'... আমাদের আশার কোনো পরকাল নাই'
এরশাদ কী চিজ তা জানতে হলে আপনার এটাও জেনে রাখা উচিত তিনি বিদিশাকে দু'বার বিয়ে করেছিলেন। এরশাদের সাবেক শাশুড়ী ও শ্যালকের সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ দিয়েছিলাম গতকাল। আজ দ্্বিতীয় ও শেষ কিস্তিতে থাকছে সেই বিষয়টিই।
একাধিক ডায়েরিতে বিদিশা লিখে রেখেছেন এরশাদসহ জাতীয় পার্টির বেশ কিছু নেতার নানান অপকর্মের কথা। বিদিশার মা আনোয়ারা সিদ্দিক মনে করেন, এসব ডায়েরি ঘাঁটলেই বেরিয়ে আসবে আসল 'রাষ্ট্রদ্রোহী'র পরিচয়।
বিদিশা যা কিছু করেছে, সব এরশাদের কথামতোই করেছে। এরশাদই তাকে শিখিয়েছে, কোথায় কী করতে হবে। এরশাদের এসব নির্দেশের একমাত্র সাী বিদিশার ওইসব ডায়েরি। মঙ্গলবার সকালে বিদিশার মা'র কাজলার বাড়িতে কথা বলার সময় তিনি সমকাল প্রতিবেদকের সঙ্গে এভাবেই কথা শুরু করেন। ডায়েরিগুলোর কয়েকটি পুলিশ উদ্ধার করেছে_ একথা জানিয়ে তিনি বললেন, ডায়েরির সত্য কথাগুলো প্রকাশ হলে আপনারা সবাই অনেক অজানা কথাই জানতে পারবেন।
তবে এসব ডায়েরিতে বিদিশার লেখা কথাগুলো যেনও বিকৃত না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি দাবি করেন তিনি।
বিদিশার মা আরও বললেন, 'বিয়ের পর থেকেই এরশাদ বিদিশাকে নানাভাবে অত্যাচার করেছে। গায়ে হাত তোলে নি ঠিকই, কিন্তু যেভাবে মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না। মাস ছ'য়েকের কিছু বেশি আগে বিদিশা আমাকে নিউইয়র্ক থেকে ফোন করে এরশাদসহ জাতীয় পার্টির বেশ ক'জন নেতা সমঙ্র্কে বলে, এরা যে এতো জঘন্য তা ভাষায় বলার মতো না। এদের অপকর্ম সব আমি জেনে গেছি।
ওরা যেকোনও সময় আমাকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে। বিদিশার কথা শুনে আমি তাকে সব কথা ডায়েরিতে লিখে রাখার পরামর্শ দিই। সেই থেকে বিদিশা ডায়েরিতে ওদের সব অপকর্ম লিখে রেখেছে। এইসব ডায়েরি পড়লেই বেরিয়ে আসবে এরশাদ ও জাতীয় পার্টির কিছু নেতার সব অপকর্মের কথা। ' এসব অপকর্ম কী ধরণের হতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে বিদিশার ছোটভাই সাম্য বলেন, এমন কোনও অপকর্ম নেই যা তারা করে নি।
এখন বলা হচ্ছে, বিদিশা রাষ্ট্রদ্রোহী। কিন্তু বিদিশা যা করেছে, তা সবই তো এরশাদের নির্দেশে। এসব কিছুই তার ডায়েরিতে পাওয়া যাবে। সাম্য আরও জানান, বিদিশা রাজনীতির কিছুই বুঝতো না। এরশাদই তাকে রাজনীতি শিখিয়েছে।
পঞ্চগড়ে এরশাদ তাকে বক্তর্ৃতা দেয়া পর্যন্ ্ত শিখিয়েছে। বিদিশার মা দাবি করেন, বিদিশা ভারতের ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছিলো পুত্র এরিকের পায়ের চিকিৎসার জন্য। এরিকের চিকিৎসা শেষে সেখান থেকে ফিরতে চাইলে এরশাদই হঠাৎ করে বিদিশাকে ফিরতে মানা করে। এরশাদ তাকে বেশ ক'জনের তালিকা দিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করে আসতে বলেন। এরশাদের কথামতোই বিদিশা পুত্র এরিককে এরশাদেরই এক ঘনিষ্ঠজনের হাতে দেশে পাঠিয়ে দিয়ে ভারতে থেকে যায় এবং এরশাদের দেয়া তালিকা অনুযায়ীই সবার সঙ্গে দেখা করে।
এখন ওই 40 দিন ভারতে অবস্থানের কারণে বিদিশাকে যদি রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়, তাহলে আসল রাষট্রদ্রোহী তো তার নির্দেশদাতা_ এমনটিই মনে করেন বিদিশার মা আনোয়ারা সিদ্দিক।
বিদিশার রাজশাহীর দিনগুলি
বিদিশার পরিবারের ঘনিষ্ঠ স ত্র ও কাজলা এলাকার অধিবাসীদের স ত্রে জানা গেছে, 5 বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় বিদিশা যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে পড়তো, তখন থেকেই ক্যামঙ্াসে তাকে নিয়ে নানান কাহিনী ভাসতো বাতাসে। 1984 সালে তার বাবার বিভাগেই খণ্ডকালীন শিক হিসেবে আসেন বৃটেনের নাগরিক পিটার উইলিয়ামস। বাবার বন্ধু হবার সুবাদে ওই বিদেশি শিকের অবাধ যাতায়াত ছিলো বিদিশাদের বাড়িতে। এই সুযোগে সখ্য গড়ে ওঠে বিদিশা-পিটারের; একসময় তা রূপ নেয় প্রেমে।
মাত্র 14 বছরের বিদিশাকে 1986 সালে বিয়ে করে লন্ডন নিয়ে যান 40 ছুঁই ছুঁই পিটার। সেসময় বিদিশা ছিলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী। এসএসসি পরীাও সে রাজশাহীতে দিয়ে যেতে পারে নি। লন্ডনে বিদিশা জন্ম দেন দুই সন ান। কাজলাবাসী বিদিশাকে আবার দেখতে পান 1999 সালে।
ততোদিনে বাবার সঙ্গে সমঙ্র্কের টানাপোড়েনের কারণে বিদিশার মা তার 3 বোন ও ভাই সাম্যকে নিয়ে রাজশাহীতে আলাদা বাসায় থাকেন। বিদিশা ফিরে আসে পুত্র এরিককে নিয়ে। মা-ভাই-বোনদের নিয়ে ওঠে কাজলা অক্ট্রয় মোড়ে অবস্থিত বাতায়ণ নামের এক দোতলা বাসায়। ওই বাসার মালিক রাবির বর্তমান ট্রেজারার প্রফেসর আবদুল জব্বার খান। বিদিশা ও তার পরিবারের সদস্যরা সবাইকে সেই সময় জানায়, এরিক তার মৃত বোনের সন ান।
এই এরিককে 4 মাস গোপনে লালন করেন বিদিশার মা আনোয়ারা সিদ্দিক নিজে। 2000 সালে এখন যে স্থানে বাসা, সেখানে জমি কিনে মাকে বাড়ি বানিয়ে দেয় বিদিশা। পরিবারের ঘনিষ্ঠ স ত্রগুলো দাবি করেছে, এসব কিছুই করে দিয়েছেন এরশাদ। এমনকি দু'বোনকে দেশের বাইরে পাঠানো ও ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ সবই জোগাতেন এরশাদ। তবে এসব কথা স্বীকার করেন নি বিদিশার পরিবারের সদস্যরা।
বিদিশার মা জানান, এরশাদ নয়, বিদিশাই তাদের পরিবারের সমস খরচ বহন করতো। তিনি বলেন, 'এই মেয়ে আমাদের পরিবার বাঁচিয়ে রেখেছে। ' ভাই সাম্য বলেন, একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতোই বিদিশা তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন এবং খরচ জুগিয়েছেন। বিদিশার মা আরও জানান, এরশাদ বিদিশাকে দু'বার বিয়ে করেছেন। গোপনে বিয়ের পর দ্বিতীয়বার আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয় 1999 সালে।
সেখানে দেনমোহরের পরিমাণ ছিলো 5 লাখ টাকা।
প্রতিবেদনটি সমকালে বেরিয়েছিলো 8 জুন 2005। সেখান থেকে নেয়া চুম্বক অংশ এটি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।