আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়ঙ্কর রূপ

অন্যায় এর প্রতিবাদ দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়ানক রূপ নিয়েছে। মহাজোট সরকারের চার বছরে নারী ও শিশুদের পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা অতীতের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। নির্যাতনের পর নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। পাশবিকতার শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজের ছাত্রী ও কোমলমতি শিশুরাও। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ।

ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুম করা হচ্ছে হরহামেশা। এতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না নরপশুরা। পরিচয় নিশ্চিহ্ন করতে নারীকে পুড়েও মেরেছে। জোরপূর্বক আপত্তিকর ছবি তোলা, মোবাইলে আপত্তিকর ভিডিও আপলোড করে প্রচার, ঘটনা প্রকাশ না করতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করার মতো ঘটনাও ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়েও কাজ হয় না।

অধিকাংশ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও গ্রেফতার হয় না অপরাধী। কেউ গ্রেফতার হলেও মামলা বেশিদূর এগোয় না। প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীনদের হুমকি, কখনওবা তাদের মধ্যস্থতায় মীমাংসা করতে বাধ্য হয় নিরীহ ব্যক্তিরা। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে নারী নির্যাতন মামলার সাক্ষীও পাওয়া যায় না। এসব কারণে ক্রমেই শ্লীলতাহানি ও হত্যার মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে।

পাশবিক নির্যাতনের পর ভিডিওচিত্র ধারণ করে ইন্টারনেট মোবাইলে প্রকাশ করে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে ধর্ষিতার পরিবারকে। এসব ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিচ্ছে বখাটে দুর্বৃত্তরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়েও নির্যাতিত পরিবারটি আশ্রয় পাচ্ছে না। পায় না ন্যায় বিচার। অপরাধীদের সঙ্গে থানা পুলিশের যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে।

ইভটিজিং নামে যৌন হয়রানি ও নারীদের ওপর সহিংসতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও তা যেন দেখার কেউ নেই। লজ্জা ও অপমানের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে নিরূপায় নারীরা আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মধুপুরে এক কিশোরীকে তিনদিন আটক রেখে গণধর্ষণের ঘটনায় দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আন্দোলন করে যাচ্ছে।

মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনগুলো দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। এরই মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর শাহআলী এলাকায় ঝিলপাড় বস্তির খেয়াঘাটে ১১ বছরের এক স্কুলছাত্রীকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধর্ষণের পর হত্যা করে তার লাশ সিলিং ফানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী নিহত স্কুলছাত্রীর লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থানাও ঘেরাও করে। গত রোববার রাতে কক্সবাজারে সদর উপজেলার পিএমখালী মোহছনিয়াপাড়া এলাকায় গণধর্ষণের পর এক কিশোরীকে নির্মমভাবে খুন করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে লাশ গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

নিহতের বড় ভাই কামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এক বছর আগে থেকে আমার বোনকে মাদরাসায় যাওয়া-আসার সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিল এলাকার কিছু চিহ্নিত বখাটে। তখন সে স্থানীয় পাতেলী আবু বক্কর সিদ্দিক দাখিল মাদরাসার ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। ওই সময় ১৬ বছর বয়সী অসহায় এই মাদরাসা ছাত্রীর ওপর বখাটেদের উত্পাতে পড়াশোনা বন্ধ করে দেন তার ভাই। জানা গেছে, রাতে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ৪-৫ জন ওই কিশোরীকে ঘরের বাইরে ধরে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দুর্বৃত্তরা নিহতের লাশ বাড়ির পাশে একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখে।

পাশবিক নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌন হয়রানি ছাড়াও বিভিন্নভাবে নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। পর্দানশিন ও বোরকা পরা নারীদেরও নির্যাতন করা হয়েছে। বিনা অপরাধে বোরকা পরা নারীদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর মগবাজার থেকে ২১ নারীকে আটক করে ২০ জনকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি অন্তঃসত্ত্বা নারীও।

অন্তঃসত্ত্বা নারীকে আদালতের ৮ তলা পর্যন্ত সিড়ি ডিঙ্গিয়ে উঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশের হাতে আটক ও রিমান্ড নির্যাতনের পরও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। এমনকি কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা যায়নি। এ ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নারী সংগঠন সেমিনার করতে এলে সেখান থেকেও আটক করা ১৩ জন নারীকে। নারীদের আটক করতে গিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব ঘিরে রাখে র্যাব ও পুলিশ।

এ ঘটনায় বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নিন্দা জানালেও তাতে কান দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৫৪ ধারায় আটক এসব নারীকে আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত চার বছরে পর্যায়ক্রমে নারী নির্যাতন বেড়েই চলছে। আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না নির্যাতিত নারীরা। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সংরক্ষিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, ২০০৯ সালে সারাদেশে নারীর ওপর নিপীড়ন, ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, যৌন নির্যাতন শ্লীলতাহানি ও নারী-শিশু পাচারসহ নির্যাতনের ঘটনা ১২ হাজার ৯০৪টি।

২০১০ সালে ১৬ হাজার ২১২টি। ২০০৯ সালের তুলনায় সরকারি হিসাবেই ৩ হাজার ৩০৮টি অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটেছে। ২০০৯ সালে দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে ২ হাজার ৯৭৭টি। ২০১০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৪৪টি। তবে সরকারি হিসাবের চেয়ে বেসরকারিভাবে রক্ষিত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৭৪৩টি।

২০১১ সালে ১৬ হাজার ও ২০১২ সালে ১৮ হাজার ৯৪৭টি ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদন ও আমাদের অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো। অধিকারের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর এই নয় মাসে ৩৮৯ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪ জন আত্মহত্যা করেছেন, ২ জন নিহত, ২১ জন আহত, ১২ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন, ৪ জন অপহরণের শিকার, ৫৭ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ও ২৭৯ জন বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটে বা তাদের পরিবারের সদস্যদের আক্রমণে যথাক্রমে ৬ জন পুরুষ নিহত, ৪৫ জন আহত ও ৩৫ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং ৯ জন নারী আহত এবং ৪ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন।

এ সময় ৬৫১ জন নারী ও মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন । এর মধ্যে ২৩৯ জন নারী, ৩৮৪ জন মেয়েশিশু এবং ২৮ জনের বয়স জানা যায়নি। এ সময় ২৬ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৮৬ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ও ১ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। ৩৮৪ জন মেয়েশিশুর মধ্যে ৩১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৬৭ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৬৫১ জন ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর মধ্যে ৯ জন নারী ও শিশু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

এদের মধ্যে ১ জন নারীকে মাদারীপুর পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণ করা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল মডেল থানার এস আই রফিকুলের ভাইয়ের মেয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে (১৬) একই থানার কনস্টেবল রুহুল আমিনের ছেলে ফাহাদ থানার আবাসিক ভবনের ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করে। এ খবর পেয়ে থানার ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে মারজানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে মেয়েটি রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। গত ২১ আগস্ট খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কার্বারীপাড়া এলাকার ১১ বছরের এক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশু অটলটিলা পুলিশ ক্যাম্পের পাশে গরু চরাতে গেলে কনস্টেবল রাসেল রানা তাকে ধর্ষণ করে।

শিশুটিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধর্ষণের অভিযোগে রাসেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখিত সময় ৬৪৮ জন বিবাহিত নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ২১৭ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ৪১৯ জন বিবাহিত নারী বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই সময়কালে ১২ জন বিবাহিত নারী যৌতুকের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া যৌতুক সহিংসতার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন পুরুষ নিহত ও ১০ জন পুরুষ আহত হন এবং যৌতুকে কলহের কারণে ৩ জন শিশুকে হত্যা ও ১ জনকে আহত করা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর যশোর শহরের বারান্দিপাড়া লিচুতলায় নয়ন বেগম নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে যৌতুকের জন্য আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তার স্বামী আবু কালাম। ৮ জুলাই যশোর সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে যৌতুকের জন্য অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ সালমাকে (২০) তার স্বামী তিতুমির ও তার বাবা আইয়ুব আলী হত্যা করে ঘরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। অক্টোবর মাসেও নারীর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত ছিল এবং বিভিন্ন ভাবে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

অক্টোবর মাসে মোট ৩৪ জন নারী ও মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ১৩ জন নারী এবং ২১ জন মেয়েশিশু রয়েছে। এদের মধ্যে ২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং ৫ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২১টি মেয়েশিশুর মধ্যে একজনকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং ৫ জন গণধর্ষণের শিকার হয়। গত ৭ অক্টোবর রাজধানীর পশ্চিম মেরুল বাড্ডা এলাকায় দ্বিতীয় শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে দুই দুর্বৃত্ত ধর্ষণ করে।

অক্টোবর মাসে ৩৭ জন নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার হন। এদের মধ্যে ১৮ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে, একজন আত্মহত্যা করেছেন, একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীসহ ১৮ জন বিভিন্ন ভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়। গত ১১ অক্টোবর গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুরে সাবিনা (২৪) নামে এক গৃহবধূকে তার স্বামী শামসুল মিয়া যৌতুকের জন্য মারধর করে গুরুতর আহত করে। তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। ৬ অক্টোবর রাতে ভোলা জেলার দৌলতখান থানায় রুমা বেগম নামে কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় এসিড মেরে মুখমণ্ডল ঝলসে দিয়েছে তারই দূরসম্পর্কের আত্মীয় আবুল কালাম।

অক্টোবর মাসে মোট ৪৭ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন আহত, ২ জন লাঞ্ছিত, ৪ জন অপহৃত, ৭ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং ৩২ জন বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এ সময় যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটে কর্তৃক ৪ নারী আহত, এক পুরুষ নিহত ও ২২ পুরুষ আহত হয়েছে। নভেম্বর মাসে ৪৬ জন নারী ও মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ১৭ জন নারী, ২৬টি মেয়েশিশু এবং তিনজনের বয়স জানা যায়নি।

ওই ১৭ নারীর মধ্যে ৫ জন গণধর্ষণের শিকার, ২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ২৬টি মেয়েশিশুর মধ্যে ২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় এবং ৩ জন গণধর্ষণের শিকার হয়। ৬ নভেম্বর বগুড়ায় বিচারপ্রার্থী এক গৃহবধূকে কৌশলে একটি আবাসিক হোটেলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী টাউন পরিদর্শক আবদুল মালেক। গৃহবধূর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী টাউন পরিদর্শক আবদুল মালেককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ২৩ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

এদের মধ্যে একজন নারী যৌন হয়রানি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে, একজনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া একজন আহত ও ১৮ জন বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটে বা তাদের পরিবারের সদস্যদের আক্রমণে আহত ও লাঞ্ছিত হয়েছে ১৩ জন। প্রতিবাদকারী ৩ নারীর মধ্যে একজনের মা আত্মহত্যা করেছেন, একজন আহত ও অপর একজন লাঞ্ছিত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের চরগোয়ালদি গ্রামের এক স্কুলছাত্রীকে একই এলাকার শামীম ৬-৭ জন সহযোগীসহ প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত।

সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী রিমি এ লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে গত ১৭ নভেম্বর কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। গত নভেম্বর মাসে ২৪ জন নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ১৬ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে এবং ৮ জন বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার বাড়ইপাড়া গ্রামের এক কলেজছাত্রীকে (১৮) খোকসা থানার পুলিশ সদস্যরা আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা আসমাকে ৬দিন আটক রেখে বৈদ্যুতিক শক দেয়াসহ মানসিক নির্যাতন চালায়।

ওই ছাত্রীটির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১৩ সেপ্টেম্বর ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটির সরেজমিন তদন্ত করে ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পায়নি এবং পুলিশের বর্বরতার প্রমাণ পায়। গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন আমতলা চারতলা ব্র্যাক ক্লিনিকের তৃতীয় তলার একটি বিশ্রামকক্ষ থেকে ক্লিনিকের চিকিত্সক সাদিয়া আফরিন ইভাকে (২৭) ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। পরদিন ওই হাসপাতালের একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ইভার বাবার নাম মনিরুল ইসলাম।

তিনি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলা আদালতের পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই)। দক্ষিণখান থানার ওসি লোকমান হেকিম সাংবাদিকদের জানান, সাদিয়া আফরিন ইভা ব্র্যাক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিত্সক ছিলেন। গত ২৯ নভেম্বর ফয়সাল রুমে প্রবেশ করে ইভাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে বাধা দেয়ায় ডা. ইভার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ফয়সাল পালিয়ে যায়।

এছাড়া ২০১১ সালের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখায় এক ছাত্রীকে কোচিং সেন্টারে আটক করে শ্লীলতাহানির ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই বছর ২ জুন গাজীপুরের টঙ্গীতে এক তরুণী রাতে ঘরের বাইরে গেলে বাড়িওয়ালার ছেলে মইনুদ্দিন ও তার কয়েক সহযোগী তাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে এবং পরে তরুণীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। গুরুতর অবস্থায় মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ৫ জুন মারা যায়। বাগেরহাটে প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী। অপরদিকে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ভাবনপাড়া প্রাইমারি স্কুলের লম্পট প্রধান শিক্ষক ভজন কুমার শিকদার পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।

এ অভিযোগে তিন দিন পর থানায় মামলা হয়। জুলাই মাসে গাজীপুরে ধর্ষণের শিকার ৬ বছরের এক শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ঘটনায় স্থানীয় জনতা ধর্ষক জুয়েলকে (২৫) আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়। টঙ্গী থানার এসআই আবুল বাশার জানান, শিশুটির বাবা তরকারি ব্যবসায়ী আাাতাব উদ্দিন শবেবরাতের নামাজ পড়তে পাশের মসজিদে গেলে পাশের এরশাদ নগর এলাকার রহিম ব্যাপারীর বাড়ির ভাড়াটিয়া জুয়েল ঘুমন্ত শিশুটিকে উঠিয়ে স্থানীয় মোহাম্মদ আলী সিকদার একাডেমিতে নিয়ে যায়। নির্জন ওই স্কুল ভবনের দোতলা সিঁড়িতে শিশুটিকে ধর্ষণ করে।

এতে শিশু আল্পনা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার মালসাপাড়া মহল্লায় যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ঢাকার সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার মৃত্যু হয়। এদিকে চট্টগ্রামে এক কলেজছাত্রীকে আবাসিক হোটেলে আটক রেখে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার ওসি ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।