বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঢাকা-রামপাল লংমার্চ চতুর্থ দিনে খুলনায় এসে পৌঁছেছে। আজ শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে যশোর থেকে লংমার্চটি খুলনার ফুলতলা উপজেলায় প্রবেশ করে। এ সময় জেলার প্রবেশপথে হাজারো নেতা-কর্মী স্লোগানে স্লোগানে লংমার্চকে স্বাগত জানান।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফুলতলা স্বাধীনতা চত্বরে প্রথম পথসভা হয়। জাতীয় কমিটির স্থানীয় আহ্বায়ক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা গাজী নওশেরের সভাপতিত্বে এখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ, বাসদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান, সিপিবির শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, ওয়ার্কার্স পার্টির হাফিজুর রহমান ভুঁইয়া, মাহমুদুল হাসান ও রাগীব আহসান, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের টিপু বিশ্বাস, বিপ্ল¬বী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জুনায়েদ সাকীসহ প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতা।
এরপর ফুলতলা থেকে লংমার্চ বেলা আড়াইটার দিকে দৌলতপুর বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমবেত হয়। এখানে দুপুরে খাবার শেষে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কমিটির স্থানীয় আহ্বায়ক সাবেক সাংসদ শেখ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে এখানে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। জনসভা শেষে লংমার্চের বহর খালিশপুরের শিল্পাঞ্চলে একটি পথসভা করে।
বিকেলে শহীদ হাদিস পার্কে জনসভা অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও প্রবল বৃষ্টির কারণে তা বাতিল করা হয়।
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির লংমার্চের নেতারা বলেছেন, ‘জীবন দিয়ে হলেও পরিবেশবিরোধী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিহত করা হবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু সুন্দরবন বা খুলনারই ক্ষতি করবে না, সারা পৃথিবীতেই এর প্রভাব পড়বে। বিশ্ব-ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বিনষ্টের পাশাপাশি মানুষের রোগবালাই ও সামাজিক জীবনযাত্রায়ও প্রভাব পড়বে। কিন্তু সরকার যেকোনো মূল্যে এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায়।
তারা আমাদের আন্দোলন নস্যাতের জন্য রামপালের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি দিচ্ছে। আমরা সংঘাত নয়, যুক্তি ও অধিকারের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে চাই। তাই এতে বাধা দেওয়া হলেও তারাই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ’ খুলনার ফুলতলা ও দৌলতপুরের সমাবেশে লংমার্চের নেতারা এ কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘সুন্দরবন প্রকৃতিসৃষ্ট বন।
এই বন আমাদের মায়ের মতো আগলে রাখে। ঝড়-ঝঞ্ঝাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই আমরা মাকে হত্যা করার এ আয়োজন সমর্থন করতে পারি না। ’
শেখ মো. শহিদুল্লাহ বলেন, যেকোনো মূল্যে সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কর্মসূচি প্রতিহত করতে হবে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার আগামী ২২ অক্টোবর রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, তৌফিক-ই-ইলাহী একা। তিনি একজন সাবেক আমলা। তাঁর সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই জনগণ তাঁদের স্বার্থবিরোধী ওই প্রকল্প মেনে নেবে না। জনগণই ওই প্রকল্প রুখে দেবে।
দৌলতপুর থেকে বিকেলে লংমার্চ নগরীর শিববাড়ি পৌঁছানোর পর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিববাড়ি ও নগরের হাদিস পার্কে সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
‘যেকোনো মূল্যে সর্বনাশা রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প রুখতে হবে’—স্লোগান সামনে রেখে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বাগেরহাটের রামপালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয় লংমার্চের।
ঢাকা-রামপাল প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ লংমার্চে আটটি সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নিচ্ছে। এগুলো হলো সমগীত, গায়েন, এই বাংলা, ঐকিক, চারণ, বিবর্তন, উদীচী ও সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন।
লংমার্চের অগ্রবর্তী দল হিসেবে এসব সংগঠনের সদস্যরা কয়েকটি খোলা ট্রাকে করে পথসভা ও জনসভাস্থলে উপস্থিত হচ্ছেন। তাঁরা সেখানে সুন্দরবন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পরিবেশন করছেন গণসংগীত, পথনাটক, আবৃত্তি। পুরো লংমার্চ তাঁরা মাতিয়ে রেখেছেন গান, স্লোগান, ঢোল-বাঁশির বাজনায়। প্রখর রোদ, ঝড়-বৃষ্টি, কোনো কিছুই দমাতে পারছে না তাঁদের। এর ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা বিলি করছেন জাতীয় কমিটির প্রচারপত্রও।
খুলনায় রাতে অবস্থান শেষে কাল শনিবার লংমার্চ পঞ্চম ও শেষ দিনে বাগেরহাটের রামপালের উদ্দেশে রওনা দেবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।