পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ
মাথার পাশের ক্যাটক্যাটে কমলা রঙের আলোগুলো হঠাৎ জ্বলে উঠলো। তিনটা জ্বলার কথা, জ্বললো দুইটা। একটা মনে হয় কোন কারণে ফিউজ হয়ে গেছে। একটু পরেই টাইম ক্যাপসুলের ঢাকনা দুইটা ক্যাচক্যাচ শব্দে খুলে গেলো। ধোলাই খালে বানানো জিনিস- কোনই ভরসা নাই- মাত্র কয়েকশ বছরেই মরিচা ধরে গেছে!
দরোজা খুলতেই তৃতীয় মাত্রার বুদ্ধিমান অ্যালার্ম ঘড়ি তারস্বরে চিৎকার করতে লাগলো, " ওস্তাদ ওঠেন, সময় হয়ে গেছে।
ও ওস্তাদ ওঠেন। '
কিন্তু মহামতি আকামেরডিস উঠবার কোন লক্ষনই দেখালেন না। তিনি গরিলার মত বিশাল হা করে, আ-আ-আ শব্দ করে একটা হাই তুলেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন।
তৃতীয় মাত্রার বুদ্ধিমান অ্যালার্ম ঘড়ি এবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে গলার আওয়াজ বাড়িয়ে দিলো- " ওস্তাদ ওঠেন, সময় হইয়া গেছে! আরে ও ওস্তাদ- ওঠেন না! সময় হইয়া গেছে তো!'
কিন্তু তবুও মহামতি আকামেরডিসের কাছ থেকে কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে হঠাৎ ঘড়িটা ঘোঁতঘোঁত করে তীব্র স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো- " ধুৎ, তোর ওস্তাদের খ্যাতা পুড়ি! ওঠ হারামজাদা! ওঠ!'
মহামতি আকারমেডিস ধড়মড় করে উঠে বসলেন! উফ, কি ভয়ংকর এক দু:স্বপ্নই না দেখছিলেন তিনি। মিশমিশে কালো কিছু মিচকা বদমাশ তার আজানুলম্বিত দাঁড়ি ধরে টানাটানি করছে!
টাইম ক্যাপসুল থেকে বের হয়ে তিনি চারপাশে তাকালেন।
প্রায় অন্ধকার একটা ঘর। কোথায় এসে নামলেন তিনি? কয়েকশ বছর আগে টাইম ক্যাপসুলে ওঠার সময় সেট করেছিলেন, যেন 2006 সালে এই ছোট্ট ব-দ্্বিপের সবচে ক্ষমতাবান ব্যাক্তির বাসভবনে এসে নামেন। কিন্তু বাড়ির অবস্থা দেখে তো সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না! হতদরিদ্্র অবস্থা। দেয়াল হাতড়ে দেখলেন বেশ কিছু সুইচ আছে, কিন্তু কোনটাই কেন জানি কাজ করছে না!
নিজের থলথলে ভুঁড়িটা ঘ্যাস ঘ্যাস করে চুলকাতে গিয়ে আকামেরডিস হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তার গায়ে কাপড় চোপড়ের নাম গন্ধও নেই! একেবারে নেংটা বাবা যাকে বলে!
ব্যাপার কি? এমুন তো কথা ছেলুনি! অন্তত নিজের কিসমিস ব্র্যান্ডের লুংগিখান না পরে তো তিনি কোথাও যান না!
আহা বড়ই প্রিয় লুংগি তার। মাঝে মাঝে রাজার সাথে দেখা করতে গেলেও সেই লুংগিখানই মালকোচা মেরে তার উপর পাতলুন চাপিয়ে চলে যেতেন।
সারাজীবন এর কল্যানেই তো একটাও আন্ডারওয়্যার কিনতে হলো না!
চিন্তায় পড়ে গেলে মহামতি আকামেরডিসের পেট চুলকানোর মাত্রা বেড়ে যায়। লুংগিটা যে কোথায় হারালেন সেটা ভাবতে ভাবতে তিনি দরজা খুলে পাশের রুমে ঢুকতেই দেখেন সেইটা একটা বাথরুম! আর কিম আশ্চর্যম, সেইখানে একটা বাথটাবও সেট করা। আকামেরডিসের মন খুশিতে ধেই ধেই করে উঠলো। পানি ভর্তি করে তিনি মনের আনন্দে জলকেলি করতে লাগলেন।
কিন্তু মাথার মধ্যে থেকে থেকেই সেই এক চিন্তা, লুংগিখান গেলো কই??
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনে পড়লো- সেদিন টাইম ক্যাপসুলে চড়বার আগে তিনি নদীর ধারে গেছিলেন প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে।
কিন্তু সকালবেলা বি(এ)ডি ফুডসের চানাচুর খেয়ে তার পেটটা ভুডভুড করছিল। হঠাৎ প্রকৃতি তাকে এমন জোরেই ডাক দিলো যে তিনি খেই হারিয়ে লুংগি খুলে রেখে পাশের ঝোপে ঢুকে গেলেন। কার্য সমাধার পরে আনমনে হাটতে হাটতে কখন যে লুংগি ছাড়াই বাড়ি পৌছে গেছেন নিজেও টের পান নাই!
হঠাৎ করে নিজের হারানো লুংগি ফিরে পাবার আনন্দে মহামতি আকামেরডিস সথান কাল ভুলে এক লাফে বাথটাব ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর "ইউরেকা, ইউরেকা' বলে চিৎকার করতে করতে বাড়ি হতে বের হয়ে এলেন!
------------------
বাড়ির চারপাশে ড্যাবড্যাব বাহিনি কালো বন্দুক উঁচা করে দাঁড়িয়ে আছে। ইংরাজি ভাইকে তারা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে।
যেকোনো সময় সে আত্মসমর্পণ করবে।
ড্যাবড্যাব বাহিনির প্রধান জনাব আজরাইল আলি, যিনি কানে একটু কম শোনেন, সারারাত জাগার ক্লান্তিতে ঘুমে ঢুলু ঢুলু প্রায়।
তক্ষুনি বাড়ি হতে হাঁটু সমান দাঁড়িওয়ালা এক লোক চিৎকার করতে করতে ছুটে আসলো। দাঁড়ি দেখে কোন সন্দেহই রইলোনা যে এটাই তাদের বহু প্রতীক্ষিত ইংরাজি ভাই।
আজরাইল আলি হুকুম দিলেন, ধর ব্যাটারে!
ড্যাবড্যাব বাহিনির সদস্যরা সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
কিন্তু দাঁড়ির আড়ালে তার হাত-পা খুঁজে না পেয়ে শেষে দাঁড়ি ধরেই তাকে আটকালো।
মহামতি আকামেরডিস তখনো বলছেন, ইউরেকা ইউরেকা! কানে খাটো আজরাইল আলী শুনলেন, জুলেখা, ও জুলেখা! তিনি চমকে উঠলেন! ইংরাজি ভাইয়ের মুখে তার বউয়ের নাম কেন?? কয়দিন ধরেই বউকে সন্দেহ করছিলেন, তবে কি তার বউ এই ইংরাজি ভাইয়ের সাথেই ...।
তিনি আকামেরডিসের কাছে গিয়া হুংকার করলেন, হারামজাদা, আমার বউরে তুই চিনস কেমনে?
মহামতি আকামেরডিস বাংলা না বুঝে আবারো বললেন, ইউরেকা ইউরেকা!
এইবার এই জুলেখা ডাক সোজা গিয়া আজরাইলের বুকে ধাককা মারলো! তিনি হাতের ডান্ডা দিয়া মহামতি আকামেরডিসের পশ্চাদ্দেশে মারলেন দুই বাড়ি!
ব্যাথার চোটে মহামতি আর্তচিৎকার করে উঠলেন, " মার ডালা!' ( বলা বাহুল্য- ভবিষ্যৎ দর্শনের মেশিনে তিনি সারাক্ষনই হিন্দি ছবি দেখতেন। মিস ওয়ার্লড দিলধরিয়া খাই- এর এই গানটি তার বিশেষ প্রিয় গান!)
কিন্তু হিতে বিপরীত। আজরাইল এবারে মার ডালা-রে শুনলেন বিমান-বালা! তিনি চমকে উঠলেন, সর্বনাশ! এতো দেখি বউয়ের চাকুরির খবরও জানে!
তেড়ে ফুঁড়ে তিনি মহামতি আকামেরডিসরে খানিক্ষন দুমাদ্দুম পেটালেন!
অত:পর, দু:স্বপ্ন সত্য করে আজরাইলের নির্দেশে ড্যাবড্যাব বাহিনির লোকেরা মহামতি আকামেরডিসের দাঁড়ি ধরে তাঁকে চ্যাংদোলা করতে করতে রাজার বাড়ি- অর্থাৎ রংগভবনের দিকে নিয়ে চললো।
এদিকে-
ইংরাজি ভাই তার টাকে হাত বুলাতে বুলাতে ফোনের নম্বর ঘুরিয়ে তার বন্ধু জর্জ ঠুসের বাড়ি ব্ল্যাক হাউসে ডায়াল করতে লাগলেন। খবর পেয়েছেন, খানসামা বিন হ্যাভেন নাকি ইদানিং সেখানেই আস্তানা গেঁড়েছেন! তাকে খবরটা জানানো দরকার।
(ক্রমশ: হইলেও হইতে পারে। তবে চান্স কম। )
---------------------------
উৎসর্গ :: মুখফোড় ও রাসেল ( অষ্টডটু)- বাংলা সাহিত্যের এই বিশেষ শাখায় যাদের নির্দিধায় আকামেরডিসের সম্মান দেয়া যায় ! :-))
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।