আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবুর জন্য বাড়িয়ে দেয়া হাত।এছাড়া এক জন সাংবাদিকের কিছুই করার আছে কি?

যা কিছু মাথায় আসে

মাত্র 20 টাকার জন্য বাবু দিনভর খাটে আত্রাই থেকে পার্বতীপুর। দুরত্ব খুব বেশি হলে 30 কিলোমিটার। এই স্বল্প দুরত্বের রেল পথের উপরেই নির্ভর করে বাবু আর তার মা-ভাইয়ের দিন যাপন। এর উপর নির্ভর করে ক'বেলা কতটুকু খাবে তারা। 8-9 বছর বয়সের বাবু।

পুরো নাম নূর মোহাম্মদ বাবু। নিস্পাপ চেহারার এই ছেলেকে আত্রাই-পার্বতীপুরগামী যে কোন ট্রেনে উঠলেই পাওয়া যাবে। মলিন প্রায় গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরে ঘুরছে বগী থেকে বগীতে। এভাবে তার সারা দিনই প্রায় কেটে যায়। আর সারা দিন সে মাত্র 20 টাকার জন্যে খাটে।

এই 20 টাকায় রাতের খাওয়া হবে বাবু আর তার মা-ভাইয়ের। বাবুর স্বপ্ন ছিলো সে পাইলট হবে, আর ছোট ভাইকে বানাবে ডাক্তার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। যে বয়সে তার স্কুলে যাবার কথা সেই বয়সে সে বাধ্য হয়েছে ভিাবৃত্তি বেছে নিতে। মা জবা খাতুন ও ছোট ভাই রুবেলকে নিয়ে আত্রাই রেলওয়ে সংলগ্ন বস্তিতে থাকে বাবু।

জবা খাতুন কাজ করে অন্যের বাড়ীতে। কিন্তু তাতেও তিন জনের চলতে কষ্ট হয়। বাবার কথা জানতে চাইলে বাবু জানায়, "মইরা গেছে। মা আরেকখানে বিয়া করছেলো হেও পলাইছে। কিন্তুক আমি তার আশায় থাকি না।

" বাবুদের বাড়ী ছিলো গাইবান্ধার চর কালাসোনাচাঁদে। তখনও জন্ম হয় নি ছোট ভায়ের। বাবা আফসার উদ্দিন ছিলো কৃষক। আয় যা হতো তা দিয়ে তিনজনের পেট ভরতো কোন মতে। তারপরও তিন জনের সুখের সংসার।

এরপর ভীটে-মাটি নদীর বুকে গেলে আফসার উদ্দীনের পরিবার নিয়ে আত্রাই রেলস্টেশন ছাড়া মাথা গোঁজার কোন জায়গা ছিলো না। আর তাই সামান্য অর্থের বিনিময়ে আত্রাই স্টেশনের এক ঝুপরিতে স্থ্ান হলো তাদের। কিন্তু 2001 সালে আফসার উদ্দীনের মৃতু্যর পর আবারও সমস্যার শুরু। তারা খাবে কি , থাকবে কোথায় ? ফলে বাধ্য হয়ে জবা খাতুন কাজ নেয় অন্যের বাড়ীতে। কিন্তু অন্তঃসত্তা মায়ের খাটুনি দেখে সহ্য হয়নি বাবুর।

তাই তো প্রথম শ্রেনী পাশ করেই বিদায় জানায় লেখা-পড়াকে। তবে লেখাপড়ার মূল্য সে জানে। "তয় ছোট ভাই ডারে পড়া-শুনা করামু। ডাক্তার বানমু। কমু বিনা ট্যাকাই চিকিসস্যা করাবি।

"- তার কথা সেটাই প্রমান করে। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাবু ট্রেনের বগীতে ঘুরে বেড়ায় মাত্র 20 টাকার জন্য। তিন জনের জন্য যথেষ্ঠ। আর দুপুরের খাবার যোগাই মা। মাঝে মাঝে এই সামান্য টাকা যোগাড় করতে গিয়ে মাঝরাত পেরিয়ে যায়।

আর আগে ভাগে যদি টাকা যোগাড় হলেই কাজ বন্ধ। দিব্যি গল্প জুড়ে দেবে ট্রেনের যাত্রীদের সাথে। ট্রেনের স্টাফ ও নিয়মিত যাত্রীরা পছন্দও করে তাকে। তাই তো রেল পুুলিশের এ. এস. আই. আনিসুর রহমানকে দেখেই পুলিশি কায়দায় স্যালুট দিয়ে বলল, "জানেন বরেন্দো এঙ্পেসে এক আইসকিমআলা আমার নয় টাকা চুরি করেছে। " যাত্রীদের সাথে বাবুর ভালো সম্পর্কের আরও একটু উদাহরন পাওয়া গেল ট্রেন সান্তাহার জংশনে এসে দাঁড়াতেই।

কথা বলতে বলতেই বাবু পাশের লাইনে দাঁড়ানো সিমান্ত এঙ্প্রেসের এক ব্যাক্তির সাথে কথা জুড়ে দিলো। আলাপ চলল ট্রেন ছাড়ার আগ পর্যন্ত। এরকম টাকা চেয়ে খেতে বাবুর আর ভালো লাগে না। সে পড়াশোনা করতে চায়। চায় তার ছোট ভাইকে ডাক্তার বানাতে।

আর দুঃখী মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে। কিন্তু বাবু কিংবা তার মতো হাজারও বাবু জানে না পূর্ন হবে কিনা তাদের স্বপ্ন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।