আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিখ্যাত মার্কিন ঔপন্যাসিক উইলিয়াম ফকনারের ১১৬তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা

আমি সত্য জানতে চাই
জনপ্রিয় মার্কিন কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ফকনার। বেড়ে ওঠেন মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের অক্সফোর্ডে। লিখতেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও চিত্রনাট্য। তবে ঔপন্যাসিক হিসেবেই মূলত তাঁর বিশ্বখ্যাতি রয়েছে। সাহিত্যে নোবেল ও পুলিৎজার পুরস্কারসহ পেয়েছেন বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

ফকনারের সাহিত্যের জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে তাঁর গভীর মানবিকতাবোধ। তিনি প্রায়ই বলতেন ‘একজন সাহিত্যিকের মধ্যে অবশ্যই মানবতাবোধ থাকতে হবে। ’ তাই তার লেখায় ঘুরে ফিরে মানবতার কথাই উঠে এসছে । ফকনারের সাহিত্যিক জীবন শুরু হয় কবিতা লিখে। কবিতা ও গল্পের দুই মাধ্যমেই তিনি সমান দক্ষতার সাথে লিখেছেন।

তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘দি মার্বেল ফন’ এবং প্রথম উপন্যাস ‘সোলজার্সপে’। তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হচ্ছে ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’। ১৮৯৭ সালের আজকের দিনে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলবেনিতে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ১১৬তম জন্মদিন। জন্মদিনে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ফকনারের প্রতি আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা ১৮৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের নিউ আলবেনিতে ফকনার জন্ম গ্রহন করেন।

তার পিতা মারি কাথবার্ট ফকনার এবং মাতা মড বাটলার ফকনার। ঘরেফকনার ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ফকনারের বয়স যখন পাঁচ, তখন তাঁর পরিবার মিসিসিপির অক্সফোর্ড শহরে চলে আসেন। এই শহরেই ফকনার তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কাটান। ফকনারের পূর্বপুরুষেরা ১৮শ শতকে স্কটল্যান্ড থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন।

ফকনার হাইস্কুল শেষ করতে পারেননি। যদিও তিনি একজন বিশেষ ছাত্র হিসেবে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, তিনি শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারেননি। প্রপিতামহ উইলিয়াম ক্লার্ক ফকনার ছিলেন তরুণ লেখক ফকনারের প্রেরণার উৎস। উইলিয়াম ক্লার্ক মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় একজন কর্নেল ছিলেন। তিনি রেলপথ নির্মাণ করেন এবং ১৮৮১ সালে একটি জনপ্রিয় রোমান্টিক উপন্যাস লেখেন যার নাম ছিল দ্য হোয়াইট রোজ অভ মেমফিস।

এক ব্যবসায়ী অংশীদার তাঁকে রাস্তায় হত্যা করে। এই ঘটনাটি ফকনার তাঁর সাহিত্যে বিভিন্নভাবে পুনরাবৃত্ত করেছেন। ১৯২১ সালে উইলিয়াম ফকনারের লেখা একটি নাটক মঞ্চায়িত হয়। ১৯২৪ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়। ১৯২৫ সালে তাঁর সাথে শেরউড অ্যান্ডারসনের সাক্ষাৎ হয়।

অ্যান্ডারসন তাঁকে কল্পকাহিনী লিখতে উদ্বুদ্ধ করেন। অন্যান্য মার্কিন লেখকদের অনুসরণ করে ১৯২৫ সালে ফকনার ছয় মাসের জন্য ইউরোপ সফর করে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে তিনি মনোযোগ দিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস বেরোয়, ১৯২৭ সালে বের হয় দ্বিতীয়টি। সার্টোরিস নামের তৃতীয় উপন্যাসটি ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয়।

ফকনার তাঁর ১৯২৯ সালে উপন্যাস সার্টোরিস-এর চরিত্র কর্নেল জন স্যান্টোরিসের মডেল হিসেবেও তাঁর প্রপিতামহকে ব্যবহার করেছেন। ১৯২৯ সালেই তিনি তাঁর স্কুলজীবনের বান্ধবী লিডা এস্টেল ওল্ডহ্যাম ফ্র্যাংকলিনকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে দুই মেয়ে হয়। এদের একটি শিশু অবস্থায় মারা যায়। ফকনার সৎ ছেলেমেয়েদেরও ভরণপোষণ করতেন।

ফকনার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়াল এয়ার ফোর্সের কানাডীয় শাখায় স্বল্প সময়ের জন্য যোগ দেন। এর আগে তিনি মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে ওজন ও উচ্চতার অভাবের কারণে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। তবে তিনি যুদ্ধে অংশ নেবার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। যুদ্ধের পর তিনি বিভিন্ন জায়গায় কেরানিগিরি ও বাড়ি নির্মাণের কাজে আয় উপার্জন করতেন। ফকনার মোট ১৯টি উপন্যাস ও বহু ছোট গল্প লেখেন।

তাঁর বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থও আছে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাসগুলি হলঃ ১। দ্য সাউন্ড অ্যান্ড দ্য ফিউরি(১৯২৯), ২। অ্যাজ আই লে ডাইং (১৯৩০), ৩। লাইট ইন অগাস্ট (১৯৩২), ৪।

আবসালোম, আবসালোম! (১৯৩৬), এবং ৫। দি আনভ্যাংকুইশ্‌ড (১৯৩৮)। ১৯৩০ ও ১৯৪০--এর দশকের শুরুর দিকে ফকনার চিত্রনাট্যলেখক হিসেবে হলিউড গিয়েছিলেন। জীবনের বাকী সময় তিনি অক্সফোর্ডেই গল্প ও উপন্যাস লিখে কাটিয়ে দেন। ১৯৪৯ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৫৫ সালে 'আ ফেবল' নামে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন ফ্রান্সের উপর লেখা উপন্যাসটির জন্য জাতীয় বই পুরস্কার এবং পুলিতজার পুরস্কার লাভ করেন। ফকনারের দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে বেশ কয়েকবার ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে অনেকগুলি আঘাত পান। ৬৪ বছর বয়সে এমনই এক আঘাতের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হবার পর হার্ট অ্যাটাকে ১৯৬২ সালের ৬ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপের বাইহেলিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আজ জনপ্রিয় এই ঔপন্যাসিকের ১১৬তম জন্মদিন। কাথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ফকনারের জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.