফিরউদ্দিন মওলানার মেজো মেয়ে জাহেলাসুন্দরী পাশের ঘরে বসে ম্যাট্রিক পরীার জন্য নকল তৈরী করায় ব্যস্ত ছিল। নকল তৈরীর ব্যাপারে তার খুব নামডাক এ তল্লাটে। এত সুন্দর করে, ছোট্ট কাগজে, ছোট্ট ছোট্ট হরফের নকল শিল্পকর্ম হিসেবেই ধরা যেতে পারে। এরপরেও এত গুন থাকার পরও কেন যে তার বিয়ে হয়না, একথা যারা মেয়ে দেখতে এসেছে, তারাই বলতে পারবে। গোয়েন্দা হেসেবেও গ্রামে তার নাম ডাক আছে।
অন্যের গোপন কথা বের করায় বেলাতেও তার জুড়ি কেউ নেই। জাহেলাসুন্দরীর চোখ এড়াল না, চুপি চুপি গিয়ে সে ঘরে ঢুকল। ঢুকেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠল। বেরিয়েই ঢুকল মায়ের ঘরে।
মা কলিজাসুন্দরীর পিঠে তেল মালিশ করাচ্ছিল ছোট চাকরটাকে দিয়ে।
আরামে ওম ওম শব্দ বেরুচ্ছিল মুখ দিয়ে। জাহেলাসুন্দরী ময়ের কানে কানে গিয়ে বলল,
- আম্মা, খবর আছে, আব্বাজান আরেকটা বিয়া করছে।
- কি কস হারামজাদী ? কই বিয়া করছে, বউ কই ?
জাহেলাসুন্দরীর পেছনে পেছনে বড় বউ কলিজাসুন্দরী, মেজ বউ খারিজাসুন্দরী, ছোট বউ বোটকাসুন্দরীও ছুটল সে ঘরে। প্রথমে ঘরে ঢুকল কলিজাসুন্দরী। দু মিনিট পর বেরিয়ে বলল,
- জাইন্না শুইন্না এমুন একটা বুড়ী আনছে তোর বাপ।
কইলজার মতো কালা।
তারপর প্রথামত ঘরে ঢুকল খারিজাসুন্দরী। খারিজাসুন্দরী সময় নিল দেড় মিনিট। এসেই বলল,
- কেউ খারিজ কইর দিছে বইলাই এমুন বিয়া করছে বুইড়া।
সবশেষে ঢুকলো ছোট বউ বোটকাসুন্দরী।
এক মিনিট পরেই বেরিয়ে এলো সে। আচলে নাক চেপে আছে।
- কারে আনল তোর বাপে বিয়া কইরা ? শইলডা ফর্সা অইলেও গতরে বোটকা গন্দ।
এখানেই কাহিনীর শেষ টানতে হচ্ছে। এবার বুজর্গ ব্লগারদের কাছে পশ্ন আমার, কি রয়েছে
মওলানা কাফিরুদ্দিন সাহেবের মেহমানখানার পাশের ঘরটায় ?
(সংগ্রহ পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।