বন্ধুদের নিয়ে বাঁচি
পদ্মা পাড়ের জেলে কুবেরের সঙ্গে মেঘনা পাড়ের জেলেদের বেশ মিল রয়েছে। প্রিয় নদী দু'হাত খুলে তাদের যতই দিক, দু'পাড়ের জেলেদের ভাগ্য কিন্তু দাদন মহাজনদের কাছেই জিল্ফ্মি। এখন মেঘনায় ডাকাত নেই। নেই জলকর বাহিনী কিন্তু নিশান প্রথা আছে। আছে দাদনের অভিশাপ।
প্রতিদিন প্রায় 10 হাজার জেলে নৌকা ইলিশ শিকারে নামে। প্রত্যেক জেলে নৌকাতেই আছে বিভিল্পম্ন রংয়ের নিশান। রুপালি সমঙ্দ ইলিশকে ঘিরে মেঘনার তীর ও চরে যে মাছঘাটগুলো গড়ে উঠেছে তার একটি ঘাটের মালিকও জেলেরা নন। মহাজনরাই ঘাট মালিক। মহাজনের দেওয়া টাকায় তৈরি হয় জাল, নৌকা।
মৌসুম এলেই শিকার করা ইলিশ মহাজনের ঘাটে পেঁৗছে দিয়ে কৃতজ্ঞতায় নত হন প্রানস্নিক জেলেরা।
নৌকায় আর মাছঘাটে নিশানের রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে চমকপ্রদ কাহিনী। জেলেরা নির্ভয়ে মাছ শিকার করতে পারলেও নিশান আর দাদন এখনো তাদের গলার ফাঁস হয়ে আছে। অফ সিজনে মহাজনরা টাকা দিয়ে জেলেদের বাঁচিয়ে রাখেন। ওই টাকাই 'দাদন' নামে খ্যাত।
মেঘনার 90 শতাংশ জেলে দাদনভোগী। যে মহাজনের কাছ থেকে দাদন নেওয়া হয় সেই মহাজনকেই মাছ দিতে হবে দাদনভোগী জেলেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা জানান, দাদন নেওয়ার ফলে মহাজন যে দাম দেয় সেই দামেই জেলেকে মাছ বিত্রিক্র করে সন্তুষদ্ব থাকতে হয়। দাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিশান। মেঘনা বক্ষে নিশান ছাড়া জেলে নৌকা সহসা চোখে পড়ে না।
একেকজন মহাজনের নিশানের রং একেক রকম। প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার দীর্ঘ মেঘনার মহাজনী যাদের হাতে তারা হলেন_ মকবুল দফতরী, অপু চৌধুরী, আবদুল গফফার তালুকদার, নজরুল ইসলাম মিলন, খালেক মাঝি, নুর মোহাল্ফ্মদ সরদার, ফারুক খান, সোলায়মান মিয়া প্রমুখ। এর মধ্যে মকবুল দফতরীর নিয়ন্পণাধীন মাছঘাট ও জেলে নৌকার নিশানের রং সাদা, কালো এবং লাল। অপু চৌধুরীর নিশানের রং হলুদ এবং কালো। গফফার তালুকদারের নিশানের রং হলুদ ও লাল।
নজরুল ইসলাম মিলনের নিশানের রং লাল, সবুজ ও হলুদ। জেলেরা জানান, 1996 সাল থেকে চালু হয়েছে এ নিশান প্রথা। নিশান ছাড়া মেঘনায় ইলিশ শিকারে যেতে পারেন না জেলেরা। দাদন না নিলেও মহাজনের নিশান নিয়ে মেঘনায় শেল্কল্টার নেয় জেলেরা। বিশিষদ্ব ইলিশ ব্যবসায়ী আবদুল গফফার তালুকদার জানান, অনেক সময় জাল ফেলতে গিয়ে জেলেদের মধ্যে বিবাদ হয়।
তখন সালিশ-দরবারের জন্য নিশান দিয়ে জেলেদের চিহিক্রত করা হয়। মেঘনার একাধিক ইলিশ ব্যবসায়ী জানান, বৈশাখ মাসে তারা দাদন দিতে শুরু করেন। 10 হাজার থেকে সর্বোচ্চ 1 লাখ টাকা দাদন দিয়ে থাকেন জেলেদের। মৌসুম এলে জেলেরা ইলিশ দিয়ে ওই দাদনের টাকা শোধ করে। সাধারণ জেলেদের অভিযোগ, দাদন নেওয়ার ফলে তারা আর মাছের ন্যায্য দাম পান না।
মহাজন যে দাম দেন সে দামেই মাছ বিত্রিক্র করতে হয়। দাদনভোগী শত শত জেলে মনে করেন, সরকারের সংশি্নষদ্ব মন্পণালয় প্রতি অফ সিজনে যদি জেলেদের সহজ শর্তে ঋণ দিত তাহলে জেলেরা মৌসুমে ওই ঋণ শোধ করতে পারত। আর সেক্ষেত্রে প্রানস্নিক জেলেরা পেত ন্যায্যমহৃল্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।