থাকতে আসি নাই,চলে যাবো
বুয়েটে চলছে বিয়া। খেতে চাইলে চলে আসেন।
এই পোষ্ট পড়ার আগে উপরের লিংকে একটা গুতা দেন। পটভুমি জানলে কাহিনী ভাল বুঝবেন। আজে বাজে প্রশ্নও করবেন না।
অনেক দিন ধরে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। বড় ভাইরা আসবেন। সাথে থাকবে ভাবিরা। তাদের উচ্ছল-চঞ্চল পদচারনায় আমাদের এই নিষ্প্রান বুয়েট প্রান পাবে। আমরাও ভাবিদের সান্যিধ্যে মজার সময় কাটাবো।
যারা যে সব ভাই নতুন বিয়ে করেছেন তাদের সাথে যদি শালিরা থাকেন তবে তো কথাই নেই। আমার মনে অবশ্য আরো জিনিস ছিল। ভবিষ্যতে আমার বৌ কেমন হবে ভাইয়াদের বৌদের রুপ দেখে আমি তা যাচাই করার তালে ছিলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্যাম্পাসে গেলাম। বন্ধুরা মিলে ঘুরলাম।
বিভিন্ন কোম্পানির ষ্টলে গিয়ে ব্যাপক জ্ঞানি ভাব নিয়ে উলটা পালটা প্রশ্ন করে ভড়কে দিতে কি যে মজা তা না জানলে নয়। এ ক্ষেত্রে যে সব ষ্টলে সুন্দরি মেয়ে ছিল তারাই ছিল আমাদের প্রথম টার্গেট।
কুপন জমা দিয়ে দুপুরের খাবার নিলাম। খুলে খাবারের পরিমান দেখে তো অবাক এত খাবার খাবে কে?বিশাল এক প্যাকেট কাচ্চি,ডাবল খাসির মাংস। সাথে কোয়ার্টার মুর্গী।
এক বোতল বোরহানি। রুমে নিয়ে বন্ধুদের সাথে ভাগ করে খেলাম। তারপর ঘুম।
ঘুম থেকে উঠলাম চারটার দিকে। রেডি হয়ে গেলাম ডাইনিং এ।
সেখানে ফ্রি চা নাস্তার ব্যবস্থা আছে। গিয়ে দেখি অনেক ভাইয়া আসছে। ভাবিরাতো আছেই। চা খেতে খেতে তাদের সাথে গল্প করলাম। তারপর তাদের নিয়ে হলে ঘুরলাম।
হলে মেয়েদের ঢুকা নিষেধ। কিন্তু আজকে পারমিশন ছিল। তাই ভাইয়ারা ভাবিদের নিজেদের ছাত্র জীবনের রুম গুলোতে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
মোট ১৫ জনের মত ভাইয়াদের সাথে কথা হল। তাদের মধ্যে ৫ জন ভাবী পেলাম খুবই কিঊট,৭ জন কিঊট আর বাকিদের চলনমতন রুপ।
যেহেতু বেশিরভাগ ভাবিই সুন্দর তাই আমার বৌ সুন্দর হবে এই ধারনা নিয়ে রুমে চলে আসলাম।
কিছুক্ষন পরে দরজায় ঠকঠক। খুলে দেখি এক আংকেল দাঁড়িয়ে আছেন(উনিও ভাইয়া কিন্তু আংকেল বলার কারন আছে)। সাথে তার ওয়াইফ। একটা বাচ্চা ছেলে আর একজন।
এই একজন দাড়িয়ে ছিল সবার পেছনে। তার ওপর দৃষ্টি পড়ল সবার পরে। আমি ছোটখাট একটা টাসকি খেলাম। এত সুন্দর মানুষ কিভাবে হয়।
উনি পরিচয় দিলেন।
নাম বললেন। ইলেক্ট্রিকাল ৮৫ ব্যাচ(আমার চেয়ে ২৫ বছরের সিনিয়র)। আমার বেডটা দেখিয়ে বললেন এইবেডে আমি থাকতাম। অনেক দিন ধরে ছেলেমেয়েরা আসতে চাইছিল। তাই আজকে নিয়ে আসলাম।
তারপরে খুবই বিনয়ের সাথে বললেন আমার কোন ডিষ্টার্ব হয়েছে কিনা। আমি তার ভদ্রতায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বিরক্ত হবার প্রশ্নই আসেনা।
রুমের অগোছালো অবস্থা,মশারি মাস খানিক আগে টানিয়ে ছিলাম আর নামানো হয়নি। এইখানে আর যত দিন আছি নামানো হবার কোন সম্ভাবনা নাই।
টেবিলের ওপর বইখাতার স্তুপ। মশারি ষ্টান্ড ভরা জামাকাপড়। আন্টি এদিক সেদিক দেখলো। আমি তো লজ্জায় একশেষ। ভাইয়া বোধহয় বুঝতে পারলেন।
তিনি মুচকি হাসলেন।
ছোট্ট পিচ্চির সাথে পরিচিত হলাম। তার নাম রাফি। আর সুন্দরিতমার নাম। ইরা।
ইরাবতী নদী। দুই ভাই বোন অনেক অবাক। তাদের আব্বু এই নোংরা রুমে থাকতো!লোহার বিছানায় ঘুমাতো!তাদের যেন বিশ্বাসই হয়না।
আংকেল ইউ এস এ তে থাকেন। পি এইচ ডি করেছেন ওয়্যারলেস কমুনিকেশনে।
এখন কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আছেন প্রফেসর হিসেবে। গবেষনা করছেন cognitive radio network and spectrum sharing নিয়ে। আমিও একি বিষয়ে থিসিস করছি। শুনে তিনি খুব খুসি হলেন। উতসাহ দিলেন।
যে কোন ধরনের সাহায্যের প্রতিশ্রতি দিলেন।
এর ফাকে আমি লোক পাঠিয়ে নাস্তা আনলাম। নাস্তা খেতে খেতে তার সাথে কথা হল। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা বললেন। ইরা এই বার আন্ডারগ্রাডে চান্স পেয়েছে পারদু ইউনিভার্সিটিতে।
তার সাথে কথা হল। এত সুন্দর একটা মেয়ে। কিন্তু অন্যরকম। খুবই অন্যরকম। শান্ত আর লক্ষী।
ইউ এস এ এর একটা মেয়ে যে রকম হট এন্ড ক্রিস্পি হবার কথা মোটেও তা নয়। তার বড় বড় চোখের দৃষ্টি আর আচার ব্যাবহারে তাকে বাংলাদেশিই মনে হয়। শুধু বাংলা ঠিকমত বলতে পারেনা। তাকে মনে হল বেহালা,হাতের স্পর্শ পেলেই করুন সুরে বেজে উঠবে।
আন্টি আমার সমন্দ্বে জিজ্ঞেস করলেন।
বাবা-মা,দেশের বাড়ি ইত্যাদি প্রশ্ন করলেন।
একসময় সন্ধ্ব হল। তারা যাবার জন্যে প্রস্তুত হলেন। তাদের সাথে নিচে নামলাম। গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম।
যাওয়ার সময় তিনি আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে গেলেন। তার ভিজিটীং কার্ড দিলেন,বাসার ঠিকানা দিলেন। আন্টি বার বার বললেন ইউ এস এ তে গেলে তার বাসায় যাবার কথা বললেন। আংকেল বললেন তার ইউনিভার্সিটিতে আমাকে নেবার জন্যে চেষ্টা করবেন।
যাওয়ার সময় বাগান থেকে কিছু ফুল তুলে তাদের দিলাম।
ভাইয়া আমাকে একপাশে নিয়ে হাতে গুজে দিলেন। খুলে দেখি ২০০০ টাকা। এটা খুবই সাধারন ঘটনা। অহরহ ঘটে।
তারা চলে গেল।
যাওয়ার আগে এক ফাকে ইরার মোবাইল নাম্বার আর ফেসবুক আইডি রেখে দিলাম।
পাস করার পরে বাইরে যাব কিনা দোটানায় ছিলাম। আজ এক নিমিষেই কেটে গেল। আমাকে বাইরে যেতেই হবে। এবং ইউএস এতেই।
ইরা তুমি থাক। আমি আসছি।
এতোদিন গল্প পড়তে পড়তে,ক্লীওপেট্রা আর হেলেনের কাহিনি জেনে তাদের দেখার শখ ছিল। সেই যুগে না জন্মানোর আক্ষেপ ছিল। এখন মনে হচ্ছে না এ জনমই ভাল।
আমি আমার ক্লিওপেট্রাকে পেয়ে গিয়েছি।
এই গানটা ইরার জন্যেঃ
আমার ভিনদেশি তারা
একা রাতেরো আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে
ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে
তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে
তোমার গল্প বল কাকে।
আমার রাতজাগা তারা
তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ি।
আমার ভয় পাওয়া চেহারা
আমি আলোতে আনাড়ি
আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি
কিছু মিথ্যে বাহাদুরি
আমার চোখ বেধে দাও আলো
দাও শান্ত শীতল পাটি
তুমি মায়ের মতই ভাল
আমি একলাটি পথ হাটি।
………………………………………
………………………………………
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।