মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর কুড়িল, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় তারা। এ সময় বেশ কিছু যানবাহনও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
একই দাবিতে আগের তিনদিন ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
এ অবস্থায় সোমবার মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে সচিবালয়ে দুই দফা বৈঠকের পর শ্রমিকদের মঙ্গলবার থেকে কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক নৌমন্ত্রী শাজহান খান।
আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনস এবং সাভারে রানা প্লাজায় ধসে বিপুল প্রাণহানির পর শ্রমিকের নিরাপত্তা, বেতন, জীবনমান বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে।
তখন থেকেই শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সোচ্চার হয়। গত মে মাসে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হলেও শ্রমিকনেতারা সর্বনিম্ন আট হাজার ১১৪ টাকা মজুরি দাবি করে আসছেন। অন্যদিকে মালিকপক্ষ ৬০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
শ্রমিকেরা বর্তমানে ন্যূনতম মজুরি পান তিন হাজার টাকা।
সভায় নির্ধারিত সময়ের আগে মজুরি বোর্ড বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিস্তারিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কুড়িলে অবরোধ
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ক্ষিলক্ষেত-কুড়িল এলাকার ইউরো জোন, মোহাম্মদীয়া, ক্লাসিক, ইউরো জোন, জেমস ফ্যাশন, সিনহা ফেব্রিকসসহ বিভিন্ন কারখানার কয়েক হাজার গার্মেন্ট কর্মী সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে।
তারা কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচে একটি অংশে অবস্থান নিলে এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা প্রগতি সরণির অন্য অংশে সরে যায়।
এর ফলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয় বলে জানিয়েছেন ভাটাড়া থানার এস আই মতিয়ার রহমান শরিফ।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে কিছু শ্রমিক একটি কারখানার দিকে ঢিল ছুড়ে কাচ ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।
পরে ইউরো ফ্যাশন নামের একটি কারখানার কর্মকর্তারা নভেম্বর থেকে বর্ধিত বেতন ভাতা কার্যকর করার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সাড়ে ১০টার দিকে রাস্তা থেকে সরে যায়।
মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার লুত্ফুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শ্রমিকদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ”
নারায়ণগঞ্জে অবরোধ, ভাংচুর
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করে পোশাক শ্রমিকরা।
সকাল ১০টার দিকে ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের লিবার্টি, মাইক্রো ফাইবার, পলমল গ্রুপ ও ওসমান নিটের শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কারখানা ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা কারখানা থেকে রাস্তায় নেমে আসে।
এ সময় তারা আশপাশের অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদেরও বের করে আনার চেষ্টা করে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আকতার হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বের হতে না দিলে বিক্ষোভকারীরা বাইরে থেকে ঢিল ছুড়ে কারখানার কাচ ভঙচুর করে।
পরে শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এবং ১০/১২টি যানবাহন ভাংচুর করেন। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে, সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দিলে সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
গাজীপুরে বিক্ষোভ, ছুটি
কালিয়াকৈর এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় এক ঘণ্টার জন্য অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন জানান, আগের দিনের রেশ ধরেই কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় সকাল ৯টার দিকে এটিএস, সেজাপ সুয়েটার, ইন্টার স্টপসহ কয়েকটি কারখানায় পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এসব কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানায় এসে কর্মবিরতি শুরু করে। এরপর বিক্ষোভ করতে পাশের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেয়।
এ সময় তারা গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে সকাল ১০টার দিকে ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগেই পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে কারখানাগুলোতে মঙ্গলবার ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ।
এদিকে আশুলিয়ায়ও শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। সকালে পুকুরপাড় এলাকার মাসকট গ্রুপের শ্রমিকরা কাজ শুরু না করে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পাশের রেডিয়েন্স গ্রুপের শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে তারা আশপাশের সাউদার্ন ফ্যাশন, টি-ডিজাইন লিমিটেড ও সিলভার টেক্সসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে মঙ্গলবারের জন্য এসব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ।
শিল্প পুলিশের আশুলিয়া জোনের পরিদর্শক আব্দুস সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকালে আশুলিয়ার জিরাবো থেকে বিশমাইল এলাকার দুই পাশে অবস্থিত প্রায় ১০টি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। সড়কে অবস্থান নিলে তাদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়।
মির্জাপুরে সংঘর্ষ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে সাংবাদিক ও পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
মির্জাপুর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, সকাল ৯টার দিকে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে প্রথমে খান টেক্সটাইলের শ্রমিকরা রাস্তায় এসে অবরোধ করে।
পরে অন্যান্য গার্মেন্টস থেকেও শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে লাঠিপেটা ও পরে টিয়ারসেল-রবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে দৈনিক ইত্তেফাকের মির্জাপুর সংবাদদাতা আনোয়ার হোসেন টুটুল, দুই পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
তাদের বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।