চারদিকে যখন স্লিম হওয়ার প্রতিযোগীতা ঠিক সেই সময় আমার অনার্সের শেষ দিকে এসে মনে হল যে মোটা না হলে আমার জীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়বে। যার সাথে দেখা হয় সে-ই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ কপালে তুলে বলে -
‘এ কী! তোমার কি কোন অসুখ হয়েছে?’
’ তুমি এত রোগা হয়ে গেছ কিভাবে?
‘কোন সমস্যা?’
‘তোমাকে এত শুকনা দেখাচ্ছে যে বালক-বালক মনে হচ্ছে। ’
আমি কৈশোরে প্রচুর খেলাধুলা করেছি। কলেজে এসে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ(মার্শাল আর্ট) করেছি। পেট বেড়ে যাওয়া, মোটা হওয়াকে সব সময় অপছন্দ করেছি।
আমার স্বাস্থ্য ছিল ঝরঝরে, ফিট। কখনওই ক্লান্তি বোধ করতাম না। সবার কথাবার্তায় সেই আমারই উল্টা মনে হওয়া শুরু হল। আয়নায় নিজেকে দেখলে মনে হত যেন এই মাত্র কবরের ভিতর থেকে কঙ্কাল হয়ে উঠে এসেছি। মোটা হতে হবে।
কিন্তু মোটা হওয়া যায় কিভাবে? এই প্রশ্ন যাদের করেছি তাদের মধ্যে অধিকাংশই একটা কমন উত্তর দিয়েছে যে, বেশি করে খেতে হবে। আমার বন্ধু রাকিব বেশ গাট্টাগোট্টা। সে বলল - ‘ আমি এক বসাতে তিন প্লেট ভাত খাই। ’ জামতলায় একদিন আমার কলেজ জীবনের বান্ধবী সোমার সাথে দেখা। কলেজে থাকতে সে একেবারে শুকনো টিং-টিংয়ে ছিল।
কিন্তু রিকশায় বসা তাকে এত মোটা দেখাচ্ছিল যে ঠিকমত চেনাই যাচ্ছিল না। শুধু মাত্র তার এই মোটা হওয়ার রহস্য জানার জন্য একদিন তাদের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। কথায় কথায় সোমা আমাকে বলল - তুমি কিন্তু দেখতে একেবারে আগের মতই আছ। কোন চেঞ্জ নেই।
- কিন্তু তুমি এত মোটা হলে কিভাবে?
- ভাত খেয়ে।
- ভাত খেয়ে?
- হ্যাঁ। আমার গ্যাসট্রিকের সমস্যা ছিল, গ্যাসট্রিকের ব্যথা উঠত। ডাক্তার বলল, না খেতে খেতে এমন হয়েছে। তোমার একটাই ওষুধ, শুধু খাওয়া। গ্যাসট্রিকের ব্যথা উঠলেই ভাত খাবে।
আমি ওষুধের মত ভাত খেয়েছি। ভার্সিটিতে ক্লাস করতে যাওয়ার সময় সাথে টিফিন বক্সে ভাত নিয়ে যেতাম। ব্যথা হলেই ভাত। ঢাকা থেকে আসার সময় বাসেও ভাত খেয়েছি। ভাত খেয়েই শরীর এমন ফুঁলে গিয়েছে।
এ্যালবামে আমার আগের ছবি দেখলে এখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। কী স্লীম ছিলাম। আর এখন কেমন মোটা হয়ে গিয়েছি।
এ্যাব্রাহাম নামে আমার যে বডিবিল্ডার বন্ধু আছে সবাই বলে তার আসল নাম ইব্রাহীম। ভাব নেওয়ার জন্য সে সেটাকে করেছে এ্যাব্রাহাম।
তার সম্পর্কে অন্যদের আরেকটি অভিযোগ হল, সে বেশি কথা বলে। সে কথা বেশি বলে সেটা ঠিক আছে কিন্তু আমি দেখেছি সব গুলো কথাই গুরুত্বপূর্ণ। সে যে বলিবিল্ডিং করে এই ব্যপারেও তার ব্যপক জ্ঞান। সে অন্যদের মত প্রচলিত জিমনেসিয়ামে গিয়ে হাতের কাছে যেটা পাওয়া যায় সেই ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে লাফ-ঝাপ শুরু করেনি। যখন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ দরকার হয়েছে তখন সেটা করেছে।
যখন ইন্সট্রুমেন্ট দরকার সেটা নিয়েছে। ইন্টারনেট থেকে সে ভিডিও থেকে শুরু করে সব তথ্য জোগার করেছে। আমি তার কাছে গেলাম। শহীদ মিনারে অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে তাকে আলাদা করে ডেকে এনে বললাম- শোন, তোমার সাথে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
- কী কথা?
- আমি মোটা হতে চাই।
- হুঁ।
তাকে সবকিছু খুলে বললাম। সে মনযোগ দিয়ে শুনে বলল - ওজন কিভাবে বাড়াতে হয় তা আমি জানি। কিন্তু বলব না।
- কেন?
- কারণ ওজন বাড়ানোর জন্য যা যা করতে হবে সেগুলো তুমি পারবা না।
শুধু শুধু কথা বলে মুখ ব্যথা করতে চাই না।
- আমি পারব। এটা আমার জীবন মরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়াইছে।
এই ব্যপারে যে আমি কত সিরিয়াস দীর্ঘক্ষণ সেটা বুঝিয়ে তাকে রাজি করানো গেল। সে বলল - প্রথমে তোমাকে বেশি করে পানি খেতে হবে।
দিনে অন্ততপক্ষে চারবার করে প্রতিবার হাফলিটার পানি খাবে। এতে শরীর থেকে পানি রিলিজ হওয়ার পর ক্ষুধা বাড়বে। পেশি ওয়াইড হবে। তিনবেলা আগে যে পরিমান খাবার খেতে সেটি দ্বিগুন করতে হবে। আমিষ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
সপ্তাহে অন্ততপক্ষে তিন দিন গরুর মাংস খাবে। এই তিনবেলা ছাড়াও বাড়তি আরও দুই বেলা খেতে হবে। সকাল এগারটার দিকে একবার। আরেকবার সন্ধ্যায়, যেটাকে বলে সাপার। এই সময়গুলো খাবে নুডলস, স্যুপ জাতীয় খাবার।
ঠিক আছে? আর মাস্টাবেটের অভ্যাস আছে?
- না।
- গুড। থাকলে সেটাও বাদ দিতে হবে। ঠিক আছে? আগে একমাস এই রুটিন মেইনটেইন কর তারপর কথা হবে।
- ওকে।
কারও ক্যান্সার হয়েছে, তখন কেমোথেরাপি ছাড়া উপায় নেই। আমিও কেমো নেয়ার মত রুটিনওয়াইজ খাওয়া দাওয়া শুরু করলাম। মূল তিন বেলায় খাবার খেতে হবে দ্বিগুণ। দুপুরে খাওয়ার পর ব্যাঙের মত বিছানায় পড়ে থাকি। রা¯তা দিয়ে চলার সময় মুল কাজ হয়ে দাঁড়াল ওজন মাপা।
প্রতিদিনই ওজন মাপি, আশা যে ওজন বাড়বে। ছয়-সাত মাস পর ম্যাজিকের মত ব্যপার ঘটল। ৬০ কেজি থেকে ওজন হল সাড়ে ৬৭ কেজি। আয়নায় নিজেকেই নিজে চিনতে পারি না। যারা চিকন-চিকন করে মাথা খারাপ করে দিয়েছিল তারাই বলা শুরু করল - ‘ কী ব্যপার তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না।
কেমন হ্রষ্টপুষ্ট হয়ে গেছ। ’ শকুনদের মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনে বড় ভাল লাগছিল। নতুন করে জামা-কাপড় কিনতে হল। পুরনো জামা কাপড় কিছুই গায়ে লাগে না।
যারা শুকনো তারাই ভাল জানে যে ওজন বাড়ানো কত অসম্ভব একটা কাজ।
সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার পর আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। মনে হল যে কঠিন ভাবে চেষ্টা করলে আমার পক্ষেও যে কোন কিছু করা সম্ভব।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ওজন বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি করা হয়েছিল বিশেষজ্ঞ এবং আমার ডাক্তার বন্ধুদের পরামর্শে। অনেকের ডাইজেস্টিভ সমস্যা থাকতে পারে। শরীরের সহনশীলতা না বুঝে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ ছাড়া এই প্রক্রিয়া গ্রহন করতে গেলে যে কোন রকম ভয়ংকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
অতএব, সাবধান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।