আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলেকজান্ডারের শেষ ইচ্ছা

লিখতে চাই অনেক কিছু, কিন্তু কি লিখব। কত যে কথা ছিল মনের মাঝে, আজ এ অসময়ে বুকের মাঝে শুধু বাজে। যাবোই চলে হারিয়ে আমি মহাকালের গর্ভে। অসীম অর্থহীন পথচলা নাকি নতুন স্বপ্নের জাল বোনা। অনেক রাজ্য দখলের পর আলেকজান্ডার তার নিজ বাসভূমে ফিরে আসছিলেন।

ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থতাই তার মৃত্যু ডেকে আনে। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আলেকজান্ডার অনুভব করলেন তার যুদ্ধ জয়, তার বিখ্যাত সেনাবাহিনী, তার তরবারি এবং অর্জিত সকল সম্পদ কতটা মূল্যহীন। বাড়ি ফিরে মাকে দেখার জন্য এবং মায়ের কাছ থেকে শেষ বিদায় নেয়ার জন্য তার আকূলতা ক্রমেই বাড়ছিল। কিন্তু তিনি নিশ্চিত বুঝতে পারলেন জীবিত অবস্থায় তিনি নিজ বাসভূমে ফিরতে পারবেননা। তাই অসহায়ের মত বিছানায় পড়ে থেকে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করতে লাগলেন।

এ সময় গভীর এক আত্মোপলব্ধি এলো তার মনে। তিনি তার সেনাপতিদের ডেকে বললেন, “আমি শীঘ্রই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। আমার তিনটি ইচ্ছে আছে। দয়া করে কোন রকমের দ্বিধা না করে আমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করবে”। চোখের পানিতে সেনাপতিরা প্রতিশ্রুতি দিল যে, তারা মহামতির শেষ ইচ্ছা পূরণ করবে।

“আমার প্রথম ইচ্ছা হচ্ছে”, বললেন আলেকজান্ডার, “আমার চিকিৎসকরাই কেবল আমার মরদেহ বহন করবে”। কিছুক্ষণ নীরব থেকে তিনি বলতে শুরু করলেন, “আমার দ্বিতীয় ইচ্ছা-আমার কফিন যখন সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই চলার পথে আমার ভান্ডারে সংগৃহীত সোনা, রুপা এবং অন্যান্য দামি পাথর ছড়িয়ে দিতে হবে”। এইটুকু বলে আলেকজান্ডার হাঁপাতে লাগলেন। এক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তিনি আবার বলতে শুরু করলেন-“আমার তৃতীয় ইচ্ছা আমার দুটো হাত যেন কফিনের বাইরে ঝুলে থাকে”। এ সময় মহামতি আলেকজান্ডারের কক্ষে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা এমন অদ্ভুত ইচ্ছার কথা শুনে অবাক হলেন।

কিন্তু কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস পেলনা। আলেকজান্ডারের প্রিয় সেনাপতি তার হাতে চুম্বন দিয়ে তা নিজের বুকে নিয়ে চাপ দিয়ে বললেন, “হে রাজণ্য, আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি আপনার ইচ্ছা পূরণ করা হবে। কিন্তু আমাদেরকে বলুন আপনি কেন এমন বিচিত্র ইচ্ছা পোষণ করছেন?” প্রশ্ন শুনে আলেকজান্ডার গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিলেন এবং বললেন, “আমি চাই বিশ্ব তিনটি শিক্ষা সম্পর্কে জানুক যা আমি এইমাত্র শিখলাম”। প্রথম ইচ্ছা-আমি চেয়েছি চিকিৎসকরা আমার মরদেহ বহন করুক কারণ জনগণকে বুঝতে হবে যে, কোন চিকিৎসকই বাস্তবে কাউকে নিরাময় করতে পারেনা। তারা ক্ষমতাহীন এবং মৃত্যুর দুয়ার থেকে কোন ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে পারেনা।

দ্বিতীয় ইচ্ছা-সমাধিক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে সোনা-রূপা ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, সোনার একটি ভগ্নাংশও আমার সংগে যাবেনা। আমি সারাটা জীবন সম্পদ অর্জনে ব্যয় করেছি কিন্তু অর্জিত সম্পদের কিছুই আমি সংগে নিতে পারছিনা। তৃতীয় ইচ্ছা-আমি কফিনের বাইরে আমার হাতদুটো ঝুলিয়ে দিতে বলেছি। আমি মানুষকে জানাতে চাইযে, পৃথিবীতে আমি শূণ্য হাতে এসেছিলাম এবং শূণ্য হাতেই এখন পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছি। এইটুকু বলার পর আলেকজান্ডার চোখ বুজলেন এবং কিছুক্ষণ পর মৃত্যু হলো তার।

এই লেখা পড়ে অনেকের অনেক রকম ধারণা হতে পারে তবে এই মুহূর্তে আমার মনে একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে, A strong man stands up for himself; a stronger man stands up for others. বেকার যুবক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।