অকৃতজ্ঞের চেয়ে অধম
স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা রূপকার মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ‘হক কথা’ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এজন্যই যে শুধু রাজনৈতিক দল দিয়ে কথা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া যাবে না। তাছাড়া মাঠে-ময়দানে ওরা কথা বলতে দেবে না। ওরা এখন পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট। ওদের হাতে আছে অস্ত্র। প্রতিদিন ওরা আমাদের শত শত কর্মীকে হত্যা করছে! গ্রেফতার করছে।
ওদের টর্চার চেম্বারে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করছে প্রতিবাদকারীদের। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্ট্রা ও রূপকারের চিরস্মরণীয় উক্তিটি মনে পড়ে, যারা সাপ্তাহিক ‘হক কথা’ প্রকাশের রহস্য কমবেশি জানে তাদের মনে উঁকি দেয়—ওরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার পছন্দ করে না। ক্ষুদে হিটলারের বিরুদ্ধে জনগণের সামান্য প্রতিরোধকে ওরা নাম দেয় রাজাকার, আলবদরের নতুন চক্রান্ত। ফলে রাজাকার-আলবদর শব্দের প্রতি জনগণের ঘৃণা যেমন বহুল ব্যবহারে কমে আসছে, তেমনি ওদের নষ্টামি আর দুর্নীতি ঢাকার সুযোগও ওরা করে নিচ্ছে।
মওলানা ভাসানী ১৯৭২ সালেই একটা রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ক্ষমতাসীন সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং ভারতীয় নীলনকশা, অর্থনৈতিক আগ্রাসনের চক্রান্ত এবং এক পর্যায়ে সিকিমের মতো বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলার এবং পত্রিকার মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলার প্রচেষ্টা কত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক ছিল।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তখন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এবং দু-এক লাখ প্রতিবাদীকে হত্যা করে হলেও তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একজন দেশপ্রেমিক ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী নেতা কত দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হন তা মুকুটহীন সম্রাট মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর উক্তিই যথেষ্ট। মওলানা ভাসানী আরও বলেছেন, পাকিস্তানও আমরাই এনেছিলাম। কিন্তু আঞ্চলিক বৈষম্য, জাতিগত নিপীড়ন আর ভুখানাঙ্গা মানুষের স্বপ্ন ব্যর্থ হওয়ায় আমরাই সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নতুন একটা দেশের জন্ম দিয়েছি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশকে জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের সেবাদাস করার চক্রান্ত চলছে।
ভারত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করেছে, লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের আহারের ব্যবস্থা করেছে, বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার সাধারণ মানুষের অবদান চিরদিন মনে রাখা উচিত। কিন্তু দিল্লি সরকার আর মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা পাকিস্তানি পুঁজিপতিদের শূন্যস্থান দখল করতে চাইছে। যুদ্ধের পর পাকবাহিনীর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া অস্ত্র, বারুদ, ট্যাঙ্ক, কামান, বন্দুক সব ওরা নিয়ে গেছে। আমাদের হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি। পাটের গুদামে আগুন দেয়া হয়েছে।
আমাদের শিল্প-কলকারখানা ধ্বংস করে ভারত থেকে তৈরি মাল বিক্রির বাজারে পরিণত করার কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য তো পাকিস্তানের কাছ থেকে যুদ্ধ করে লাখ লাখ আদম সন্তান প্রাণ দেয়নি। আমরা ভারতের বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু প্রভুত্ব নয়! ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের নেতাকর্মী, এমসিএ, এমপি সবাই সরকারের আতিথ্যের ঋণ শোধ করতে বড় বেশি চক্ষুলজ্জায় পড়েছে। যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া একটা দেশের জনপ্রতিনিধিদের যে বিপ্লবী মন-মানসিকতা দরকার, এদের তা নেই।
মওলানা ভাসানীকে ভারতে নজরবন্দি করে রাখা হলো।
শত শত বামপন্থীকে নকশাল বলে হত্যা করা হলো। সিরাজ শিকদারসহ ৩০-৪০ হাজার দেশপ্রেমিক মেধাসম্পন্ন চৌকস যুবককে হত্যা করা হয়। এখন আওয়ামী লীগ সরকারও লুটপাট বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের লুটপাট আর ভারতীয় নীলনকশার কথা বললেই জুলুম ও নির্যাতন নেমে আসে। রক্ষীবাহিনী গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের সাচ্চা প্রগতিশীল কর্মীদের গণহারে হত্যা করার জন্য।
আইয়ুবের বিরুদ্ধে এত সংগ্রাম করে, জেল-জুলুম খেটে ছাত্রদের মধ্যে থেকে যে কর্মীরা তৈরি হয়েছিল আজ তারাও বড় নেতাদের দেখে নিজেরাও এক-একজন ক্ষুদে আদমজী-ইস্পাহানী, আর টাটা-বিরলা হতে চায়। দেশজুড়ে অনাচার। শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল নেই। মানুষ প্রথমে স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দে সবকিছু উপক্ষো করেছে। পাকিস্তান হওয়ার পর কিছুদিন পর্যন্ত মোহগ্রস্ত জনতার মতো এবারও মানুষ প্রথম সবুর করছে।
কিন্তু এবার মোহটা ভাঙছে তাড়াতাড়ি। তাছাড়া ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক আগ্রাসন আর জেলা-মহকুমা ও থানায় থানায় ক্ষুদে আওয়ামী হিটলারদের দৌরাত্ম্য মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে, জনগণকে রক্ষা করতে হবে। লাখ লাখ মানুষের রক্তের দামে কেনা আজাদি যেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন আর নব্য ব্যবসায়ীদের লালসায় পুড়ে নষ্ট না হয় এজন্য প্রথম থেকেই প্রতিবাদ করতে হবে। সোচ্চার হতে হবে!
হক কথার সার্কুলেশন থাকলেও বিজ্ঞাপন জুটত না।
মালিকরা আওয়ামী বিরোধী চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে বিজ্ঞাপন দিত না। ‘হক কথা’র জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন হঠাত্ করেই একদিন সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী গ্রেফতার হয়ে গেলেন। টাঙ্গাইলের কল্লোল প্রেস ঘিরে মওলানা ভাসানীর প্রকাশিত হক কথার সম্পাদককে গ্রেফতার করেন। তারপর গণকণ্ঠের সম্পাদক কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয় এবং পত্রিকার ডিক্লারেশনটি বাতিল করে। সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের আগ্রাসন মোকাবিলার লক্ষ্যে জনমত গড়ে তোলার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে ‘হক কথা’ প্রকাশ শুরু হয়।
সরকারি নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় একই বছর ২২ সেপ্টেম্বর। আওয়ামী লীগ ও তার সমমনারা গণতন্ত্র, গণমাধ্যম আর ন্যায়বিচারে আতঙ্কগ্রস্ত থাকে বলেই ক্ষমতায় এলেই তাদের মূল লক্ষ্য হয় গণতন্ত্র, গণমাধ্যম আর ন্যায়বিচারকে নির্বাসনে দেয়া। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর লন্ডনে বসে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল জলিল আঁতাত-ষড়যন্ত্র করেই তার দল ক্ষমতায় এসেছে এমন মন্তব্য করেন। মরহুম আবদুল জলিলের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব না হলেও মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন সেখান থেকে আওয়ামী লীগ বের হতে পারেনি। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, আজকে রাষ্ট্রীয় জুলুম যেভাবে জনগণকে মজলুম করে তুলছে, তার পূর্বাভাস ১৯৭২ সালে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দিয়ে গেছেন।
আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশের অপরাধে আওয়ামী রোষানলে পড়তে হয়েছে। দীর্ঘদিন কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অবরুদ্ধ থাকার পর ১১ এপ্রিল সকাল ৯টায় ফিল্মি স্টাইলে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ডিবি পুলিশের গ্রেফতারের সময় তিনি দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করার সুযোগ চাইলেও তারা তা দেয়নি। দেশটা যেন নাস্তিক মুরতাদ স্বৈরশাসক জালেমের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। নিম্ন আদালত এমনভাবে সরকার দ্বারা প্রভাবিত, সর্বোচ্চ আদালতের রিমান্ড প্রদানের দিকনির্দেশনা উপেক্ষা করে ৩ মামলায় ১৩ দিন রিমান্ড দিয়েছে মাহমুদুর রহমানকে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই বিভিন্ন পেশার মেধাসম্পন্ন, চৌকস তীক্ষষ্টজ্ঞানের অধিকারীদের হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, রাষ্ট্রীয় লেবাসে শুরু হয়। রাজনীতিবিদরা এ থেকে ছাড় না পেলেও ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে ক্ষমতায় আসার জন্য তাদের আকুতিতে সবাই ভুলে যায়। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ডিবি কার্যালয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। অপরদিকে ঢাকার রাজপথে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তার মেধা ও প্রজ্ঞা ধ্বংসের নানা কৌশল তার ওপর প্রয়োগ করতে এসেছে। আবার কোনো কোনো আলোচকরা বলছে, বিশেষ এক ধরনের ওষুধ-ইনজেকশন নিয়ে আসা হয়েছে (!) যা ব্যবহার করলে মেডিকেল পরীক্ষায় ধরা পড়বে না।
আবার দেশপ্রেমিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নিশ্চিত মৃত্যু হবে এসব গুজব কিংবা আলোচনা শুনে অনেকেই মন্তব্য করছেন, যেখানে আইন নেই, বিচার নেই সেখানে ঈমানদার নেতৃত্বের এতই অভাব যে, জুলুমবাজের পতনের ডাক দিতে কেউ সাহস পায় না। পত্রিকাটি বন্ধ করতে হক কথার মতোই নানামুখী নির্যাতন চলছে। আমার দেশ পত্রিকার প্রেসে সিলগালা দিয়ে আওয়ামী জোট সরকার প্রমাণ করেছে পাকিস্তানি জালেমদের বংশোদ্ভূত তারা? রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার দেশপ্রেমিক সত্, স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেনসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা দিয়ে চার্জশিট পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে দিয়ে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা বন্ধের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার মেধাসম্পন্ন স্বচ্ছ দেশপ্রেমিক নেতাদের কাল্পনিক মামলা দিয়ে বিচারের স্বচ্ছতাকে বিতর্কিত করে হত্যার পরিকল্পনার চক্রান্ত ফাঁস করে দেয়ার অন্তরায় হয়ে দেখা দেয় সত্য প্রকাশের অকুতোভয় সৈনিক মাহমুদুর রহমান। তাই তাকে আদি যুগের বর্বরতাকে লজ্জা দিয়ে এমন পন্থায় গ্রেফতার করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন শেষে আদালতে হাজির করে ৩ মামলায় ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
বিচারকদের উপর প্রভাব খাটানো একজন সম্পাদককে বৈদ্যুতিক শক দেয়ার পর দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অবশিষ্ট রয়েছে কিনা তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ! আজকে দেশ রক্ষা করতে হলে এখনই সরকার পতনের লাগাতার কর্মসূচি দিতে হবে। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নিজের আরাম-আয়েশ হারাম করে ঈমান আকিদার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচিত করে দিয়েছেন। কিন্তু যারা ঈমান-আকিদা রক্ষার সুযোগ পেলেন আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কারণে তারা এখনও চুপচাপ বসে আছে। হিংস্র জানোয়ারের হিংস্রতা প্রতিহত না করলে তার আক্রোশ থেকে অন্যরা যেমন রক্ষা পাবে না, তেমনি যারা আপোস করে চলতে চায় তারাও রক্ষা পায় না। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের ভাগ্যে বিডিআর সদর দফতরের ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ দেশপ্রেমিক বিডিআর সদস্য ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গণঅপহরণ, হত্যা, খুন, গুম চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের নামে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা কিংবা সম্প্রতি গণগুলিতে দুই শতকের ঊর্ধ্বে এ দেশের জনগণ গণহত্যার শিকার হয়েছে।
পুলিশ আটক করে পায়ে গুলি করে চরম মানবাধিকার লংঘন করছে। সীমান্তের ওপারে বিএসএফ-এর সন্ত্রাসী আর দেশের অভ্যন্তরে বিজিবির হত্যার প্রতিবাদে জনগণ ফুঁসছে।
আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে শাসক মহল নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিল যে, তাদের কর্মকাণ্ড জনগণ জানতে পারবে না! কিন্তু মাহমুদুর রহমানের অসংখ্য অনুসারী মাহমুদুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সহকর্মী রেখে গেছে। সেটা তারা ভুলে গিয়েছিল। তাই পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল না করে বিচার বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর প্রভাব খাঁটিয়ে আমার দেশ-এর ছাপাখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
পত্রিকাটি আইন অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করার পাশাপাশি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার মগবাজারের আল ফালাহ্ প্রিন্টিং প্রেসে আমার দেশ ছাপানোর আইন ব্যত্যয় ঘটেনি। তারপরও দেশের প্রবীণ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ ও আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বৃদ্ধা মা মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটা মামলা করা হয়েছে। ১৯ জন দিনমজুর শ্রেণীর কর্মচারীকে গ্রেফতার করে তাদের পরিবার-পরিজনকে অর্ধাহারে ও অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করছে শাসক মহল! যা ইতিহাসের পাতায় নিকৃষ্ট অধ্যায় হিসেবে লেখা থাকবে। ১৭ এপ্রিল একটি মামলায় ৭ দিন রিমান্ড শেষ হলে মাহমুদুর রহমানকে যখন আদালতে হাজির করা হয় তখন তিনি আমরণ অনশনরত ছিলেন। আদালত ঐদিনই তাকে কারাগারে পাঠালে কারা কর্তৃপক্ষ মাহমুদুর রহমানের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে বিএমএসইউ হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য প্রেরণ করে।
দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী কলাম লেখক ফরহাদ মজহার চিকিত্সকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মাহমুদুর রহমানের দুই হাতের কবজিতে এবং দুই হাঁটুতে অনেক ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাওয়া গেছে। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক শক দেয়া হলে এ ধরনের চিহ্ন শরীরে হয়। একজন বহুল প্রচারিত পত্রিকার সম্পাদকের যদি মৌলিক, নাগরিক, মানবিক অধিকার না থাকে তাহলে সাধারণ জনগণের কি অবস্থা বিশ্বের শান্তিসৌহার্দ্য বজায় রাখতে যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণ রাষ্ট্রীয় জুলুম কীভাবে সহ্য করছে তা দেখার আহ্বান জানাতে শুরু করেছে।
মাহমুদুর রহমানের উপর অমানুষিক নির্যাতন প্রমাণ করে এই আওয়ামী জোট সরকার দেশপ্রেমিক মুক্ত চিন্তার অধিকারী মেধাসম্পন্ন ও চৌকস জ্ঞানী নাগরিকদের বরদাস্ত করতে পারে না। ৩টি যৌক্তিক দাবিতে মাহমুদুর রহমান আমরণ অনশন শুরু করেন।
অবশেষে অনশন ভঙ্গ করান তার মাতা মাহমুদা বেগম হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহম্মেদ শফী এবং সাংবাদিক সমাজ ও পেশাজীবীদের অনুরোধে। মাহমুদুর রহমানের দাবি তিনটি ছিল—আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার মা মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বিনাশর্তে তুলে নিতে হবে, বেআইনিভাবে আমার দেশ পত্রিকার প্রেসে লাগানো তালা অবিলম্বে খুলে দিতে হবে এবং পত্রিকা প্রকাশের বাধা তুলে দিতে হবে ও গ্রেফতারকৃত ১৯ জনকে বিনাশর্তে ছেড়ে দিতে হবে। ওয়ান ইলেভেনের পর দেশে রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতার কারণে অসাংবিধানিক সরকার জোর করে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বিজ্ঞ প্রকৌশলী ও জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে দক্ষতার ছাপ যিনি সফলভাবে রাখতে সক্ষম হন তিনিই আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। দেশের বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদরা যখন ইঁদুরের গর্তে লুকিয়েছে। জালেম জোট সরকারের কেউ কেউ গোপনে আঁতাত করতে; সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও সামাজিক সম্প্রসারণবাদের চক্রান্ত সফল করতে দেশ প্রেমিকদের চরিত্র হনন, নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছিল তখনই ফ্যাসিস্ট শাসকের পদধ্বনি শুনে তিনি কলম হাতে তুলে নেন।
যে ক’জন লেখকের কারণে অসাংবিধানিক সরকার তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের নামে একটি ফ্যাসিস্ট শাসকের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে বাধ্য হয়, তাদের অন্যতম মাহমুদুর রহমান। কিন্তু অসাংবিধানিক সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় আওয়ামী লীগ সরকার দেশপ্রেমিক শক্তির কাছে এ জন্যই ফ্যাসিস্ট হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে। আর তা হচ্ছে ক্ষমতা গ্রহণের পর পর ৫৬ জন চৌকস সেনাকর্মকর্তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে। এ হত্যাকাণ্ডকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ বডার গার্ড (বিজিবি) নামকরণ করে। বিজিবি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর তাণ্ডব ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে বাংলাদেশের জনগণের জীবন রক্ষায় ব্যর্থ হয়।
অথচ দেশের অভ্যন্তরে নিরস্ত্র প্রতিবাদীদের উপর গুলি চালিয়ে জীবন কেড়ে নিতে সফলতা অর্জন করে। দেশের অন্যতম বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপার্সন, বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে আদিযুগের বর্বরদের মতো আচরণ করে বিচার বিভাগের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুকের উপর পুলিশি নির্যাতন অনেকে হায়েনার জীবন্ত পশু খাওয়ার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে স্মরণ করে। (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।