আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রমিক বিক্ষোভ চলছেই

নূ্যনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো গতকালও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও আশুলিয়ায় কয়েকটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শ্রমিক-পুলিশ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক আহত হয়েছে। কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সহিংসপূর্ণ গার্মেন্টে গতকালও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং মহাসড়কে র্যাব ও পুলিশের প্রহরা অব্যাহত ছিল। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর_

গাজীপুর : নূ্যনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো গতকালও কয়েকটি গার্মেন্টে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে।

শ্রমিক বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সহিংসতাও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গতকাল কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, সফিপুর ও চন্দ্রা এলাকার কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে গাজীপুর মহানগরীর নাওজোর, ভোগড়া, বোর্ডবাজার, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার কয়েকটি গার্মেন্টে কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভের আশঙ্কায় গতকাল বন্ধ রাখে বলে পুলিশ জানায়। সহিংসপূর্ণ কারখানাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং মহাসড়কে র্যাব ও পুলিশের প্রহরা অব্যাহত ছিল।

পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, সকাল পৌনে নয়টার দিকে কোনাবাড়ি এলাকার কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে কাজে যোগ না দিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নেমে আসে।

এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রায় আধাঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। কোনাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. রবিউল ইসলাম জানান, বিসিক শিল্প নগরীর স্ট্যান্ডার্ড, ইসলাম স্যুয়েটার্সসহ বিভিন্ন গার্মেন্টে শ্রমিকরা সকালে বিক্ষোভ করে। পরে তারা অন্য কারখানার শ্রমিকদেরও যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। চন্দ্রা এলাকায় নায়েগ্রা টেঙ্টাইল কারখানায় শ্রমিকরা কারখানা ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে সরিয়ে দেয়।

ড্রেসম্যান, মাহমুদ ডেনিমস ও নুরুরওয়্যার গার্মেন্টের শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হলে শ্রমিকরা চলে যায়। কালিয়াকৈরের সিনাবাহ এলাকায় মাকস স্যুয়েটার্স কারখানা ও মিম নুন নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা সফিপুর বাজারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিলে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। কালিয়াকৈর থানার ওসি মো. ওমর ফারুক বলেন, সকালে চন্দ্রা এলাকার কয়েকটি কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে।

এদিকে মহানগরীর জিরানী বাজার এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন ছিল। জিরানী বাজার এলাকায় বিক্ষোভ করার সময় পুলিশ ধাওয়া করলে কনস্টেবল মো. ফিরোজের কাছ থেকে একটি গ্যাসগান ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় শ্রমিকরা। পুলিশ এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। শ্রীপুর (গাজীপুর) : নূ্যনতম মজুরির দাবি, এস এম গ্রুপের নিখোঁজ তিন শ্রমিকের সন্ধান ও বহিরাগত ভাড়াটিয়া লোকদের দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শ্রীপুরের বেতজুড়ি এলাকার এসরোটেঙ্ লিমিটেড, গোল্ডেন রিফিট লিমিটেড, মণ্ডল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও চৌধুরী অ্যাপারেলস্ লিমিটেডের ভেতর ও আশপাশে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা।

সকাল ৯টা থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বাঘের বাজার এলাকায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সাভার : আশুলিয়া ও জিরানীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। সকালে পানিশাইল এলাকার মাছিহাতা সোয়েটার ও তুরাগ গার্মেন্ট এবং র্যাডিয়াল গার্মেন্টের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে।

পরে তারা নর্দার্ন ফ্যাশন, সাথী ফ্যাশন অ্যাপারেলস, ডরিন গার্মেন্টসসহ বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। উত্তেজিত শ্রমিকরা আশুলিয়া থানার একটি টহল গাড়ি ভাঙচুরসহ মহাসড়কে কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে এক পুলিশসহ কমপক্ষে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কমপক্ষে ৩৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২০০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা এসে মহাসড়কে অবস্থান নেয়, তারা টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক বন্ধ ও ৩০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। নরসিংহপুর এলাকার বাংলাবাজারে অন্বেষা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও এ বিক্ষোভে যোগ দেয়। শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশের লাঠিচার্জে ২০ জন আহত হয়।

নারায়ণগঞ্জ : ফতুল্লার শিবু মার্কেটে শ্রমিকদের মারধরের গুজবকে কেন্দ্র সকালে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছে। এ সময় অন্তত ৭টি যানবাহন ও ৬টি গার্মেন্টে ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৯টায় ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের কাঠেরপুল, পিটালীপুল, রামারবাগ, কুতুবআইলে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা শিবু মার্কেটে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শ্রমিকদের শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সকাল ১০টায় শ্রমিকরা আবারও বিক্ষোভ করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিল্পপুলিশ ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

এসময় ২০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়। সংঘর্ষে শ্রীদাম, শাহাদাৎ হোসেন, রহিমসহ শিল্পপুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়েছেন। শ্রমিকরা ৭টি যানবাহন ভাঙচুর করে। এসময় টাইম সোয়েটার, কাসপিয়ান, ইউরোটেঙ্, মেরিনাসহ বেশ কিছু গার্মেন্ট ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। তারা টাইম সোয়েটারে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আকতার হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা সভাপতি এম এ শাহীন জানান, সকালে শ্রমিকরা জানতে পারে শাকুরা ও ওসমান গার্মেন্টে মালিকপক্ষের সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের মারধর করছে। এতে উত্তেজিত হয়ে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

বিকেএমইএ'র পরিচালক ও লেবার অ্যাফেয়ার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জিএম ফারুক জানান, মারধরের অভিযোগ সঠিক নয়। কিছু শ্রমিকনেতা শিল্পাঞ্চলকে উসকে দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। নারায়ণগঞ্জ শিল্পপুলিশ-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আহমেদ বলেন, শ্রমিকরা টাইম সোয়েটারে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।

 

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.