আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিকে দেখে এলাম....

http://nilkhota.blogspot.com/

মৃতু্য নয়, মৃতু্য নয় মরণেরও অন্য মানে আছে... যখন পেঁৗছলাম, তখন শহীদ মিনারের আশপাশ সত্যিকার অর্থেই লোকে লোকারণ্য। বাংলা ভাষার সৈনিক, দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান শহীদ মিনারে এসেছেন সকাল 10টা 25 মিনিটের দিকে। তার আগেই হাজির হয়ে গিয়েছিলেন কবির ভক্তরা। সময় যতো গেছে, রোদের প্রখরতা যতো বেড়েছে, বেড়েছে মানুষের ভিড়ও। গণিত ভবনের দিক থেকে ঢুকতে গিয়েই দেখলাম একটা টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।

বলছিলেন কবির সঙ্গে তার নানা স্মৃতির কথা। একটু এগোতেই দেখলাম শিল্পী হাশেম খানকেই। তিনি বলছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কবির ভূমিকার কথা। আর তখন লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন কবির ভক্তরা। উদ্দেশ্য চিরনিদ্রায় শায়িত কবিকে এক নজর দেখা।

সেই লম্বা লাইন একেবেঁকে এতো লম্বা হয়ে যায় এক মাথা থেকে আরেক মাথা দেখা যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পর অবশ্য লাইন আর একটা থাকেনি। স্রোতের মতো মানুষ এসেছে...। আসলে সেই মানুষের স্রোতে কে ছিলেন না? সৈয়দ হক, শাহরিয়ার কবির, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী থেকে শুরু করে পুরনো ঢাকার ঘুরি ওড়ানো ফেডারেশন, আদিবাসী সংগঠন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা কবি আর সর্বসাধারণ, রাজনীতিবিদ সবাই দাঁড়িয়েছেন লাইনে। চোখের জল ফেলে শামসুর রাহমানকে জানিয়েছেন ফুলেল শ্রদ্ধা।

এসেছিলেন কবির গ্রাম পাহাড়তলীর কিছু তরুণও। আসলে সব মত যেন এক হয়ে মিশেছিল আজ শহীদ মিনারে। মঞ্চে তখন রামেন্দু মজুমদার বলে যাচ্ছিলেন কবির তো আসলে মৃতু্য হয়নি; কবির মৃতু্য হয় না। 80টির বেশি কাব্যগ্রন্থদিয়েই বেঁচে থাকবেন তিনি। শুধু কি কবিতাতেই সীমাবদব্দ ছিলেন তিনি? আরেকটু যোগ করলেন লেখক শাহরিয়ার কবির, 'এতো কম কথা বলা একটা মানুষ ছিলেন তিনি, কখনোই কথা বলে বোঝা যায়নি তার ভেতরে এতো আগুন! কবিতার মধ্য দিয়েই সেই আগুন ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

আমাদের প্রতিটি আন্দোলনে আমরা পেয়েছি তাকে। স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণঅভু্যত্থান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কোথায় ছিলেন না তিনি?' সত্যিই আরেকটা শামসুর রাহমান আর হয়তো পাবো না আমরা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি 12টা 35 মিনিট। কবি কিছুক্ষণ পরই শেষবারের মতো ছাড়বেন শহীদ মিনার। লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম।

দেখলাম সাদা কাফনে জড়ানো কবিকে। কবি ঘুমিয়ে আছেন! এরপর ঘুমন্ত কবি উঠে এলেন ভক্তদের কাঁধে। কাঁধে চড়েই তিনি গেলেন প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আমাদের কৃষ্ণপক্ষে রেখে কবি তখনও ঘুমে! কবিকে রেখে চলে এলাম...হাঁটা ধরলাম শাহবাগের দিকে। মনটা কেমন যেন বিষাদে ভরে আছে।

গলার কাছে কস্ট আটকে গেছে। আমি কিছুতেই তা এড়াতে পারছি না। বলেও বোঝাতে পারছিনা! কবি আমার কি হন? রক্তের কেউ? না তো। তাহলে? চারুকলার সামনে এসেই নিজের মন থেকে উত্তর পেলাম শামসুর রাহমান তো স্বজনের চেয়েও বেশি কিছু। সত্যিই এটা মৃতু্য নয়, এমন মরণেরও অন্য মানে আছে... ................................. শুক্রবার, দুপুর 2.40 মিনিট।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।