যেমন-খুশি-তেমন করো এর একটা সীমা থাকা চাই। দিবসের নাম রেখেছে ফ্লাগট্যাগ (Flugtag)। জার্মান এই শব্দটার অর্থ উড্ডয়ণ দিবস (Flight Day)। মানুষজন ঘরে বানানো কাঠ-কাগজের উড়োজাহাজ নিয়ে কমপক্ষে ত্রিশ ফুট উঁচু জায়গা থেকে লেক কিংবা সমুদ্র-নদীতে ঝাঁপ দিবে। যার যার ইচ্ছা মত লম্ফ-ঝম্প করে ঘরের ছেলেটি ঘরে ফিরে গেলেই হতো।
কিন্তু, সেটা হবে না। কারণ ব্যাপারটা না-কি আবার একটা প্রতিযোগিতা।
উদ্ভট সব আইড়িয়ার উদ্ভবকেন্দ্র ইংল্যান্ড থেকে শুরু হলেও, সর্বপ্রথম প্রতিযোগিতা হয় অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়, ১৯৯২ সালে। আর আমেরিকার কাজতো হলো, কোথাও কিছু একটা দেখলেই কপি-পেস্ট করে ফেলা। যেমন-খুশি-তেমন করবে, কিন্তু, কিভাবে করবে সেটাও আরেক দেশ থেকে কপি করে আনতে হবে তাদের।
শুধু আমেরিকার কথাই-বা বলি কেন, প্রতিবছর বিশ্বের পঁয়ত্রিশটি দেশে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতা।
যে-কেউ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। দরকার শুধু সর্বোচ্চ দুইশ কেজি ওজনের একটি উড়োজাহাজ আকৃতির মানবযান, যারা পাখার দৈর্ঘ্য ত্রিশ ফুটের বেশি হতে পারবে না। মানবযান বলার কারণ, কোনো ধরণের ইঞ্জিন চালনার ব্যাপার-স্যাপার নেই। দলনায়ক পাইলটের সিটে বসবে, আর দলের বাকী লোকজন পাইলট-সমেত প্লেনটাকে সমুদ্রে কিংবা নদীতে ফেলে দেবে।
তার আগে পুরো দলকে অবশ্য স্টেইজে নেচে গেয়ে দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। সবগুলো দল থেকে ফাইনালে অংশগ্রহণ করার জন্য উপরের দিকের বিশ থেকে ত্রিশটি দল নির্বাচন করা হয়।
যেমন-খুশি-তেমন হবে, আর সেখানে আমি থাকবো না, সেটা কেমন করে হয়! অতএব, শুরু করলাম যাত্রা, সঙ্গী আমার লাল-ক্যামেরা। ভাবলাম, আমার মতই গুটিকয়েক আজাইরা মানুষ আর প্রতিযোগিরাই শুধু থাকবে। শস্যের চেয়ে প্রতিযোগী বেশি, দর্শকের চেয়ে আগাছা বেশি।
প্রতিযোগিতাস্থলে গিয়ে নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো "কস্কি মমিন"। শস্য, আগাছা দেখাতো দূরের কথা, দর্শকের জন্য মাটিই-তো দেখা যাচ্ছে না। মানুষ না-কি মদের দোকানে গিয়ে লাইন ধরে মদ খায়, আর দুধওয়ালা বাড়ী-বাড়ী গিয়ে দুধ দিয়ে আসে। আজ নিজ চোখে দেখলাম, অকাজের চেয়ে বড় আর কোনো কাজই নেই, তা না হলে এত মানুষ এখানে কি করতে আসবে!
যত মানুষ কাঠ কাগজের প্লেন নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়া দেখতে এসেছে, রাইট ভ্রাতৃদ্বয় তাদের মূল বিমান নিয়ে এসে উপস্থিত হলেও এত মানুষ হতো কি-না সন্দেহ আছে। পুরো প্রতিযোগিতার স্পন্সর "রেড বুল" এনার্জি ড্রিংক।
প্রতিযোগিরা এসেছে বিভিন্ন সাজে। জনপ্রিয় টিভি সিরিজের চরিত্রগুলোর অনুকরণে বানিয়েছে নিজেদের পোশাক।
ছেলেরা সেজেছে মেয়েদের সাজে, মেয়েরা ছেলেদের।
ওদিকে বন্দুকের দিয়ে ফায়ার করা হচ্ছে টি-শার্ট। কিছুক্ষণ পরপর দর্শনার্থীরা হুড়োহুড়ি করে কুড়িয়ে নিচ্ছে সেই টি-শার্ট।
সুবিশাল লেইক মিশিগানের তীরে, যেখানে লাফ দেয়ার জন্য উঁচু করে সাজানো হয়েছে মঞ্চ, তার আসপাশে এসে প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস। মুরগীর খামারে শিয়াল ছেড়ে দিয়ে, তারপর সেই শিয়ালের হাত থেকে মুরগী বাঁচানোর সব আয়োজন সম্পন্ন!
মাথার উপর উড়ছে হেলিকপ্টার। শিকাগো পুলিশ। ইন্সুরেন্স কোম্পানির ছোট্ট প্লেনটাও তাদের ব্যানার নিয়ে বারবার মাথার উপর চক্কর দিচ্ছে। এত মানুষকে, একসাথে ব্যানার দেখানোর সুযোহ সহজে তারা হাতছাড়া করবে না।
ওদিকে, হাই ভলিউমে চলছে গান, হিজিবিজি বহু গানের মধ্যে আছে গ্যাংনাম স্টাইলও। ক্ষণে ক্ষণে, এখানে ওখানে গানের সাথে নেচে বেড়াচ্ছে তরুণ-তরুণীর দল, ধরা পড়ছে ক্যামেরায়। লেকের পানির উপর টং বানিয়ে সেখানেও প্রস্তুত আছে ক্যামেরাম্যান।
একসময় শুরু হয় প্রতিযোগিতা। আমি যেখান থেকে দেখছি, অর্থাৎ শিকাগো ছাড়াও অন্য বেশ কিছু শহরে একই দিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো একই ধরণের প্রতিযোগিতা।
এই ছবিটি রেড বুল এর ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া
উপস্থাপক ক্ষণে ক্ষণে ঘোষণা দিচ্ছে, অন্য কোনো শহরে কোন দল আগের বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে তুলেছে। রেড বুলের ইউটিউব সাইটে দেয়া নীচের ভিডিও থেকে ধারণা পাওয়া যাবে, আসলেই কি জিনিস এই প্রতিযোগিতা।
এই হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ যে এলো এখন তারা বাসায় ফিরবে কি করে! নাহ, যত উদ্ভট কর্মকাণ্ডই এরা করুক না কেন, সেটা প্ল্যান করে করে। এ-ধরণের উৎসবের শেষে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য শহর কর্তৃপক্ষ ফ্রি সার্ভিস হিসেবে প্রস্তুত রাখে শত শত যানবাহন। একটার পর একটা খালি গাড়ী আসে, আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে মানুষ ভর্তি করে নিয়ে এগিয়ে যায় গন্তব্যে।
শেষ হয়ে যায় মেলা।
ভিনদেশি এক রঙের মেলায় (পর্ব ১)
ভিনদেশি এক রঙের মেলায় (পর্ব ২)
অন্যান্য লেখা
মইনুল রাজু
ফেইসবুক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।