আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলেকজান্ডারের শেষ ৩টি ইচ্ছা:

দুনিয়াটা মস্ত বড়.... অনেক রাজ্য দখলের পর আলেকজান্ডার তার নিজ বাসভূমে ফিরে আসছিলেন। ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থতাই তার মৃত্যু ডেকে আনে। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আলেকজান্ডার অনুভব করলেন তার যুদ্ধ জয়, তার বিখ্যাত সেনাবাহিনী, তার তরবারি এবং অর্জিত সকল সম্পদ কতটা মূল্যহীন। বাড়ি ফিরে মাকে দেখার জন্য এবং মায়ের কাছ থেকে শেষ বিদায় নেয়ার জন্য তার আকুলতা ক্রমেই বাড়ছিল। কিন্তু তিনি নিশ্চিত বুঝতে পারলেন জীবিত অবস্থায় তিনি নিজ বাসভূমে ফিরতে পারবেন না।

তাই অসহায়ের মতো বিছানায় পড়ে থেকে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। এ সময় গভীর এক আত্মোপলব্ধি এলো তার মনে। তিনি তার সেনাপতিদের ডেকে বললেন, ‘‘আমি শীঘ্রই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। আমার তিনটি ইচ্ছে আছে। দয়া করে কোন রকমের দ্বিধা না করে আমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করবেন।

’’ চোখের পানিতে সেনাপতিরা প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, তারা মহামতির শেষ ইচ্ছে পূরণ করবেন। ১) ‘‘আমার প্রথম ইচ্ছে হচ্ছে’’, বললেন আলেকজান্ডার, ‘‘আমার চিকিৎসকরাই কেবল আমার মরদেহ বহন করবেন। ’’ কিছুক্ষণ নীরব থেকে তিনি বলতে শুরু করলেন, ২) ‘‘আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে-আমার কফিন যখন সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই চলার পথে আমার ভান্ডারে সংগৃহীত সোনা, রূপা এবং অন্যান্য দামি পাথর ছড়িয়ে দিতে হবে। ’’ এইটুকু বলে আলেকজান্ডার হাঁপাতে লাগলেন। এক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তিনি আবার বলতে শুরু করলেন- ৩) ‘‘আমার তৃতীয় ইচ্ছে আমার দুটো হাত যেন কফিনের বাইরে ঝুলে থাকে।

’’ এ সময় মহামতি আলেকজান্ডারের কক্ষে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা এমন অদ্ভুত ইচ্ছের কথা শুনে অবাক হলেন। কিন্তু কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস পেলেন না। আলেকজান্ডারের প্রিয় সেনাপতি তার হাতে চুম্বন দিয়ে তা নিজের বুকে নিয়ে চাপ দিয়ে বললেন, ‘‘হে রাজন্য, আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি আপনার ইচ্ছে পূরণের। কিন্তু আমাদেরকে বলুন আপনি কেন এমন বিচিত্র ইচ্ছে পোষণ করছেন?’’ প্রশ্ন শুনে আলেকজান্ডার গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিলেন এবং বললেন, ‘‘আমি চাই বিশ্ব তিনটি শিক্ষা সম্পর্কে জানুক যা আমি এইমাত্র শিখলাম। ’’ আলোকজান্ডারের শেষ তিনটি ইচ্ছে থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে : আমি চেয়েছি চিকিৎসকরা আমার মরদেহ বহন করুক কারণ জনগণকে বুঝতে হবে যে, কোন চিকিৎসকই বাস্তবে কাউকে নিরাময় করতে পারেন না।

তারা ক্ষমতাহীন এবং মৃত্যুর দুয়ার থেকে কোন ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে পারেন না। দ্বিতীয় ইচ্ছে সমাধিক্ষেত্রে যাওয়ার পথে সোনা-রূপা ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, সোনার একটি ভগ্নাংশও আমার সঙ্গে যাবে না। আমি সারাটা জীবন সম্পদ অর্জনে ব্যয় করেছি কিন্তু অর্জিত সম্পদের কিছুই আমি সঙ্গে নিতে পারছি না। লোকে অনুভব করুক যে, সম্পদের পেছনে ছোটা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। তৃতীয় ইচ্ছে আমি কফিনের বাইরে আমার হাত দুটি ঝুলিয়ে দিতে বলেছি।

আমি মানুষকে জানাতে চাই যে, পৃথিবীতে আমি শূন্য হাতে এসেছিলাম এবং শূন্য হাতেই এই পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছি। এটুকু বলার পর আলেকজান্ডার চোখ বুজলেন। কিছুক্ষণ বাদে মৃত্যু হলো তার। শিক্ষণীয় বিষয় : মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য আপনার হাতেই-এর প্রতি নজর দিন। আপনি যতক্ষণ জীবিত আছেন অর্থ বা সম্পদ আপনার কাছে অর্থবহ হতে পারে।

আপনি নিজের জন্য যা কিছু করবেন। আপনার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হবে। কিন্তু আপনি অন্যের জন্য কিছু করলে আপনার মৃত্যুর পর সেটাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। এটাকে বলে ইচ্ছাপত্র (Legacy)। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।