ে
যক্ষ্মা আরো বেশি নিয়ন্ত্রণে আসছে। অথচ এক সময় যক্ষ্মাকে ‘মরণব্যাধি’ বলে মনে করা হতো। বলা হতো, ‘যার হয় যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা। ’ আর এখন নিয়মিত ওষুধ সেবনে এ রোগ ভালো হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সারাদেশে দেড় লাখেরও বেশি যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
২০১২ সালে এক লাখ ৬৯ হাজার ছয়শ ৫৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। ২০১১ সালে শনাক্ত হয়েছিলেন এক লাখ ৫৫ হাজার পাঁচশ ৬৪ জন। ডটস পদ্ধতির চিকিৎসায় (স্বাস্থ্য সেবিকার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ওষুধ সেবন) শনাক্তদের মধ্যে ৯২ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়।
এনটিপি জানাচ্ছে, শনাক্ত মোট যক্ষ্মা রোগীর প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ শিশু।
সম্প্রতি, মানিকগঞ্জে যক্ষ্মা কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসার চিত্র পাওয়া যায়।
বছরের এ সময় অর্থাৎ ০৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেখা যায়, মানিকগঞ্জে ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় যক্ষ্মার চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যা এক হাজার একশ ৫৩ জন। গত আগস্টে ওষুধ সেবন করে সুস্থ হয়েছেন এমন সংখ্যা একশ ৪৭ জন।
মানিকগঞ্জ সদরের বান্দুটিয়ার বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী আনোয়ারার যক্ষ্মা ধরা পড়ে পাঁচ মাস আগে। রোগ ধরা পড়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।
তবে স্থানীয় ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম তার জীবন বদলে দিয়েছে।
এখন তিনি নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন। ক্রমান্বয়ে ভালো হয়ে উঠছেন। নিয়ম অনুসারে, প্রতিদিন সকাল বেলা স্থানীয় ব্র্যাকের স্বাস্থ্যসেবিকা নার্গিস আক্তারের কাছ থেকে তিনি ওষুধ গ্রহণ করেন।
শুধু আনোয়ারাই নন, মানিকগঞ্জের অসংখ্য যক্ষ্মা রোগী ব্র্যাকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সেবা নিয়ে সুস্থতার দিকে।
স্বাস্থ্য সেবিকা নার্গিস আক্তার নিজেই একসময় যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছিলেন।
ডটস কর্মসূচির আওতায় সুস্থ হলে নিজেই স্বাস্থ্যসেবিকার দায়িত্ব নেন। বর্তমানে বাড়ির আশপাশের চারজন যক্ষ্মা রোগীকে ওষুধ সেবন করাচ্ছেন তিনি।
এছাড়াও কারো তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি আছে জানতে পারলে, কফ পরীক্ষার জন্য কৌটা দিয়ে আসেন এবং উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন।
কফে যক্ষ্মার জীবাণু ধরা পড়লে চিকিৎসক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। এরপর নার্গিস আক্তার ওই রোগীকে প্রতিদিন ওষুধ সেবন করান টানা ছয় বা আট মাস।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রতি লাখে চারশ ১১ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতি বছর নতুনভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিলাখে ২৫ জন। তবে এই রোগটি চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হচ্ছে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিয়ে শতকার ৯০ ভাগ রোগীই সস্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যান।
এদিকে, গত কয়েক বছর ধরে দেশের প্রায় প্রত্যেকটি উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ওষুধ সেবন (ডিওটিএস) কার্যক্রমের আওতায় সেবা দিচ্ছে ব্র্যাক।
ব্র্যাকের মানিকগঞ্জ জেলার সিনিয়র জেলা ব্যবস্থাপক (স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি) বিকাশ চন্দ্র মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগ চিহ্নিত হলে সেখানকার চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট রোগীর এলাকার ব্র্যাক কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে স্বাস্থ্যসেবিকার মাধ্যমে নিবিড় পরিচর্যায় ছয় থেকে আট মাসের টিকিৎসা দেওয়া হয়।
দেশব্যাপী ব্র্যাকের প্রায় এক লাখ স্বাস্থ্যসেবিকা কাজ করছেন। তিনশ ৯০টি মাইক্রোস্কোপ সেন্টার ছাড়াও ২০টি উন্নত ল্যাবরেটরি রয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা করে থাকি।
যক্ষ্মা বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা বদলাতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি। ’
ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, ‘শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলে সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছে ব্র্যাক। রোগ শনাক্তকরণ জোরদার করতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা হবে। ’
এতে আরো ব্যাপক জনগোষ্ঠী সুবিধা পাবেন বলে জানান তিনি।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।