ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ৮২ কোটি টাকার সম্পদের সিংহভাগ সুবিধা নিচ্ছেন মাত্র ৭৫ জন সদস্য। এই সম্পদের ওপর ২৫০ জন সদস্যের সমান অধিকার থাকলেও মাত্র চার টাকা (প্রতি বর্গফুটের জন্য) মাসিক সেবা-মাশুলের বিনিময়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত এই ভবনটির প্রতি বর্গফুটের পেছনে শুধু পানি ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতি মাসে ডিএসইকে শোধ করতে হয় ১২ টাকার বেশি। ফলে আয় তো দূরে থাক, উল্টো ভবনের দখলে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পেছনে ডিএসইর বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। আর এতে বঞ্চিত হচ্ছেন স্টক এক্সচেঞ্জের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য।
স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) কর্মসূচির দলিল অনুযায়ী, পৌনে নয় কাঠা জমির ওপর ডিএসইর সাততলা ভবনটির কাঠাপ্রতি নয় কোটি টাকা দাম ধরে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৭৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে সাত হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গা, যা বর্তমানে বিভিন্ন আকারের কক্ষে বিভক্ত।
বর্তমান বাজারমূল্যে ভবনটির প্রতি বর্গফুটের জন্য দাম ধরা হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। সেই হিসাবে জমি বাদে ভবনটির দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। অবশ্য ভবনটি অনেক দিনের পুরোনো হওয়ায় এর ৬৬ শতাংশ অবচয় দেখিয়ে প্রকৃত মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
আর জমিসহ ভবনের মোট মূল্য ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ভবনটির ভোগদখলে থাকা ৭৫ জন সদস্যের মধ্যে কারও ভোগদখলে রয়েছে মাত্র ৯৭ বর্গফুটের কক্ষ, কারও বা রয়েছে এক হাজার ২৯৫ বর্গফুটের একাধিক কক্ষ বা জায়গা। বাকি ১৭৫ জন এই ভবনে জায়গা না পেয়ে অন্যত্র বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া নিয়ে কার্যালয় চালাচ্ছেন।
ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রস্তাব অনুযায়ী, পৃথক্করণের কর্মসূচি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ডিএসই ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ শেয়ার ইস্যু করবে। প্রাথমিক শেয়ারধারী হিসেবে ২৫০ সদস্যের প্রত্যেকে ৭২ লাখ ১৫ হাজার ১০৬টি করে শেয়ার পাবেন।
ডিএসইর মতিঝিল ও নিকুঞ্জ ভবন (জায়গাসহ), গাজীপুরের কাপাসিয়ার জমিসহ স্থায়ী ও অস্থায়ী সব ধরনের সম্পদের মূল্যমান হিসাবে ধরে এসব শেয়ার বণ্টন করা হবে। অথচ বিদ্যমান অসমতা নিরসনে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ডিএসইর পর্ষদ।
সম্প্রতি বিএসইসি স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়ে দেয়, ডিএসইর কোনো সম্পদই কারও কাছে ইজারা (লিজ) বা স্থায়ী বরাদ্দ রাখা যাবে না। শুধু ভাড়ার বিনিময়ে সদস্যরা ডিএসইর সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এ কারণে মতিঝিল ভবনে ভোগদখলে থাকা সদস্যদের সঙ্গে নতুন করে ভাড়া চুক্তির প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়।
কিন্তু সেটিতে রাজি নয় পর্ষদ। আজ বুধবার ডিমিউচুয়ালাইজেশন বিষয়ে বিএসইসির সঙ্গে চূড়ান্ত শুনানিতে অংশ নিতে যাচ্ছে ডিএসই।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজনেস বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মূসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর ডিএসইর সম্পদের ওপর অসমতা বজায় রাখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এটির সব ধরনের সম্পদের ওপর সব সদস্যের সমান অধিকার রয়েছে। ’
মতিঝিল ভবনের ভোগদখলের বিষয়টি তুলে ধরে জানতে চাইলে মোহাম্মদ মূসা বলেন, ‘মাত্র চার টাকা সেবা-মাশুলের বিনিময়ে কিছুসংখ্যক সদস্যের এই ভবন ভোগদখলের কোনো সুযোগ নেই।
ভোগদখলকারীদের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে ভাড়ার আওতায় আনতে হবে। ’
দখলে যাঁদের প্রাধান্য: ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, মতিঝিল ভবনটিতে বিভিন্ন আয়তনের মোট ১০৮টি কক্ষ রয়েছে। নিচতলায় রয়েছে ডিএসইর নিজস্ব কার্যালয়। আর দ্বিতীয় তলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত কক্ষগুলো ৭৫ জন প্রভাবশালী সদস্যের দখলে। তাঁদের মধ্যে গুটি কয়েক সদস্যের ৫০০ বর্গফুটের বেশি জায়গা রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এক হাজার ২৯৫ বর্গফুটের কক্ষ ডিএসইর বর্তমান সভাপতি আহসানুল ইসলাম, এক হাজার ২৯০ বর্গফুটের কক্ষ ডিএসইর সাবেক সভাপতি আবদুল হক, এক হাজার ১৩৫ বর্গফুটের কক্ষ নূর ই আলম সিদ্দিকী, এক হাজার ৪৮ বর্গফুটের কক্ষ আবদুস সালাম, ৯৪২ বর্গফুটের কক্ষ ডিএসইর সাবেক সভাপতি কাজী ফিরোজ রশীদ, ৭৮৬ বর্গফুটের কক্ষ ডিএসইর সাবেক সভাপতি খুরশীদ আলম, ৭৪৫ বর্গফুটের কক্ষ ডিএসইর বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, ৭১৩ বর্গফুট ডিএসইর সাবেক সভাপতি খাজা গোলাম রসুলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে এবং ৫০০ বর্গফুটের বেশি জায়গা রয়েছে মিয়া আবদুর রশীদ সিকিউরিটিজ, তালহা অ্যান্ড কোং ও গ্লোব সিকিউরিটিজের ভোগদখলে।
যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর সভাপতি আহসানুল ইসলাম এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।